ইসলামের ৫টি স্তম্ভের মধ্যে হজ চতুর্থ, যা অবশ্যই পালনীয়। হজ করতে আগ্রহী ব্যক্তিকে সব ধরনের ঋণ থেকে মুক্ত হতে হয়। তা ছাড়া হজ করতে যত টাকা ব্যয় হবে, তা নিজে পরিশোধ করতে হবে। কোনো রকমের ধার বা ঋণ করে হজ করা যাবে না। এক কথায় ঋণমুক্ত শারীরিক ও আর্থিকভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের ওপরেই হজ ফরজ। আর এই ফরজ কাজে যাওয়ার আগে দরকার প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা।
ইসলাম ধর্মের বিধান অনুযায়ী, পরিবারের আবশ্যকীয় খরচ বাদে যে ব্যক্তির কাছে মক্কা শরীফ থেকে হজ করে ফিরে আসা পর্যন্ত যাতায়াতের মোটামুটি খরচ পরিমাণ অর্থ থাকে তার ওপর হজ ফরজ। সক্ষম প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য একবার হলেও হজ সম্পাদন করা আবশ্যিক।
মুসলিম উম্মাহর ঐক্য-ভ্রাতৃত্বের মহাসম্মেলন হজ। হজ জিলহজ মাসে অনুষ্ঠিত হলেও সামগ্রিক কার্যক্রমের বিবেচনায় রবিবার (০৫ জুন) থেকে হজের ফ্লাইট শুরু হচ্ছে। সে হিসেবে হজযাত্রীদের প্রস্তুতি আগেভাগে সেরে নেওয়া শ্রেয়। হজের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে পাঠকদের জন্য আয়োজন।
হজযাত্রীদের হজে যাওয়ার আগে ফ্লাইট কবে, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, টিকা দেয়া, স্বাস্থ্যসনদ সংগ্রহ করা জরুরি। এসব সংগ্রহের জন্য ঢাকার আশকোনা হজ কার্যালয় বা যে এজেন্সির মাধ্যমে হজে যাবেন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। সেই সঙ্গে পাসপোর্ট, বিমানের টিকিট ও বৈদেশিক মুদ্রা (সৌদি রিয়াল) সংগ্রহ করুন।
হজ-সফরের প্রয়োজনীয় সামগ্রী
হজযাত্রায় প্রয়োজনে একাধিক সামগ্রী রাখতে পারেন। যেন হারিয়ে গেলে বা নষ্ট হলে সহজে পাওয়া যায়। হজসামগ্রীর মধ্যে আছে, পুরুষের ইহরামের কাপড়; কমপক্ষে দুই সেট (গায়ের জন্য আড়াই হাত বহরের তিন গজ ও শরীরের নিচে পরার জন্য একই বহরের আড়াই গজ)। ইহরামের কাপড় সাদা ও সুতি হলে আরামদায়ক।
নারীদের ইহরামের কাপড় তাদের স্বাভাবিক পোশাক-পরিধেয়ই। ইহরাম বাঁধার টাওয়াল সেট, এহরাম বাঁধার বেল্ট, মানিব্যাগ, পাসপোর্ট ব্যাগ, জুতা রাখার ব্যাগ, পাথর রাখার ব্যাগ, প্লাস্টিক জায়নামাজ, নখকাটার কাটার বক্স, কাঁধের ব্যাগ, মহিলাদের হিজাব, মহিলাদের চুল বাঁধার টুপি, হাত মোজা ও পা মোজা, হাওয়ার বালিশ, বোডিং হোল্ডার, সানক্যাপ, চামড়ার মোজা, তায়াম্মুমের মাটি, মিসওয়াক, ছাতা, গামছা, লুঙ্গি, গেঞ্জি, পায়জামা, পাঞ্জাবি, টাওয়াল, জুতা, টুপি, তসবি, আতর, বোরকা, সাবান, ব্রাশ-টুথপেস্ট, সুঁই-সুতা, থালা, বাটি, গ্লাস, হজ গাইড ও কোরআন শরিফ।
ব্যাগ ও জিনিসপত্র গোছানো
নিজের প্রতিটি ব্যাগে ইংরেজিতে নাম, ঠিকানা, পাসপোর্ট নম্বর ও বাংলাদেশের কাছের কারও মোবাইল নম্বর লিখে রাখুন। বড় ব্যাগ তালাবদ্ধ রাখা খুই জরুরি। তবে ব্যাগ যত ছোট ও হালকা করা যায়, যাত্রা ততই আরামদায়ক হবে। যেসব জিনিসপত্র সঙ্গে নেওয়া হয়েছে, সেগুলোর একটি তালিকা করে রাখলে ভালো।
বিমানে ব্যাগপত্রের যতো নিয়ম
বিমানে হাত ব্যাগে ছুরি কাঁচি দড়ি নেওয়া যায় না। একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ ৩০ কেজির বেশি মালামাল বহন করতে পারবেন না। ব্যবস্থাপত্র ছাড়া কোনো ওষুধপত্র নেওয়া যাবে না। চাল, ডাল, শুঁটকি, গুড় ইত্যাদি ও পচনশীল খাদ্যদ্রব্য যেমন- রান্না করা খাবার তরিতরকারি, ফলমূল ও পানসুপারিও নেওয়া যাবে না।
হজের যাবতীয় বিধিবিধান জেনে নিন
হজে যাওয়ার আগে অবশ্যই হজের যাবতীয় নিয়ম-কানুন জেনে নেওয়া কর্তব্য। ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হজ ক্যাম্প বা এজেন্সিগুলোও হজের প্রশিক্ষণের আয়োজন করে। প্রশিক্ষণ নিলে হজের আমলগুলো সহজে আদায়ের নিয়ম রপ্ত থাকে। স্থানীয় মসজিদের ইমাম বা আলেমদের কাছ থেকে জেনে নেওয়া সবচেয়ে ভালো। এ ছাড়া ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হজ ব্যবস্থাপনা পোর্টালে হজের নির্দেশিকা ও অন্যান নিয়ম-কানুন পাওয়া যায়। বাজারেও হজের বিভিন্ন গাইড পাওয়া যায়; তবে যাচাই করে নেওয়া উচিত।
জরুরি কাগজপত্র ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী
দীর্ঘ হজযাত্রায় কাগজপত্র গুছিয়ে রাখা জরুরি। সে জন্য পাসপোর্ট আকারের ১০ কপি ছবি, স্ট্যাম্প আকারের ৬ কপি ছবি, পাসপোর্টের ২-৩ পাতার সত্যায়িত ফটোকপি, স্বাস্থ্য পরীক্ষার সনদপত্র, টিকাকার্ড, ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার রসিদ, নারী হজযাত্রীর ক্ষেত্রে শরিয়তসম্মত মাহরামের সঙ্গে সম্পর্কের সনদ ইত্যাদি সঙ্গে রাখা চাই।
সব হজযাত্রীর জন্য বাংলাদেশ থেকে একটি পরিচয়পত্র দেওয়া হয়। এতে পিলগ্রিম নম্বর, নাম, ট্রাভেল এজেন্সির নাম ইত্যাদির তথ্য থাকে। এটা গলায় বা হাতের কাছে রাখুন। একটি কাগজে নিজের নাম, পাসপোর্ট নম্বর, এজেন্সির নাম ও সৌদি আরবে সংশ্লিষ্ট হজ এজেন্সির প্রতিনিধির মোবাইল নম্বর ইংরেজিতে লিখে রাখুন। এ ছাড়া সৌদি আরবে থাকাকালে মোয়াল্লেমের পক্ষ থেকে হজযাত্রীকে পরিচয়পত্রের একটি কার্ড দেয়া হয়। সেই কার্ড ও যে হোটেলে থাকবেন, সেই হোটেলের কার্ড অবশ্যই সঙ্গে রাখুন।
ইহরাম বাঁধা ও মিকাত পেরোনো
ঢাকা থেকে আপনার গন্তব্য মক্কা না মদিনায় তা জেনে নিন। তবে অধিকাংশ হজযাত্রীর গন্তব্য মক্কা হয়। মক্কা হলে বিমানে ওঠার আগে ইহরাম বাঁধা ভালো। কারণ গন্তব্যে পৌঁছানোর আগেই ‘মিকাত’ বা ইহরাম বাঁধার নির্দিষ্ট স্থান। চাইলে বিমানেও বাঁধা যায়। কিন্তু বিমানে পোশাক পরিবর্তন করাটা ঝামেলার। বিনা ইহরামে মিকাত পার হলে এজন্য দম বা কাফফারা দিতে হয় এবং এটি গুনাহের। ইহরামবদ্ধ হওয়ার পর যাবতীয় নিয়ম-কানুন মেনে চলুন। (ইহরামের নিয়ম জানতে হজ গাইড পড়ুন)। যদি কারও গন্তব্য ঢাকা থেকে মদিনা হয়, তাহলে মদিনা থেকে মক্কায় যাওয়ার সময় ইহরাম বাঁধলে চলবে।
মোবাইল সিম ও মানচিত্র সংগ্রহ
মক্কা গিয়ে মোবাইলের একটি সিমকার্ড কিনুন। পাসপোর্টের কাগজপত্র দেখিয়ে সিমকার্ড কিনতে পারবেন। এয়ারপোর্টে সৌদির বিভিন্ন কোম্পানি সাময়িক মোবাইল সিমকার্ড দেয়। শুধু আঙুলের ছাপ দিয়ে সিমকার্ডগুলো সংগ্রহ করা যায়।
ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবপোর্টালে আরাফার ময়দান, মিনা বা মক্কা-মদিনা হজের স্থানগুলোর মানচিত্র দেওয়া আছে। সেখান থেকে মানচিত্র সংগ্রহ করে প্রিন্ট করে নেওয়া যায়। মানচিত্র থাকলে চলতে-ফিরতে সহজ হবে।
হজবিষয়ক প্রয়োজনীয় যোগাযোগ
পরিচালক, হজ ঢাকা অফিস : ৮৯৫৮৪৬২। সচিব, ধর্ম মন্ত্রণালয় : ০৮৮-০২-৯৫১৪৫৩৩। বাংলাদেশ হজ মিশন, মক্কা, ০০-৯৬৬-২-৫৪১৩৯৮০। বাংলাদেশ হজ মিশন, মদিনা : ০০-৯৬৬-০৪-৮৬৬৭২২০। বাংলাদেশ হজ মিশন, জেদ্দা : ০০-৯৬৬-২-৬৮৭৬৯০৮।