বাবা বিশু লাল তঞ্চঙ্গ্যা মানসিক ভারসাম্যহীন রোগী এবং মাতা কন্যামালা তঞ্চঙ্গ্যা পেশায় কৃষক। বলতে গেলেই একমাত্র পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি মা, তাও আবার নিজের সামান্য কিছু জমি এবং অন্যের জমিতে কৃষি কাজ করে কোনরকমে জীবন ধারন করাটাই যেই পরিবারের নিত্যদিনের সংগ্রাম। যেখানে নুন আনতে পানতা ফুরাই অবস্থা। সেই পরিবারের সন্তান কুশল বাবু তঞ্চঙ্গ্যা শত দারিদ্র্যকে পেছনে ফেলে এই বছর প্রকাশিত এসএসসি পরীক্ষায় রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার অতি দূর্গম ফারুয়া উচ্চ বিদ্যালয় হতে মানবিক বিভাগে একমাত্র পরীক্ষার্থী হিসাবে জিপিএ (৫) অর্জন করেছেন। তাঁর এই অর্জনে আনন্দে ভাসছে সমগ্র বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, পরিচালনা পর্যদ এবং এলাকাবাসী।
কুশল বাবু তঞ্চঙ্গ্যার বাড়ি বিলাইছড়ি উপজেলার ৩ নং ফারুয়া ইউনিয়ন এর এগুজ্যাছড়ি পাড়ায়।
ফারুয়া হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক শান্তিময় তঞ্চঙ্গ্যার মাধ্যমে মঙ্গলবার (১৪ মে) বিকেলে এই প্রতিবেদকের যোগাযোগ হয় কুশল বাবু তঞ্চঙ্গ্যার সাথে। কুশল বলেন, স্কুল হতে বেশ কয়েক কি: মি: দূরে তাঁর বাড়ি। তাই সকালে উঠে স্কুলে রওনা করে আবার বিকেলে ঘরে গিয়ে কৃষিকাজে মাকে সহায়তা করতে হয় আমাকে । আর্থিক অনটনে প্রাইভেট পড়তে না পারলেও স্কুলের প্রধান শিক্ষক সহ সকল শিক্ষকরা আমাকে এই ভালো রেজাল্ট হবার জন্য যথেষ্ট সহযোগিতা করেছে। কখনো ভালো পোষাক পরিধান করতে পারি নাই অভাবে, আমার মা' র যতটুকু যোগাড় করতে পেরেছে তা দিয়ে খেয়ে আমি স্কুলে আসা যাওয়া করেছি। বন্ধের দিনগুলোতে মা' কে কৃষি কাজে সহায়তা করেছি। আমার স্বপ্ন হলো দেশের ভালো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হতে পাস করে বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিব এবং দেশের সেবায় নিজেকে আত্মনিয়োগ করবো।
ফারুয়া হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক শান্তি ময় তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, দারিদ্র্যকে জয় করে কুশল বাবু তঞ্চঙ্গ্যার এই বছর আমাদের বিদ্যালয় হতে মানবিক বিভাগে একমাত্র স্টুডেন্ট হিসেবে জিপিএ (৫) অর্জন করেছে। তাঁর বাবা একজন মানসিক ভারসাম্যহীন রোগী। তাঁর সাফল্যে আমরা আনন্দিত। সেই অত্যন্ত মেধাবী ও বিনয়ী ছেলে।
তিনি আরোও বলেন, দুর্গম এবং শুকনো মৌসুমে কাপ্তাই লেক এবং রাইক্ষ্যং নদীতে পানি না থাকার কারনে শিক্ষার্থীরা দুর্গম ফারুয়া হতে প্রায় ৭০ কি: মি: দূরে বিলাইছড়ি সদরে এসে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। তাই বাধ্য হয়ে পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে পরীক্ষা কেন্দ্রের আশেপাশে অবস্থান নিতে হয় শিক্ষার্থীদের। যা খুবই কষ্টের। যদি ফারুয়া হাই স্কুলে একটা পরীক্ষা কেন্দ্র থাকলে খুবই ভালো হতো। প্রধান শিক্ষক আরোও বলেন, প্রতিবছর বিলাইছড়ি উপজেলার মধ্যে ফারুয়া হাই স্কুল সবচেয়ে ভালো রেজাল্ট করে থাকে।
৩ নং ফারুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি বিদ্যালাল তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, দারিদ্র্যকে পেছনে ফেলে অদম্য মনোবল নিয়ে যেই ভালো ফলাফল করা যায়, তাঁর প্রকৃষ্ট উদাহরণ কুশল বাবু তঞ্চঙ্গ্যা। তাঁর এই সাফল্যে আমরা আনন্দিত।
ভবিষ্যতে তাঁর উচ্চ শিক্ষা লাভে যতটুকু সহযোগিতা করা যায়, তা আমি করার চেষ্টা করবো।
বিলাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জামশেদ আলম রানা বলেন, দূর্গম ফারুয়া ইউনিয়ন এর ফারুয়া হাই স্কুল হতে সেই একমাত্র জিপিএ (৫) পেয়েছে। আমি যতটুকু জানতে পেরেছি সেই অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের ছেলে। ভবিষ্যতে তাঁর উচ্চ শিক্ষার বিষয়ে বিলাইছড়ি উপজেলা প্রশাসন তাঁর পাশে থাকবে এবং সহযোগিতা করবে।