চট্টগ্রাম-কাপ্তাই মহাসড়কে শাহ আমানত পরিবহনের বাসের সাথে মোটর সাইকেলের সংঘর্ষে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) দুই মেধাবী শিক্ষার্থী নিহতের জের ধরে টানা তৃতীয় দিনের মতো সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে চুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে তারা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে এই আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
২৪ এপ্রিল বুধবার সকাল নয়টায় সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে, ব্যারিকেড দিয়ে ও টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে অবস্থান নেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
গত ২২ এপ্রিল সোমবার বিকেলে সড়ক দুর্ঘটনায় চুযেটের দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনার পরপরই বিক্ষোভে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা। সন্ধ্যার পর চট্টগ্রাম-কাপ্তাই মহাসড়কে চুয়েট এলাকার পরিস্থিতি হয়ে উঠে উত্তপ্ত। এ সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা শাহ আমানত পরিবহনের একটি বাসে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। ভাংচুরের পর আটকে রাখে বেশ কয়েকটি বাস।
ঘটনার পরদিন ২৩ এপ্রিল মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা চট্টগ্রাম-কাপ্তাই মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দোলন অব্যাহত রাখেন। এ সময় ব্যস্ততম এই সড়কে যাতায়াতকারী যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। তবে অ্যাম্বুলেন্স,বিদেশগামী যাত্রী ও জরুরি যানবাহনগুলোকে অবরোধের আওতামুক্ত ছিল। মঙ্গলবার দুপুরে মহাসড়কে নিহত দুই শিক্ষার্থীর গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বিকেলে চুয়েটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে
নিহত শান্ত সাহা ও তৌফিক হোসাইনের হত্যাকারী গাড়ি চালক ও সহযোগী হেলাপারকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনাসহ ১০ দফা দাবি তুলে ধরেন। এসব দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে চুয়েটের উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য চুয়েট কর্তৃপক্ষ, চুয়েটের ছাত্র প্রতিনিধি, বাস মালিক সমিতি, পুলিশ ও আইন- শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে জেলা প্রশাসকের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে নিহত দুই শিক্ষার্থীর পরিবারকে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রীর নির্দেশে ৫ লাখ টাকা করে মোট ১০ লাখ টাকা, এবং আহত শিক্ষার্থীকে ৩ লাখ টাকা দেওয়ার ঘোষণা দেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন, এছাড়া বাস মালিকের পক্ষ থেকে নিহত দুই শিক্ষার্থীর পরিবারকে ২ লাখ ও আহত শিক্ষার্থীর পরিবারকে ১ লাখ টাকা দেওয়ার ঘোষণা দেন ।
বৈঠকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক বলেন, শীঘ্রই চট্টগ্রাম-কাপ্তাই মহাসড়ক সম্প্রসারণের উদ্যোগের বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব মহোদয় আশ্বস্ত করেছেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণায়ে কাগজপত্রসহ ফরমপূরণ করে পাঠিয়ে দিবো। দু একদিনের মধ্যে আমরা সে টাকা পরিবারের কাছে পৌছে দিতে পারবো বলে আশা করছি। দুর্ঘটনার বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, প্রশাসন তাঁদের কিছু দাবি মেনে নিলেও সব দাবির সঙ্গে একমত হতে পারেনি। তাই সব দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
উল্লেখ্য গত ২২ এপ্রিল সোমবার বিকেলে সাড়ে চারটার দিকে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই মহাসড়কের সেলিনা কাদের চৌধুরী কলেজ সংলগ্ন এলাকায় বাসের চাপায় নিহত হন মোটর সাইকেল আরোহী চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের ২০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী শান্ত সাহা ও ২১তম ব্যাচের তৌফিক হোসেন। দুর্ঘটনায় আহত হন জাকারিয়া হিমু নামে আরেক শিক্ষার্থী। তিনি একটি বেসরকারি হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে রয়েছেন