সাতকানিয়া উপজেলার কালিয়াইশ ইউনিয়নে মৌরশী জায়গা দখল বেদখল নিয়ে ওঠেছে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ এবং ভাংচুর।
মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার কালিয়াইশ ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের পশ্চিম কাটগড় এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
ঘটনায় সাতকানিয়া থানায় আরাফা বেগম নামে এক মহিলা ভাংচুর ও শ্লীলতাহানি এবং মারধর ছিনতাইয়ের অভিযোগ এনে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন এরফানুর রহমান সুমনসহ অজ্ঞাত ১০-১৫ জনের বিরুদ্ধে।
থানায় দায়ের করা অভিযোগে অভিযুক্ত সুমন একই এলাকার মৃত মোস্তাফিজুর রহমানের ছেলে।
এদিকে লিখিত অভিযোগ সূত্রে এবং বাদীর ভিডিও বক্তব্যের মাধ্যমে জানা যায়, সুমনদের সাথে শাহেদ আক্তারদের সাথে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ চলে আসছিলো বহুদিন ধরে।
তবে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার নাগাদ আরাফা বেগমদের একটি নতুন টিনশেডকে উচ্ছেদ করার লক্ষে সুমনের নিজস্ব ব্রিকফিল্ড থেকে অন্তত ২ট্রাক লোক এনে ১ঘন্টার ভেতর ব্যাপক ভাংচুর চালায় এবং আরাফা বেগমদের শরীরেও হাত তোলেন এবং তার পুত্রবধূদেরও অন্যান্য যুবকরা শ্লীলতাহানি করে ঘরের ভেতর হুক লাগিয়ে তাদের নতুন নির্মাণাধীন টিনশেডের ঘরটি ভাংচুর করেন এবং অপরিচিত যুবকরা দরজা জানালা ভাংচুর করে ৩লক্ষ ১৫হাজার টাকা নিয়ে যায়।
এদিকে প্রতিবেদক সরেজমিনে পরিদর্শনে গেলে একটি টিনশেড ও তিনটি জানালার কাঁচ ভাংচুর অবস্থায় পাওয়া যায়।
অপরদিকে আরাফা বেগমদের বাড়ির চারপাশে সিসিটিভি চেক করে বেশ কিছু যুবকের প্রকাশ্যে ভাংচুর করার ভিডিও প্রতিবেদকের হাতে আসে।
অপরদিকে উত্তর সাতকানিয়া আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও ঘটনায় অভিযুক্ত এরফানুর রহমান সুমন বলেন, আমরা কি ছিনতাই করার মত লোক?
আমার বাড়ির সামনে আমার মৌরশী শতবছরের পুরনো দখলীয় জায়গায় রাতের আধাঁরে আমি না থাকার সুযোগে বেশকিছু লোকজন দিয়ে রাতারাতি দখল করার চেষ্টা চালান শাহেদ আক্তার ও তার স্ত্রী আরাফা বেগম এবং তার ছেলেরা।
ফলে আমি আমার এলাকার স্থানীয় ইউপি সদস্যকে জানিয়ে এলাকার মান্যগন্য লোকজন নিয়ে তাদের অবৈধ দখলটা মূলত বাঁধা দেয়ার চেষ্টা চালায়।
এতে তারা উল্টো আমাদের উপর চড়াও হন।
আর ওই জায়গাতে ইতিমধ্যে ফৌজদারী ১৪৫ধারা মামলার নিষেধাজ্ঞাও জারী আছে তবুও তারা আইন না মেনে দখলকাজ করেই আসছিল।
১৪৫ধারা নিষেধাজ্ঞা মামলা কার সাথে চলছিল প্রশ্ন করলে, এরফানুর রহমান সুমন বলেন, আমার সাথে চলছেনা তবে আরেক পক্ষের সাথে চলে আসছে একই দাগের জায়গা নিয়ে।
শুধু ১৪৫ধারা নয়- একই তফসিল ও একই খতিয়ান নিয়ে সাতকানিয়া সিনিয়র সহকারি জজ আদালতের অপর ২৮৪/২০১৪ মামলায় মাননীয় আদালতের ২৬/১১/২০১৪সালের ৭নং আদেশ দ্বারা অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশও বলবৎ রয়েছে।
জায়গাটি কি কেনা নাকি মৌরশী তখন এরফানুর রহমান সুমন বলেন, এটা আমাদের মৌরশী ও শতবছরের পুরাতন দখলীয় জায়গা, তিনি আরো বলেন আপনি কাটগড় মৌজার ৪১১নং বিএস খতিয়ানটা পর্যালোচনা করলেই দেখবেন আসলে আমি অবৈধ কিনা?
ঘটনাস্থলের খবর পেয়ে বাড়িতে ৯৯৯ এর মাধ্যমে পুলিশ গেছে বলে নিশ্চিত করেন আরাফা আক্তারের ছেলে মো:বোরহান।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা সাতকানিয়া থানার এসআই মো:নাঈম বলেন,ভাংচুর হয়েছে সেটা সত্যি।তবে এটা জায়গা সংক্রান্ত অন্য কোম বিষয় না।
এই জায়গা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে উভয় পক্ষে বিরোধ চলে আসছিল।তবুও অভিযোগ হাতে পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
একই কথা বলেন সাতকানিয়া থানার ওসি প্রিটন সরকার, তিনি বলেন এই ঘটনায় রাতেই এক মহিলা বাদী হয়ে একটি অভিযোগ দিয়েছেন, অভিযোগখানা হাতে পেয়েছি।বিষয়টা তদন্তপূর্বক আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে।
এদিকে ভাংচুর করার সময় ধস্তাধস্তিতে আরাফা আক্তার এবং তার পুত্রবধূর কাপড়চোপড় ও টানা হেঁচড়ে করা হয়েছে বলে দাবী করে কিছু পরিহিত ছেঁড়া ফাটা কাপড় প্রতিবেদককে দেখান অভিযোগকারী আরাফা বেগম।
এদিকে একই জায়গা স্বেচ্ছাসেবক লীগনেতা এরফানুর রহমান সুমনের কোন কালে দখলে ছিলনা বলে প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেন আরাফা বেগমের ছোট ছেলে চট্টগ্রামে বসবাসরত বোরহান উদ্দিন।
বোরহান আরো বলেন,তার জোরপূর্বক দখল কাজে সহায়তা করেন আমাদের স্থানীয় বর্তমান ইউপি সদস্য, তিনিও দলবল নিয়ে ভাংচুর করার জন্য আসছিলেন।
অপরদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ব্যক্তি জায়গাটি সুমনের দখলে আছেন বলে নিশ্চিত করলেও আদালতে একটি মামলায় বিচারাধীন থাকায় পূর্নাঙ্গ ভাবে মন্তব্য করা ঠিক হবেনা বলে জানিয়েছেন।