একশ বছরেরও বেশি সময় পর প্রথমবারের মতো বিদেশি ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছে রাশিয়া। বৈশ্বিক পরাশক্তি এই দেশটির ঋণ খেলাপি হওয়াকে ঐতিহাসিক ঘটনা বলেই আখ্যায়িত করা হচ্ছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিবিসি জানিয়েছে, রোববার (২৬ জুন) রাশিয়ার ঋণ পরিশোধের সময়সীমা পার হয়ে যায় এবং এতে করে এক শতাব্দীরও বেশি সময়ের মধ্যে প্রথমবারের মতো বৈদেশিক ঋণে খেলাপি হয়েছে মস্কো।
বিবিসি বলছে, রোববারের মধ্যে রাশিয়াকে ১০ কোটি মার্কিন ডলার পরিশোধ করার বাধ্যবাধকতা ছিল। রাশিয়ার হাতে এই অর্থ রয়েছে এবং নিয়ম মেনে যথা সময়েই বিপুল এই অর্থ পরিশোধে করতে দেশটি রাজিও ছিল। কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলোর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার কারণে আন্তর্জাতিক ঋণদাতাদের অর্থ পরিশোধ মস্কোর জন্য কার্যত অসম্ভব করে তুলেছে।
ক্রেমলিন অবশ্য ঋণ খেলাপি হওয়া এড়াতে জোর চেষ্টা চালিয়ে গেছে। কারণ এটি একটি দেশের মর্যাদার জন্য বড় ধরনের আঘাত। রাশিয়ার অর্থমন্ত্রী উদ্ভূত এই পরিস্থিতিকে ‘প্রহসন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। রাশিয়ার সরকার বলছে, কৃত্রিমভাবে এই পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে।
রাশিয়া জানায়, ঋণ পরিশোধের জন্য তারা ইউরোক্লিয়ার ব্যাংকে অর্থ পরিশোধ করেছে। তবে নিষেধাজ্ঞার কারণে এই অর্থ শোধ করেনি ব্যাংকটি।
রাশিয়ার সরকার বলছে, সব ঋণ তারা সময়মতো পরিশোধ করতে চায় এবং এখন পর্যন্ত এই কাজে তারা সফল হয়েছে। রাশিয়ার প্রায় ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণ ডলার বা ইউরোতে ধার্য রয়েছে এবং বিপুল এই ঋণের প্রায় অর্ধেকই দেশের বাইরে রাখা হয়েছে।
এর আগে শেষবার ১৯১৮ সালে বিদেশি ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে খেলাপি হয়েছিল রাশিয়া। বলশেভিক বিপ্লবের সময় তৎকালীন নতুন কমিউনিস্ট নেতা ভ্লাদিমির লেনিন রাশিয়ান সাম্রাজ্যের ঋণ পরিশোধ করতে অস্বীকার করেছিলেন।
এছাড়া ১৯৯৮ সালে শেষবার ঋণ খেলাপি হয়েছিল মস্কো। মূলত বরিস ইয়েলৎসিনের শাসনামলের শেষের দিকে বিশৃঙ্খল সময়ে রুবেল সংকটের কারণে খেলাপি হয়েছিল রাশিয়া। সেই সময়ে মস্কো তার অভ্যন্তরীণ বন্ডগুলোতে অর্থপ্রদান করতে ব্যর্থ হলেও রাশিয়ার বৈদেশিক ঋণের পরিশোধ নির্ধারিত সময়েই করেছিল।
ইউক্রেন আক্রমণের পর যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞায় পড়া রাশিয়ার ঋণ খেলাপি হওয়াটি অনিবার্য বলেই মনে করা হচ্ছিল। কারণ এসব নিষেধাজ্ঞা ব্যাংকিং নেটওয়ার্কগুলোকে রাশিয়ার জন্য সীমাবদ্ধ করে রেখেছে।
সূত্র: বিবিসি