ইন্টারনেটের অন্ধকার জগৎ ডার্ক ওয়েবে অর্ডার করলেই কুরিয়ার বা ডাকের মাধ্যমে দেশে পৌঁছে যাচ্ছে নতুন ভয়ানক মাদক ‘ডিওবি’ যা ব্যবহার করে জঙ্গি তৎপরতা চালানো সম্ভব।
আন্তর্জাতিক অপরাধ চক্রের কাছ থেকে এমন মাদক এনে রমরমা ব্যবসা করছে দেশের মাদক কারবারিরা। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে শুরু করে খোদ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।
ইন্টারনেটের অন্ধকার জগৎ ডার্ক ওয়েব। যেখানে চলে নিষিদ্ধ মাদক, অস্ত্র ও চোরাই গোপন তথ্য জাতীয় যাবতীয় সব কিছুর অবৈধ কারবার। ডার্ক ওয়েবে কীভাবে কেনা হয় মাদক। সময় সংবাদকে সেই তথ্য জানিয়েছে এক মাদক কারবারি।
এক ব্যবহারকারী জানান, ডার্ক ওয়েবে বিট কয়েন নামক ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার করে অর্ডার দেওয়া হলে কুরিয়ারের মাধ্যমে আসে এ মাদক।
দেশে নতুন মাদক আসছে এমন তথ্য নিয়ে একটি চক্রের কাছে অর্ডার দিয়ে এলিফেন্ট রোডের সুন্দরবন কুরিয়ার থেকে পাঁচটি এলএসডি স্ট্রিপ উদ্ধার করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। এরপর সেই সূত্র ধরেই খুলনায় অভিযানে যান কর্মকর্তারা।
গত সোমবার খুলনার বয়রার দুটি বাসায় অভিযানে ১০স্ট্রিপ এলএসডি ও ৯০ স্ট্রিপ নতুন মাদক ডিওবিসহ মাদক বিক্রেতা আসিফ আহমেদ শুভ ও তার বন্ধু অর্নব কুমারকে আটক করা হয়। ডার্ক ওয়েবে বিট কয়েন নামক ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার করে অর্ডার দেওয়ার পর পোল্যান্ড থেকে আসা পোস্ট অফিসের চিঠির খামে এ মাদক হাতে পান তারা।
শুভ ও তার বন্ধু অর্নব জানায়, ধরা না পড়ার কারণ বন্দরে স্ক্যান করত না।
কুরিয়ারের মাধ্যমে নতুন এই মাদক চলে যেত দেশের বিভিন্ন স্থানে। এ ঘটনায় খুলনার বয়রা শাখার সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের ম্যানেজর মামুন অর রশিদকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
ঢাকা মেট্রো কার্যালয় (উত্তর) সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান বলেন, এ চক্রের সঙ্গে আরও কেউ জড়িত আছে কিনা তদন্তের পর বের হয়ে আসবে। প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞনী বিভাগের অধ্যাপক তৌহিদুল হক বলেন, দেশের মধ্যে কুরিয়ারগুলোকে আরও সচেতন হতে হবে।
ডিওবি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন মাদক, যা ব্যবহার করে আইএসআই-এর মতো যে কাউকে নিয়ন্ত্রণ করে জঙ্গি তৎপরতা চালানো সম্ভব।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষক ড. দুলাল কৃষ্ণ সাহা বলেন, ডিওবি আরও ভয়ানক। এই মাদকটা আইএসআইরা সিরিয়ার মতো দেশে ব্যবহার করে। ডিওবি আরও ভয়ানক, কারণ তার শরীরটা বাইরে থেকে স্ক্যান করা বা নিয়ন্ত্রণ করা যায় সে জন্য তাকে দিয়ে আরও যে কোনো দুর্ঘটনা ঘটনোর সম্ভাবনা রয়ে গেছে।
কুরিয়ার বা ডাকের মাধ্যমে মাদকের এমন প্রবেশ নিয়ে উদ্বিগ্ন খোদ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরও।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ডিজি মো. আবদুস সবুর মণ্ডল বলেন, অত্যাধুনিক যন্ত্রাংশ না থাকার কারণে তাদের নির্ণয় করা কঠিন হয়ে পড়ছে। তবে অত্যাধুনিক যন্ত্রাংশ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের হাতে আসে সে রকম পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে এরই মধ্যে।
দেশে ডিওবির প্রতি স্ট্রিপ বিক্রি হয় ১০-১২ হাজার টাকায়।