করোনা দ্বিগুণহারে বাড়ছে চট্টগ্রামে, একদিনে শনাক্ত ২১২
নিজস্ব প্রতিবেদক | টুয়েন্টিফোর টিভি
প্রকাশিত : শুক্রবার, ২০২১ মার্চ ১৯, ০২:৪১ অপরাহ্ন
চট্টগ্রামে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে দ্রুতগতিতে। গত দুই মাসে সংক্রমণ কম থাকলেও মার্চে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা। গত ফেব্রুয়ারি মাসে মোট ১ হাজার ৮০০ এর কিছু বেশি রোগী শনাক্ত হলেও মার্চের প্রথম ১৭ দিনে মোট রোগীর সংখ্যা ২০০০ ছাড়িয়ে গেছে। রোগী বাড়ার সাথে সাথে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। চলতি মাসে নয়জনের মৃত্যু হয়েছে।
জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে ২১২ জনের। এ নিয়ে চট্টগ্রামে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ৩৭ হাজার ২৪০ জন।
কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজ ল্যাব ও চট্টগ্রামের ৫টি ল্যাবে ২ হাজার ৪৩৯টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এদিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারী বিশ্ববিদ্যালয় ও শেভরনে কোনও নমুনা পরীক্ষা করা হয়নি।
সংশ্লিষ্ট বলছেন কঠোর পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে।
চট্টগ্রামের হাসপাতালগুলোতে রোগী বাড়ছে। চিকিৎসকরা বলছেন করোনা থেকে বাঁচতে হলে মাস্কের বিকল্প নেই। মাস্ক পড়লে ৯০ শতাংশ সংক্রমণ কমানো যায়। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। বারবার সাবান পানি কিংবা হ্যান্ডস্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করে নিতে হবে। টিকা নিলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
এদিকে দেখা যাচ্ছে, মানুষ ছুটির দিনগুলো বিনোদনকেন্দ্রে ভিড় করছেন। নেই কোনো সচেনতা। বিয়ে বাড়িতে লম্বা সময় ধরে থাকছেন। গণপরিবহনে গাদাগাদি করে চলাফেরা করছেন। রাস্তা মানুষ নির্বিকারভাবে আড্ডা দিচ্ছে। মাস্ক থাকলেও অধিকাংশ মানুষ পকেটে কিংবা থুতনির নিচে লাগিয়ে রেখেছেন।
দেশে প্রথম কোভিড-১৯ শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। একই বছরের ২৯ জুন সর্বোচ্চ ৪ হাজার ১৪ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়। একই বছর ৩০ জুন একদিনে করোনায় সর্বোচ্চ ৬৪ জনের মৃত্যু হয়। গত বছরের জুন-জুলাই মাসে দেশে সংক্রমণ সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছিল। ওই সময় প্রতি সপ্তাহে ২০ থেকে ২৫ হাজার রোগী শনাক্ত হচ্ছিল।
চট্টগ্রামে গত ৩ এপ্রিল প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। চট্টগ্রামে একই বছরের ২৯ জুন সর্বোচ্চ ৪৪৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল। দেশে করোনায় প্রথম মৃত্যু হয় ১৮ মার্চ। এদিকে চট্টগ্রামে করোনায় প্রথম মৃত্যু হয় ১১ এপ্রিল।
যেহারে করোনা বাড়তে শুরু করেছে, তাতে সংক্রমণের শীর্ষে পৌঁছাবে। চট্টগ্রামে শনাক্তের হার ১০ শতাংশের উপরে চলে গেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্দেশনা অনুযায়ী, টানা দুই সপ্তাহ যদি সংক্রমণ পাঁচের নিচে থাকে, তখন বোঝায় যে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন আর নেই। তখন হয়ে যায় গুচ্ছভিত্তিক সংক্রমণ বা ক্লাস্টার ট্রান্সমিশন। কিন্তু, যদি আবার সংক্রমণের হার বেড়ে পাঁচের বেশি হয়ে যায়, তখন আবার কমিউনিটি ট্রান্সমিশনে চলে যাবে। যে হারে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে, তাতে আবারও কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরু হয়েছে বলা যেতে পারে।
জেলা সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি বলছেন, করোনা সংক্রমণ রোধে কঠোর হওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। মাস্ক না পরলে জেলা প্রশাসনকে জরিমানা করতে হবে। এছাড়া সামাজিক অনুষ্ঠান ও বিনোদন কেন্দ্রে লাগাম টানতে হবে।
এদিকে গত ১৪ মার্চ থেকে জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটের টিম মাঠে নেমেছে। মানুষকে সচেতনতার করার পাশাপাশি মাস্কও বিতরণ করা হয়। তারা বলছেন, সামনে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে জরিমানাও করা হবে। উন্মুক্ত স্থানে কোনো অনুষ্ঠান না করার নির্দেশনাও রয়েছে জেলা প্রশাসনের।