করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে জেলা প্রশাসনের নিয়মিত অভিযানে জনগণকে সতর্ক করার পাশাপাশি করা হয়েছে জরিমানাও। যার ফলে নগরে কমে এসেছে সংক্রমণের হার।
কিন্তু এই অভিযানে হঠাৎ ভাটা পড়েছে।
নগরের ৭০ শতাংশ মানুষের মুখে নেই মাস্ক। যারা মাস্ক পড়েন তাদের বেশিরভাগই থুতনিতে লাগিয়ে রাখেন। এছাড়া বিভিন্ন অনিয়ম রোধে অভিযানও থেমে গেছে। ভেজালবিরোধী দৃশ্যমান কোনও অভিযান নেই। ভোক্তা অধিকারের অভিযান চোখে পড়লেও জেলা প্রশাসনের অভিযান কমে গেছে। অবশ্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়মিত অভিযান চলছে।
চট্টগ্রামে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের একটি দফতর রয়েছে। তারা নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতের জন্য কি করছে এ নিয়ে প্রশ্ন বিশিষ্টজনদের। তারা বলছেন, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের দফতর থাকলেও তাদের কোনও কার্যক্রম চোখে পড়ে না।
হঠাৎ জেলা প্রশাসনের অভিযান থেমে যাওয়ায় নগরে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। অনেক দোকানি নিত্যপণ্যের দাম নিচ্ছে বেশি। ভেজাল খাবার তৈরি, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার রান্না, মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষধ ও পণ্য বিক্রি করাসহ নানান অনিয়ম চলছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত জুলাই মাসে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের অভিযান ছিল ৫৯৬টি। মামলা দায়ের হয়েছে ৪ হাজার ৪৭৪টি। জরিমানা করা হয়েছে ২৯ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ টাকা। এরপর আগস্ট মাসে অভিযান কমে ৩০৯টিতে দাঁড়ায়। ওই মাসে মামলা দায়ের হয়েছে ১ হাজার ৫৭৮টি। জরিমানা আদায় করা হয়েছে ১৫ লাখ ২৭ হাজার ২৯৫ টাকা। সেপ্টেম্বর মাসে মাত্র ১৪২টি অভিযানে মামলা দায়ের হয়েছে ৩৮৬টি। জরিমানা আদায় করা হয়েছে ১৮ লাখ ৫৯ হাজার ৭০ টাকা।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে কর্মরত ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছেন ২০ জনের অধিক। এছাড়াও ১৫ জন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ১৫ জন সহকারী কমিশনার (ভূমি) রয়েছেন। নগরে রয়েছেন ৬ জন সহকারী কমিশনার (ভূমি)।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোছাম্মৎ সুমনী আক্তার বলেন, যখন অভিযান বেশি হয়েছে তখন করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতি ভয়াবহ ছিল। এখন লকডাউন নেই, তাই অভিযান আগের চেয়ে কম পরিচালনা করা হচ্ছে। প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনাও বেশি হয়। যখন প্রয়োজন কম থাকে তখন অভিযান কমিয়ে দেই।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, করোনাভাইরাস একেবারে ধ্বংস হয়ে যায়নি। প্রায় প্রতিদিনই ৩০-৪০ জন মানুষ মারা যাচ্ছে। চট্টগ্রামে সংক্রমণ একটু কমেছে। এ ভাইরাস কিছুদিন অদৃশ্য হয়ে রয়েছে। আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। তাই আমাদের সচেতন হওয়া জরুরি।
তিনি আরও বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। এখন একটু স্বাভাবিক হওয়ায় দ্রুতগতিতে কিছু অসাধু সে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পণ্যের দাম বৃদ্ধি, ওজনে কম, ভেজাল মেশানোসহ নানান অপরাধমূলক কাজ করছে। তাই জেলা প্রশাসনের অভিযান নিয়মিত চললে তারা সতর্ক থাকবে, ভয়ে থাকবে। সূত্র : বাংলানিউজ