বিজিবিকে আন্তর্জাতিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে সরকার কাজ করছে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, বিজিবিকে একটি অত্যাধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বিজিবি’র সাংগঠনিক কাঠামোতে ব্যাপক পরিবর্তন এনে বিজিবিকে একটি ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে উন্নীত করা হয়েছে।

মন্ত্রী বলেন, স্মার্ট বর্ডার ম্যানেজমেন্ট এর অংশ হিসেবে সীমান্তে নতুন বিওপি, বিএসপি নির্মাণসহ অত্যাধুনিক সার্ভেইলেন্স ইকুইপমেন্ট স্থাপন, এটিভি ও অত্যাধুনিক এপিসি, রায়ট কন্ট্রোল ভেহিক্যাল, ভেহিক্যাল স্ক্যানার ও দ্রুতগামী জলযান সংযোজন করা হয়েছে। এছাড়াও অতি সম্প্রতি এই বাহিনীতে অত্যাধুনিক এন্টি ট্যাংক গাইডেড উইপন সংযোজন করা হয়েছে। বিজিবি’র প্রশিক্ষণ কর্মকান্ডের কলেবর বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনায় রেখে চুয়াডাঙ্গায় আরেকটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

শনিবার (১৭ জুলাই) সাতকানিয়া বাইতুল ইজ্জতের বিজিবির একমাত্র প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার এন্ড কলেজের ৯৬তম ব্যাচের সমাপনী কুচকাওয়াজ ও শপথ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, জাতির পিতার হাতে গড়া এই বাহিনী আজ একটি সুসংগঠিত, চৌকস, সুশৃঙ্খল ও পেশাদার দেশপ্রেমিক বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। বিজিবি ‘সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী’ হিসেবে দেশের ৪,৪২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত সুরক্ষা, সীমান্ত ভূমি ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধান, সীমান্তে চোরাচালান, নারী ও শিশু পাচার রোধসহ যেকোন ধরণের সীমান্ত অপরাধ দমন সর্বোপরি দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষার মহান দায়িত্ব অত্যন্ত দৃঢ়তা ও সফলতার সাথে পালন করে আসছে।

‘এছাড়াও দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষায় অসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা প্রদানসহ যেকোন দুর্যোগ মোকাবিলার ক্ষেত্রেও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিশ্বস্ততা ও সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করে সেবা ও কর্তব্য পরায়ণতার মাধ্যমে সমগ্র জাতির শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।’— বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে নারীদের অবিস্মরণীয় অবদানের কথা স্মরণ করে নবীন নারী সৈনিকদের উদ্দেশে আসাদুজ্জামান খান বলেন, আজ নারীরা বিভিন্ন অঙ্গনে যথাযথ যোগ্যতা ও কর্মদক্ষতার স্বাক্ষর রাখছেন। এরই ধারাবাহিকতায় আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, তোমরা বিজিবি’র সার্বিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় আরও গতিশীল ভূমিকা রাখাসহ বাহিনীর সুনাম ও সুখ্যাতি বৃদ্ধিতে সততা, নিষ্ঠা ও দক্ষতার সাথে নিরলসভাবে কাজ করবে।

তিনি বিজিবি’র নবীন সৈনিকদের প্রদর্শিত কুচকাওয়াজের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন এবং নবীন সৈনিকদের নতুন জীবনে পদার্পনের শুভলগ্নে তাদের স্বাগত জানান। একইসাথে নবীন সৈনিকদের দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের নিদর্শন তুলে ধরার জন্য বিজিবি মহাপরিচালক, বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার এন্ড কলেজের কমান্ড্যান্ট এবং সংশ্লিষ্ট সকল প্রশিক্ষক ও কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানান।

মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব আসাদুজ্জামান খান, এমপি প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠান শেষে ৯৬তম রিক্রুট ব্যাচের সেরা চৌকস রিক্রুট হিসেবে ১ম স্থান অধিকারী বক্ষ নম্বর ৪০২ রিক্রুট (জিডি) নয়ন এবং অন্যান্য বিষয়ে সেরা সৈনিকদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন ও বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম।

প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজের প্যারেড কমান্ডার ছিলেন  ৯৬তম রিক্রুট ব্যাচের অফিসার ইনচার্জ মেজর মো. শাহরিয়ার ইফতেখার এবং  প্যারেড এ্যাডজুটেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ ইমরান হোসেন।

অনুষ্ঠান শেষে মন্ত্রী সেরা শারীরিক কৃতিত্ব (পুরুষ) মিজানুর রহমান, সেরা ফায়ারার  মো. আতিকুর রহমান, সেরা শারীরিক কৃতিত্ব (মহিলা) শারমিন খাতুন, সর্ববিষয়ে সেরা মো. নয়নের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে চট্টগ্রাম ১৪ আসনের সাংসদ প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহম্মদ নেজামুদ্দীন নদভী, চট্টগ্রাম ১৫ আসনের বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী, চকরিয়ার-পেকুয়ার সংসদ সদস্য জাফর আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, ৯৬তম রিক্রুট ব্যাচের মৌলিক প্রশিক্ষণ গত ৩১ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে শুরু হয়। বিজিটিসিএন্ডসিতে প্রশিক্ষণ নেয়া মোট ৭৮৪ জন রিক্রুট এর মধ্যে ৬৫৬ জন পুরুষ এবং ১২৮ জন নারী রিক্রুট প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করে। বিজিটিসিএন্ডসি ছাড়াও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর অন্যান্য আরও ৮টি প্রশিক্ষণ ভেন্যুতে ৯৬তম রিক্রুট ব্যাচের নবীন সৈনিকদের মৌলিক প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে। দীর্ঘ ২৪ সপ্তাহের অত্যন্ত কঠোর ও কষ্টসাধ্য এ প্রশিক্ষণ সফলভাবে শেষ করে আজ আনুষ্ঠানিক শপথ গ্রহণ ও সমাপনী কুচকাওয়াজের মাধ্যমে তাদের সৈনিক জীবনের শুভ সূচনা হলো।