রবিবার, ২০২৪ সেপ্টেম্বর ২২, ৬ আশ্বিন ১৪৩১
#
মহানগর মহানগর

চসিক নির্বাচন: স্বস্তি শঙ্কার ভোট কাল

নিজস্ব প্রতিবেদক | টুয়েন্টিফোর টিভি
প্রকাশিত : মঙ্গলবার, ২০২১ জানুয়ারী ২৬, ০৯:১৫ অপরাহ্ন
#
টানটান উত্তেজনা ও নানা উদ্বেগের মধ্যে কাল (বুধবার) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বহুল আলোচিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনের ভোট। শেষ মুহূর্তে এখন নানা হিসাব-নিকাশ মেলাতে ব্যস্ত ভোটার ও প্রার্থীরা। শুরু থেকে গতকাল প্রচারের শেষ দিন পর্যন্ত মোটামোটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকায় জনমনে যেমন স্বস্তি আছে, আবার ভোটের দিন পরিবেশ কেমন থাকে, তা নিয়ে শঙ্কাও আছে। এবার চসিক নির্বাচনে সবকটি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করে ভোট গ্রহণ করা হবে। এ নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থী বাদে আরও চারটি রাজনৈতিক দলের প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সহিংসতার আশঙ্কা ও উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। তিনি বলেছেন, পরিবেশ সুষ্ঠু না হলে অবাধ, নিরপেক্ষ, আইনানুগ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। সোমবার ঢাকায় নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। নির্বাচনি পরিবেশ নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মেয়র প্রার্থীরা পালটাপালটি অভিযোগ করেছেন। ভোটগ্রহণ সামনে রেখে শেষ মুহূর্তে পুলিশের বিরুদ্ধে নেতাকর্মীদের গণগ্রেফতারের অভিযোগ করেছেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেছেন, পুলিশ ঘরে ঘরে গিয়ে অভিযান চালানোর কারণে সম্ভাব্য পোলিং এজেন্টরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তবে ভিন্ন কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, ভোটগ্রহণ সুষ্ঠু হবে। পরিবেশ ভালো রয়েছে। সবাইকে নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে আসার আহ্বান জানান তিনি। জানা গেছে, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে মূলত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগের মো. রেজাউল করিম চৌধুরী ও বিএনপির ডা. শাহাদাত হোসেনের মধ্যে। এছাড়াও মেয়র পদে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) আবুল মনজুর, বাংলাদেশে ইসলামী ফ্রন্টের এমএ মতিন, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মুহাম্মদ ওয়াহেদ মুরাদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. জান্নাতুল ইসলাম এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী খোকন চৌধুরী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ৪১টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১৭২ জন কাউন্সিলর প্রার্থী এবং ১৪টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৫৭ জন নারী কাউন্সিলর প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। এদিকে নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ ও পালটা অভিযোগের পাহাড় জমেছে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে। নগরীর ৪১ ওয়ার্ডের মধ্যে অন্তত ৩৫টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী থাকার কারণে নির্বাচনের দিন সংঘাত-সংঘর্ষের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। যদিও প্রশাসন বলছে ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় তাদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতিতে ভোটকেন্দ্রে ভোটার আনাকেই চ্যালেঞ্জ মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও চট্টগ্রামস্থ রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সুষ্ঠু ভোটগ্রহণ উপলক্ষ্যে ভোটকেন্দ্র ও নির্বাচনি এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য বাড়ানো হয়েছে। এ নির্বাচনে ৭৩৫টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৪১০টি ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রের পাহারায় ৬ জন অস্ত্রধারী পুলিশসহ মোট ১৮ জন দায়িত্ব পালন করবেন। আর সাধারণ কেন্দ্রে চারজন অস্ত্রধারী পুলিশসহ ১৪ জন সদস্য মোতায়েন থাকবেন। এছাড়া ভোটকেন্দ্রের বাইরে ২৫ প্লাটুন বিজিবি, র‌্যাবের ৪১টি টিম এবং পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়নের ৪১টি মোবাইল ও ১৪টি স্ট্রাইকিং ফোর্স মাঠে রয়েছেন। তারা সোমবার থেকে টহল দিতে শুরু করেছেন। ৬টি স্ট্রাইকিং ফোর্স রিজার্ভ রাখা হয়েছে। এছাড়া ২০ জন জুডিশিয়াল ও ৪১ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও মাঠে রয়েছেন। তারা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (বিশেষ শাখা) মো. আবদুল ওয়ারিশ বলেন, ‘কেন্দ্রগুলোর অতীতের সহিংসতার ইতিহাস, প্রার্থীদের অবস্থান এবং বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্র চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে ৯ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েনসহ বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকবে। ২৫ প্লাটুন বিজিবি সবকটি কেন্দ্রে মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসাবে কাজ করবে। ভোটকেন্দ্রে যাতে ভোটাররা নিরাপদে আসতে পারেন এবং ভোট দিয়ে নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারেন, সে ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান তিনি। উল্লেখ্য, গত বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী একই বছরের ২৯ মার্চ চট্টগ্রাম সিটিতে ভোটগ্রহণ হওয়ার কথা ছিল। করোনাভাইরাসের কারণে নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে গত ২১ মার্চ প্রথম দফায় চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন স্থগিত করা হয়। দ্বিতীয় দফায় ১৪ জুলাই পুনরায় চসিক নির্বাচন স্থগিত করা হয়। এই সময়ে চসিকের প্রশাসক হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয় নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজনকে। প্রশাসকের মেয়াদের শেষ পর্যায়ে ২৭ জানুয়ারি ভোটের নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয়।
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

আরও খবর

Video