পাঁচ বছর আগে একটি ব্যাংকের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার ছিলেন সেলিম আহমেদ। দুর্নীতির কারণে চাকরি খোয়ান তিনি। তবে এখনও নিজেকে ব্যাংকার হিসেবেই পরিচয় দেন। গড়ে তোলেন বিশাল প্রতারক চক্র। যেখানে তিনি ব্যাংকের শীর্ষ একজন কর্মকর্তা, যার দায়িত্ব ব্যাংকে চাকরি করতে আগ্রহীদের সাক্ষাৎকার নেয়া!
কৌশলে বিভিন্ন ব্যাংকের রিসিপশনে বসে ভাইভা নেন চাকরি প্রত্যাশীদের। প্রার্থী চূড়ান্ত করার পর ধরিয়ে দেয়া হয় ভুয়া নিয়োগপত্র। চাকরি দেয়ার নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া চক্রটির আট সদস্যকে গ্রেফতারের পর বেরিয়ে এলো ভয়াবহ তথ্য।
এক ভুক্তভোগীর দায়ের করা মামলায় সেলিমসহ চক্রটির আট সদস্যকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা সেলিম কীভাবে চাকরি হারানোর পর অভিনব উপায়ে প্রতারণা করে আসছেন, সে বিষয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিল পুলিশ।
তিন ভাগে ভাগ হয়ে প্রতারণা করে চক্রটি। একটি দল ব্যাংকে চাকরি করতে আগ্রহী প্রার্থীদের জোগাড় করেন। তাদেরকে নিয়ে আসা হয় সেলিমের কাছে। বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাংকের রিসিপশনে বসে ভাইভা নেয়া হয়। চূড়ান্ত করা হয় প্রার্থী তালিকা।
সংবাদ মাধ্যমকে ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ তারেক বিন রশিদ বলেন, বাদীর ছেলে এবং তার ভায়রার ছেলেকে সাউথইস্ট ব্যাংকে চাকরির কথা বলে অভিযুক্তরা ৯ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এ অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে তাদেরকে শনাক্ত করে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি।
তারেক বিন রশিদ বলেন, প্রতারণা চক্রের মূল হোতা সেলিম আহমেদ নামে এক ব্যক্তি। তিনি আগে উত্তরা ব্যাংকে অফিসার পদে চাকরি করতেন। কোনো একটা ঘটনায় তার চাকরি চলে যায়। এরপর থেকে তিনি এ ধরণের প্রতারণায় নেমে পড়েন। তিনি রিসিপশনে এসে কৌশলে চাকরিপ্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নেন। তখন তিনি বলেন যে, তোমার চাকরি হবে, তবে আমাদের ব্যাংকের জন্য কিছু ডোনেশন দিতে হবে। আর এভাবেই টাকাটা হাতিয়ে নেন ওই ব্যক্তি।
প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করে তাদের হাতে তুলে দেয়া হয় ব্যাংকের ভুয়া নিয়োগপত্র। তবে তার আগে নেয়া হয় মোটা অংকের টাকা। পুলিশ বলছে, শুধু ব্যাংকে চাকরি নয়, শিক্ষক নিয়োগ, টোল প্লাজার ইজারাসহ সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ পাইয়ে দেয়ার নামেও প্রতারণা করে চক্রটি।
এ বিষয়ে উপপুলিশ কমিশনার জানান, বিভিন্ন ধরনের বড় বড় কাজের তদবিরের নামে সেলিম আহমেদ প্রতারণা করে থাকেন। যেমন বলা যায় যে, ব্যাংক ঋণের অনুমোদন পাইয়ে দেয়া বা বিভিন্ন টোল কালেকশনের দায়িত্ব পাওয়াসহ এ ধরনের প্রতারণাগুলো তিনি করেন।
মূল হোতা সেলিম আহমেদের বিরুদ্ধে এর আগেও ৬টি মামলা রয়েছে; এর তিনটিতে সাজাপ্রাপ্ত ও বাকি তিনটিতে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি।
মন্তব্য করুন