শনিবার, ২০২৪ সেপ্টেম্বর ২১, ৫ আশ্বিন ১৪৩১
#
জাতীয় জাতীয়

ভারতে গিয়ে বিপাকে শত শত বাংলাদেশি

নিজস্ব প্রতিবেদক | টুয়েন্টিফোর টিভি
প্রকাশিত : সোমবার, ২০২১ মে ১০, ০১:০৩ অপরাহ্ন
#
মোদি সরকারের সৃষ্ট করোনা সংকটে নাস্তানাবুদ ভারত। এই পরিস্থিতিতে সেখানে চিকিৎসা নিতে যাওয়া অনেক বাংলাদেশি পড়েছেন মহাবিপাকে। তেমনই কোভিডে মৃত মায়ের মরদেহ নিয়ে কিভাবে কত দ্রুত দেশে ফিরবেন, মর্যাদার সঙ্গে মাকে দাফন করতে পারবেন তা নিয়ে উদভ্রান্ত হয়ে পড়েছেন নাহিদ নাসের তৃণা, তার দুই বোন, চাচাতো ভাই ও বাবা। দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনে অনাপত্তিপত্রের (এনওসি) জন্য আবেদন করেছেন তারা। কিন্তু রোববার বিকেল পর্যন্ত তা তাদের কাছে আসেনি। শুধু মায়ের মরদেহের ছাড়পত্র হাতে পাওয়া গেছে। মৃত মা শুক্রবার থেকেই হাসপাতালের হিমঘরে। এমনিতে গুলশান আক্তারের এই মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না তার স্বামী ও সন্তানেরা। কিন্তু শোকের চাইতে মরদেহ নিয়ে দেশে ফেরা এবং তার দাফন নিয়ে শোকের চেয়ে উদ্বেগই বেশি ভর করেছে পুরো পরিবারের ওপর। তৃণা বলেন, কখন দেশে যাওয়া যাবে? বিমান নেই, ফলে কিভাবে এতদূর মায়ের মরদেহ নিয়ে যাবো? বেনাপোল সীমান্ত পেরিয়ে যদি ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে হয় কিভাবে তা সম্ভব হবে? মায়ের দাফন কোথায় কিভাবে হবে- এসব চিন্তায় মাথা এলোমেলো হয়ে আছে সবার। নষ্ট হয়ে যাওয়া কিডনি বদলানোর জন্য গত ২৬শে মার্চ দিল্লিতে যান গুলশান আক্তার। সঙ্গে ছিলেন স্বামী, তিন মেয়ে ও তাদের চাচাতো ভাই এবং বাসার গৃহকর্মী। দিল্লির উপকণ্ঠে ফিরোজাবাদ এলাকায় হাসপাতালের কাছে একটি বাসা ভাড়া নেন তারা। দিল্লির কোভিড পরিস্থিতি তখন ভয়াবহ রূপ নিতে শুরু করেছে। তৃণা বলেন, মায়ের ডায়ালাইসিস চলছিল, সপ্তাহে তিনদিন। শহরের কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলাম। হাসপাতালে অক্সিজেন সংকটের খবর শুনছিলাম। চিন্তা ঢুকেছিল মায়ের চিকিৎসা এখন ঠিকমত হবে তো? আশঙ্কা সত্যি রূপ নিল যখন ২১শে এপ্রিল তৃণার বাবা এবং দুই বোনের কোভিড ধরা পড়লো। দুদিন পর ধরা পড়লো তার মায়ের। তার পর একে একে সবার। গুলশান আক্তারের শরীরে অক্সিজেন দ্রুত কমতে থাকায় ২৬ এপ্রিল তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। তিন-চারদিনের মাথায় তিনি অচেতন হয়ে পড়লে আইসিইউতে নিয়ে ভেন্টিলেটরে নেয়া হয়। তারপর শুক্রবার ডাক্তাররা জানান হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তিনি মারা গেছেন। তৃণা বলেন, আমরা মনে করি না চিকিৎসায় কোনো ঘাটতি হয়েছে। কিন্তু হাসপাতালে নেওয়ার পর মা প্রচণ্ড মানসিক চাপে পড়েছিলেন। তাকে আইসোলেশনে রাখা হয়। হিন্দি বা ইংরেজি বলতে পারতেন না। আমাদের সাথেও দেখা হতো না। আমার মনে হয় ঐ চাপ তিনি নিতে পারেননি। গুলশান আরা মাঝে মধ্যে পরিবারকে বলতেন মৃত্যুর পর তাকে যেন নারায়ণগঞ্জের আড়াই হাজারে তার গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়। আমরা তা পারবো কি না জানি না- দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন তৃণা। এনওসি পেলেও ভারতে আটকেপড়া বাংলাদেশিদের আসতে হচ্ছে বেনাপোল স্থলসীমান্ত দিয়ে। ঢোকার পর সেখানে তাদের ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে হচ্ছে। সেই চিন্তাতেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন তৃণা, তার ভাই-বোন ও বাবা। তৃণার পরিবারের মত কম-বেশি একই সংকটে পড়েছেন ভারতে চিকিৎসার জন্য যাওয়া বহু বাংলাদেশি। কোভিডের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় বেড খালি করতে অনেক হাসপাতাল অন্য রোগীদের আগেভাগেই ডিসচার্জ করে দিচ্ছে। ফলে দেশে ফিরতে মরিয়া হয়ে পড়েছেন এরকম কয়েক হাজার বাংলাদেশি। তাদের দাবি, সরকার যেন বিশেষ ফ্লাইটের ব্যবস্থা করে এসব বাংলাদেশিদের জন্য। সূত্র : বিবিসি
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

আরও খবর

Video