নিজস্ব প্রতিবেদক | টুয়েন্টিফোর টিভি প্রকাশিত : বৃহস্পতিবার, ২০২০ ডিসেম্বর ২৪, ০১:০০ অপরাহ্ন
#
প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় করোনা ভ্যাকসিন ক্রয় ও সংরক্ষণ বাবদ মোট ৪ হাজার ৩১৪ কোটি ৪৯ লাখ ১৭ হাজার টাকা সংস্থান রাখার প্রস্তাব করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কিন্তু প্রস্তাবে ভ্যাকসিনের সংখ্যা ও এককমূল্য উল্লেখ করা হয়নি।
তবে ভ্যাকসিন কেনা বাবদ ব্যয় কমিয়ে যৌক্তিক পর্যায়ে নির্ধারণ করার জন্যস্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে পরামর্শ দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগ। কোন দেশ থেকে কী উপায়ে কতদিনের মধ্যে ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে, তা কোন নিয়ম অনুসরণ করে প্রদান করা হবে, সে বিষয়ে একটি সমন্বিত ও সার্বিক ব্যবস্থাপনা সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনায় (আরডিপিপি) সংযুক্ত করা জরুরি বলে মনে করে কমিশন।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি-ডিসেম্বরের মধ্যে ভ্যাকসিন পাওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে পরিকল্পনা কমিশনকে অবগত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তবে কোভ্যাক্স কর্তৃক নির্ধারিত কোন দেশ থেকে ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হবে তা এখনো জানা যায়নি।
ভ্যাকসিন কেনা ও সরবরাহে মোট ৪ হাজার ৩১৪ কোটি ৪৯ লাখ ১৭ হাজার টাকার প্রস্তাব করার যৌক্তিকতা জানতে চেয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, ভ্যাকসিন প্রদানের অনুমোদিত নীতিমালা সর্বসাধারণের বোধগম্যভাবে সারসংক্ষেপ আকারে প্রণয়ন এবং ভ্যাকসিনেশন প্রক্রিয়ার একটি সহজবোধ্য ফ্লো-চার্ট ডিপিপিতে সংযুক্ত করতে হবে। প্রতিটা উপজেলায় ভ্যাকসিন প্রদানের বিষয়ে প্রচারের জন্য ব্যানার, মাইকিং ও প্রকাশনা খাতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ রাখতে নির্দেশ দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।
প্রকল্পের আওতায় ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকার জন্য একটি করে মোট দুটি মোবাইল ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট ভ্যানের সংস্থান রাখতে বলা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দ্বৈততা পরিহারপূর্বক গঠিত ১০ শয্যার ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট এবং ১০টি জেলায় মেডিকেল বর্জ্য ব্যাবস্থপনা প্ল্যান্ট স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।
স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের আওতায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাবিত ‘কোভিড -১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডামিক প্রিপারেডেন্সে প্রথম সংশোধিত প্রকল্পের আওতায় এমন উদ্যোগ নেওয়া হবে। পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে ১৭ ডিসেম্বর প্রকল্পের ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ভ্যাক্সিন কেনা বাবদ ব্যয়ের যৌক্তিক কারণ জানতে চাওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে যৌক্তিক কারণ পাওয়ার পরেই প্রকল্পটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য একনেক সভায় উপস্থাপন করা হবে বলে নিশ্চিত করেছে কমিশন।
পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) আবুল কালাম আজাদ বলেন, ভ্যাকসিন ও সরবরাহ বাবদ ৪ হাজার ৩১৪ কোটি টাকার প্রস্তাব করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আমরা ব্যয়ের যৌক্তিকতা জানতে চেয়েছি। ভ্যাকসিন কেনা একেবারেই নতুন একটা উদ্যোগ। কিসের ভিত্তিতে কোন গ্রাউন্ডে ব্যয় চাওয়া হলো এটা জানতে চাওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যদি যৌক্তিক গ্রাউন্ড দেখাতে পারে দরকার হয় বরাদ্দ আরও বাড়িয়ে দেওয়া হবে।
সচিব আরও বলেন, প্রকল্পের আওতায় সারাদেশে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। তবে এখনও সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়নি। ভ্যাকসিনের দাম কেমন হবে এটাও জানি না। আমরা আন্দাজের ওপর প্রকল্প অনুমোদন দিতে পারি না। প্রকল্পের আওতায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে কিছু নোট দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর সমাধান হলেই চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য একনেক সভায় উপস্থাপন করা হবে।
সূত্র জানায়, করোনা মোকাবেলায় বিশ্বব্যাংকের জরুরি ঋণ ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ১৮ এপ্রিল প্রকল্পটি অনুমোদন হয়েছিল। সেই সময় প্রকল্পটি খুব জরুরি বিবেচনায় দ্রুত অনুমোদনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সমগ্র বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবে আক্রান্ত ও মৃত্যু ক্রমশঃ বাড়তে থাকায় কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (এআইআইবি), বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ১০ কোটি ডলারের কো লেন্ডিং করতে সম্মত হয়েছে হয়েছে, যা এ প্রকল্পের মাধ্যমে ব্যয় করা হবে। তাছাড়া প্রকল্প সংশোধনের প্রধান কারণ হিসেবে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ক্রয় বাবদ কার্যক্রম অন্তর্ভূক্ত করণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ হাজার ৮১৫ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ২১২ কোটি ৪৩ লাখ ৫৯ এবং বিশ্বব্যাংক ও এআইআইবি ঋণ ৬ হাজার ৬০৩ কোটি ২০ লাখ টাকা। এপ্রিল ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য প্রথম সংশোধন করা হবে। তবে ভ্যাকসিন কেনা বাবদ ব্যয় পুনরায় সংশোধন করা হবে বলে জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
ভ্যাকসিনের দাম নির্ধারণ প্রসঙ্গে প্রকল্পের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, প্রকল্পের কিছু সংশোধন দেওয়া হয়েছে পরিকল্পনা কমিশন থেকে। এটা এখন রিভাইজড করা হবে। এখনো ফাইনাল হয়নি। সব কিছু ঠিকঠাক করে পরিকল্পনা কমিশনে আবারও পাঠানো হবে, এরপরই একনেক সভায় প্রকল্পটি তুলবে পরিকল্পনা কমিশন।
মন্তব্য করুন