রবিবার, ২০২৪ সেপ্টেম্বর ২২, ৭ আশ্বিন ১৪৩১
#
মহানগর মহানগর

খুনিদের নাম বলে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন নিরাপত্তাকর্মী

নিজস্ব প্রতিবেদক | টুয়েন্টিফোর টিভি
প্রকাশিত : রবিবার, ২০২৩ মে ২৮, ০৪:০২ অপরাহ্ন
#

চট্টগ্রাম নগরের পাহাড়তলী থানাধীন নয়াবাজার এলাকায় চাঁদাবাজিতে বাধা দেওয়ায় ছুরিকাঘাতে মোহাম্মদ আজাদ (৩০) নামে এক নিরাপত্তাকর্মীকে দুর্বৃত্তরা হত্যা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।


মৃত্যুর আগে স্বজনদের কাছে খুনিদের নাম জানাতে সক্ষম হয়েছেন নিহত আজাদ। নামগুলো হচ্ছে, আবুল হাসনাত রাজু প্রকাশ রাজু, ফয়সাল ও ওসমান। তারা সবাই কাউন্সিলর আব্দুস সবুর লিটনের ছোট ভাই আব্দুল মান্নান খোকনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

আজ রবিবার (২৮ মে) ভোররাত চারটা ৪০ মিনিটে পাহাড়তলীর নতুনবাজার বিশ্ব রোডের মুখ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত মোহাম্মদ আজাদ ওই এলাকার নাজিরবাড়ির লাডু ইব্রাহিমের ছেলে। তার দুটি শিশু সন্তান রয়েছে।

জানা যায়, আজ ভোররাত ৪টা ৪০ মিনিটের সময় ফজরের নামাজ পড়তে মসজিদে যাচ্ছিলেন মোহাম্মদ আজাদ। এসময় তার বাড়ির সামনে পথরোধ করে একদল দুর্বৃত্ত। একপর্যায়ে তারা তাকে পেটে ছুরিকাঘাত করলে নাড়িভুড়ি বেরিয়ে আসে। পরে ঘাড়ে, হাতে ও মাথায় ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।

আজাদের চিৎকার শুনে তার স্বজনরা বাড়ি থেকে দৌড়ে আসেন। এসময় দেখতে পান আজাদ রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিয়ে পড়ে আছেন। পরে তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।

এর আগে আজাদকে হাসপাতালে নেয়ার পথে মুমূর্ষু অবস্থায় আজাদ তার খুনিদের নাম জানিয়ে গেছেন। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রবিবার সকাল থেকে ভাইরাল হয়েছে।

ওই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, আজাদের স্বজনরা তাকে জিজ্ঞেস করছেন কারা তাকে ছুরিকাঘাত করেছে। উত্তরে আজাদ জানিয়েছেন রাজু, ওসমান ও ফয়সাল তাকে ছুরিকাঘাত করেছে।

এদিকে নিহত আজাদের পরিবারের অভিযোগ, কাউন্সিলর আব্দুস সবুর লিটনের ছোট ভাই আব্দুল মান্নান খোকনের নেতৃত্বেই চাঁদাবাজি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধ করে বেড়ায় আবুল হাসনাত রাজু, ফয়সাল ও ওসমানরা। তারা দলবদ্ধভাবে বিভিন্ন দোকানে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, জুয়া ও মাদকের কারবার করে আসছে দীর্ঘ দিন ধরে।


স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আজাদ একজন নিরপরাধ, সহজ-সরল, খেটে-খাওয়া মানুষ। নতুন বাজার এলাকায় গাড়ির গ্যারেজের পাহারাদার হিসেবে কাজ করতেন৷ মাঝেমধ্যে বড়শি শিকারীদের সঙ্গে যেতেন। শ্রমের বিনিময়ে সামান্য টাকা উপার্জন করে পরিবার চালাতেন। হত্যাকারীরা আগে থেকেই আজাদকে চিনতেন। এর আগে তাদের সঙ্গে চাঁদা নিয়ে বাড়াবাড়ি হয়েছিল। হত্যাকারী ও নিহত ব্যক্তি একই এলাকার বাসিন্দা।

নিহত মোহাম্মদ আজাদের বড় ভাই মতিউর রহমান একুশে পত্রিকাকে বলেন, আমার ভাইকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেছে রাজু, ফয়সাল ও ওসমানসহ তাদের সাঙ্গপাঙ্গরা। তারা সবাই কাউন্সিলর আব্দুস সবুর লিটনের ভাই খোকনের অনুসারী। আমরা ভাই হত্যার বিচার চাই। শুধুমাত্র চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করায় তারা আমার ভাইকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে।

তিনি আরও বলেন, কয়েকদিন আগে ফয়সাল, রাজু ও ওসমানরা তাদের গ্রুপ নিয়ে ওই এলাকায় কয়েকটি দোকান থেকে চাঁদা দাবি করে আসছিল। তাদের চাঁদাবাজিতে বাধা দেয় আমার ভাই আজাদ। আর এ ঘটনার জের ধরেই তারা ভোররাতে ফজরের নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় আমার ভাই আজাদকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নগরীর ২৫ নম্বর রামপুরা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আব্দুস সবুর লিটন একুশে পত্রিকাকে বলেন, আমি এইমাত্র ভারত থেকে এসে নামলাম। এ বিষয়ে আমি জানি না।

একই বিষয়ে কাউন্সিলর লিটনের ছোট ভাই খোকনকে দুটি নম্বরে বেশ কয়েকবার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

পাহাড়তলী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রোজিনা আক্তার একুশে পত্রিকাকে বলেন, মৃত্যুর আগে ভিকটিম খুনিদের নাম বলে গেছেন৷ সে হিসেবে আমরা ধরে নিয়েছি এরাই খুনি। ভিকটিমের দেয়া তথ্যমতে রাজু, তার ভাই রাজীব, ওসমান ও ফয়সাল এ খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে। তাদেরকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

তিনি আরও বলেন, নিহত মোহাম্মদ আজাদের মরদেহ বর্তমানে চমেক হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

আরও খবর

Video