শনিবার, ২০২৪ সেপ্টেম্বর ২১, ৬ আশ্বিন ১৪৩১
#
মহানগর মহানগর

জাবেদ চৌধুরী গংয়ের মানসিক নির্যাতনে ব্যাংক কর্মকর্তার আত্মহত্যা!

নিজস্ব প্রতিবেদক | টুয়েন্টিফোর টিভি
প্রকাশিত : বুধবার, ২০২১ এপ্রিল ১৪, ০৬:১৩ অপরাহ্ন
#
জাবেদ ইকবাল ও জাতীয় সংসদের আলোচিত হুইপ শামসুল হক চৌধুরীর পুত্র নাজমুল হক চৌধুরী ওরফে শারুন চৌধুরী গংয়ের মানসিক নির্যাতনে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন ব্যাংক কর্মকর্তা আবদুল মোরশেদ চৌধুরী। সংশ্লিষ্টদের বক্তব্যে বিষয়টি উঠে এসেছে। পুলিশ বলছে, পুরো ঘটনার অনুসন্ধান চলছে। ওই ব্যাংক কর্মকর্তা কেন আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন- তার অনুসন্ধান চলছে। ঘটনার নেপথ্যে যারা জড়িত, তাদের ব্যাপারেও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। গত বুধবার (৭ এপ্রিল) ভোরে নগরের পাঁচলাইশ থানাধীন মিমি সুপার মার্কেট সংলগ্ন হিলভিউ আবাসিক এলাকায় নাহার ভবনের ছয়তলার একটি ফ্ল্যাট থেকে ওই ব্যাংক কর্মকর্তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি পূর্ব মাদারবাড়ির বাসিন্দা আবদুল মোমিন চৌধুরীর ছেলে। এ ঘটনায় রোববার (১১ এপ্রিল) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ব্যাংক কর্মকর্তার আত্মহননের নেপথ্যে দায়ীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন আবদুল মোরশেদ চৌধুরীর স্ত্রী ইশরাত জাহান চৌধুরী। এসময় তিনি অভিযোগ করেন, তার স্বামী ব্যবসার জন্য জাবেদ ইকবাল চৌধুরী, পারভেজ ইকবাল চৌধুরী এবং সৈয়দ সাকিব নাঈম উদ্দিনের কাছ থেকে বিভিন্ন দফায় ২৫ কোটি টাকা ধার নেন। বিপরীতে তাদের কাছে লাভসহ ৩৮ কোটি টাকা পরিশোধ করেন। কিন্তু তারা বেশি লভ্যাংশের দাবিতে স্বামীর ওপর মানসিক চাপ, রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। তাদের অনৈতিক চাপের কারণে তার স্বামী আত্মহত্যা করতে বাধ্য হন। যার প্রমাণ মিলেছে রেখে যাওয়া সুইসাইড নোটে। এ ঘটনায় পাঁচলাইশ থানায় যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদুল হক চৌধুরী রাসেল, চিটাগাং চেম্বারের সাবেক দুই পরিচালক জাবেদ ইকবাল, তার ভাই পারভেজ ইকবাল ও নাইম উদ্দিন সাকিব নামে চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে মামলা করা হলেও পুলিশ কোনো আসামিকে গ্রেফতার করতে পারেনি। এখন আসামিপক্ষ উল্টো মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছে। অভিযোগে জানা যায়, ২০১৯ সালের ২৯ মে হুইপপুত্র শারুন চৌধুরীকে সঙ্গে নিয়ে দুটি গাড়িতে করে আসামিরা ১০-১২ জন যুবকসহ ব্যাংকার মোরশেদের বাসায় আসেন। পারভেজ ইকবাল দলের অন্যদের নিয়ে লিফটে ওপরে উঠে বাসার দরজা ধাক্কাতে থাকেন। এ সময় দরজা খুলতে না চাইলে লাথি মারতে থাকেন তারা। নিজের ও শিশুকন্যার নিরাপত্তার জন্য দরজা খুলতে না চাইলেও দরজার অন্য প্রান্ত থেকে হুমকি দিয়ে পারভেজ ইকবাল দরজা খুলতে চাপ দিতে থাকেন। উত্তেজিত পারভেজ ব্যাংকারের স্ত্রীর উদ্দেশে বলতে থাকেন, ‘আমরা আপনাকে আটকে রেখে ওকে (মোরশেদ) আনবো। ’ এ সময় ভবনটির নিচে নাম্বার প্লেটবিহীন গাড়িতে হুইপপুত্র শারুন চৌধুরী ও বাচ্চু বসা ছিলেন বলে জানান ইশরাত জাহান চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালের মে মাসে আমার স্বামীকে পাঁচলাইশের এমএম টাওয়ারে নিয়ে যায় সৈয়দ সাকিন সাঈম উদ্দীন। সেখানে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে শারীরিক নির্যাতন, আমাকে বেঁধে ১২ কোটি টাকা অতিরিক্ত দাবি করে জোরপূর্বক স্ট্যাম্পে সই নেওয়া হয়েছিল। আমার ও মেয়ের পাসপোর্ট নিয়ে নেওয়া হয়। ২০১৯ সালে বাসায় হামলার ব্যাপারে মামলা করা হয়। বাসায় আক্রমণ, মেয়েকে অপহরণ, আমার স্বামীকে খুন করবে বলে অনেকবার প্রকাশ্যে হুমকি দেওয়া হয়। আপোস ও আলোচনার কথা বলে গত ২০১৯ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর সাকিব অস্ত্রের মুখে ৮৪টি চেকে জোরপূর্বক সই নিয়ে নেয়। আমাদের ছয়টি অলিখিত ও স্বাক্ষরিত নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প রয়েছে তাদের কাছে। ’ টাকা লেনদেন সংক্রান্ত বিষয়ে হুইপপুত্র শারুনের সম্পৃক্ততা বিষয়ে ইশরাত বলেন, ‘শারুনের সঙ্গে সরাসরি আমার স্বামীর কোনো লেনদেন ছিল না। এরপরও শারুন চৌধুরী কেন সক্রিয় হন, এ ব্যাপারে নিয়ে জানতে মোরশেদই একদিন প্রশ্ন করেছিলেন। জবাবে শারুন বলেছিলেন, “সরাসরি লেনদেন আমি করিনি। পারভেজের মাধ্যমে বিনিয়োগ করেছি”। ’ তবে এ বিনিয়োগ অবৈধ কোনো ব্যবসার জন্য কী-না তা অস্পষ্টই রয়ে গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিকভাবেও চাপ দেওয়া হয়। নানামুখী চাপে ওই ব্যাংকার বাধ্য হয়ে আত্মহত্যা করেন। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) বিজয় বসাক জানান, শারুন চৌধুরী জামানত বাবদ চেক গ্রহণের বিপরীতে ব্যবসায় পারভেজের মাধ্যমে বিনিয়োগ করেন এবং পারভেজকে তার পাওনা টাকার জন্য চাপ দেন। যেহেতু মোরশেদের কাছে সরাসরি পাওনাদার নন, সেহেতু এর আগে হওয়া সমঝোতা বৈঠকে শারুন চৌধুরীকে আসতে দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, ব্যাংক কর্মকর্তা মোরশেদ ও তার স্ত্রী বাসায় হামলার ঘটনায় জিডি করার পরই উভয়পক্ষের একাধিক সমঝোতা বৈঠক হয়। সমঝোতা অনুযায়ী দেনা পরিশোধ প্রক্রিয়া চলছিলো। ব্যাংকার মোরশেদ চৌধুরীর সঙ্গে বিনিয়োগ, টাকা উদ্ধার প্রক্রিয়ায় হুইপ পুত্র শারুনের এক সমঝোতা বৈঠকে উপস্থিত থাকার কথা জানান আত্মহননকারীর নিকটাত্মীয় ব্যবসায়ী আজম খান। তবে শারুন চৌধুরীর দাবি করেন, তিনি মোরশেদ চৌধুরীর বাসায় যাননি। যে গাড়িতে তিনি ছিলেন বলে দাবি করা হচ্ছে সেই গাড়ি তার নয়। যে ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে সেটি ২০২০ সালে ধারণ করা। আর ঘটনার সময় বলা হচ্ছে ২০১৯ সাল। তিনি বলেন, ‘আমার সঙ্গে মোরশেদ চৌধুরীর একবার মাত্র ১০ মিনিটের জন্য দেখা হয়েছিল পাঁচলাইশ এলাকার আজম সাহেবের বাসায়। পারভেজ ইকবাল ও আমাদের বাসা হালিশহর এলাকায়। একই এলাকায় বাস করার সুবাদে আমার পূর্বপরিচয় আছে। সেই কারণেই আজম সাহেবের বাসায় গিয়েছিলাম। এর মধ্যে মোরশেদ চৌধুরীর সঙ্গে আজম সাহেবের বাসায় দেখা হয়। সেখানে পারভেজের সঙ্গে ব্যবসায়িক লেনদেন নিয়ে কথা হচ্ছিলো। তা শুনে আমি আর বাচ্চু ভাই চলে এসেছি। এরপর আর কখনোই দেখা হয়নি। ’ করোনা ভাইরাসের প্রকোপের আগে দেশজুড়ে জুয়া, ক্যাসিনো বন্ধে শুরু হওয়া অভিযান সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য করে আলোচনার জন্ম দেন শারুনের বাবা শামসুল হক চৌধুরী। তার বিরুদ্ধে আবাহনী ক্লাবে জুয়ার আসর বসিয়ে ১৮০ কোটি টাকা আয়ের অভিযোগ তোলেন এক পুলিশ কর্মকর্তা। এ কারণে তাকে অদৃশ্য শক্তির চাপে বরখাস্ত করা হয়। বাবার পক্ষ নিয়ে এ খবরও দাম্ভিকতার সঙ্গে প্রচার করতে দেখা গেছে শারুনকে। হুইপবিরোধী জনমত ঠেকাতে ওইসময় চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে পটিয়ার কতিপয় নেতাকর্মীদের নিয়ে শোডাউন দেন শামসুল ও শারুন।   ইশরাত জাহান চৌধুরী বলেন, ‘মিথ্যা পাওনার দাবিতে নাইম উদ্দিন সাকিব ও আমার স্বামীর বিরুদ্ধে আটটি মামলা করেছিল। অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় সব মামলায় আমি খালাস পেয়েছি। আমার স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগও খালাসের প্রক্রিয়ায় ছিল। সীতাকুণ্ডের এমপি মধ্যস্থতার চেষ্টা করলেও জাবেদ ইকবালের ভাই পারভেজের অনাগ্রহে সেই উদ্যোগ ভেস্তে যায়। ইশরাত জাহানের আত্মীয় আজম খান বলেন, ‘আমি মধ্যস্থতা করার পর থেকে সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় কোটি টাকা সুদসহ পরিশোধ হয়েছে। এরপর ৭ কোটি টাকা দাবি করছিলেন পারভেজ। মোরশেদ রাজিও ছিল। মৃত্যুর আগে ৭ এপ্রিল এক দফায় দুই কোটি টাকা লেনদেনের কথা হয়েছিল। এই টাকা ব্যাংকে ট্রান্সফার দেওয়ার বিষয়টিও নিশ্চিত করেছিলেন মোরশেদ’। পাঁচলাইশ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল কাশেম ভূঁইয়া বলেন, আত্মহননকারী ব্যাংক কর্মকর্তার স্ত্রীর দায়ের করা মামলাটি নগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নগর গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, একজন পুলিশ পরিদর্শককে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। মামলায় অভিযুক্ত আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তদন্তে আর কারও সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে। সূত্র: বাংলানিউজ।
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

আরও খবর

Video