শনিবার, ২০২৪ সেপ্টেম্বর ২১, ৫ আশ্বিন ১৪৩১
#
মহানগর মহানগর

মিতু হত্যাকাণ্ড: নাতি-নাতনিকে জিম্মায় চাচ্ছেন নানা মোশাররফ

নিজস্ব প্রতিবেদক | টুয়েন্টিফোর টিভি
প্রকাশিত : রবিবার, ২০২১ মে ১৬, ১২:১৭ অপরাহ্ন
#
২০১৬ সালের ৫ জুন ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ের কাছে গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন সে সময়ের আলোচিত পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু। পাঁচ বছর পরে এসে ওই হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গত বুধবার বাবুলকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। দুই নাতি-নাতনিকে নিজেদের জিম্মায় রাখতে চান পুলিশের সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন। তাদেরকে জিম্মায় চেয়ে রোববার (১৬ মে) আদালতে আবেদন করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। পাঁচ বছর আগে খুন হন এই শিশু দু’টির মা মাহমুদা খানম (মিতু)। সেই হত্যাকাণ্ডের মামলায় মিতুর স্বামী সাবেক এসপি বাবুল আক্তারকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। শনিবার (১৫ মে) দিনগত রাতে মোশাররফ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মা নেই। বাবা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার। তাদের দেখাশোনার জন্য বিশ্বস্ত কেউ নেই। আমরা নানা-নানি তাদের দেখাশোনা করব। মা মারা যাওয়ার পর তারা আমাদের বাসায় ছিল। পরে বাবুল তাদের নিয়ে যায়।’ মিতু যখন খুন হন, সে সময় তার সঙ্গে থাকা ছেলেটির বয়স এখন ১২ বছর। সে সময় সাত বছরের ওই ছেলে মায়ের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাকে রক্ষার চেষ্টা করে। তখন ‘হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া’ কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুছা তাকে ধরে রেখেছিলেন বলে গ্রেপ্তার দুই আসামি ওয়াসিম ও আনোয়ার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ঘটনাটি উঠে আসে। স্ত্রী খুন হওয়ার কিছুদিন আগেও চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার ছিলেন বাবুল আক্তার। সে সময় কামরুল ইসলাম শিকদার তার সোর্স ছিলেন বলে তদন্তকারীদের ভাষ্য। মিতুর মা সাহেদা মোশাররফ বলেন, ‘আমার মেয়ের দুই সন্তানকে আমরা চোখের দেখাটাও দেখতে পাই না। ফোনেও কথা বলতে পারি না। অথচ মিতু বেঁচে থাকতে এই নাতি-নাতনির সঙ্গে রোজ আমার ফোনে কথা হতো। এখন নাতি-নাতনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। তাদের আমাদের কাছে রাখতে চাই।’ মিতু খুন হওয়ার পর বাবুল আক্তার বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেছিলেন। দুই আসামির জবানবন্দি ও গোয়েন্দা পুলিশের তদন্তে উঠে আসে কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুছার নেতৃত্বে সাত থেকে ৮ জন মিতুকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, মুছাকে পাওয়া গেলে ঘটনার রহস্য উদ্‌ঘাটিত হবে। অপর দিকে মুছার স্ত্রীর দাবি, তার স্বামীকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। এরপর থেকে খুঁজে পাচ্ছেন না। মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমার নাতি ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। তারা এখন কোথায় আছে জানি না। তাদের নিরাপত্তা খুবই প্রয়োজন। আমার কাছে থাকলে তারা নিরাপদে থাকবে।’ মিতুর এই ছেলে এবং ১০ বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। মিতু নিহত হওয়ার পর প্রথম ছয় মাস বাবুল আক্তার দুই সন্তানকে নিয়ে ঢাকার মেরাদিয়ায় শ্বশুরবাড়িতে ছিলেন। পরে ভাড়া বাসায় চলে যান। সঙ্গে নিয়ে যান দুই সন্তানকেও। গত সাড়ে তিন বছরে মিতুর দুই সন্তানের সঙ্গে নানা-নানির দেখাই হয়নি। এদিকে মিতু খুনের কয়েক মাসের মধ্যেই পুলিশ সুপারের চাকরি ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন বাবুল আক্তার। পরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিয়েছিলেন। ওই চাকরি থেকে বিদায়ের পর কিছুদিন আগে ব্যবসা শুরু করেছিলেন বলেও তার পরিচিতজনেরা জানিয়েছেন। মিতু হত্যাকাণ্ডের ৫ বছর পর গত বুধবার বাবুল আক্তারের দায়ের করা মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় পিবিআই। ওই দিনই বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে হত্যা মামলা করেন মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন। সেই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে বাবুল এখন ৫ দিনের রিমান্ডে পুলিশি হেফাজতে আছেন। কক্সবাজারে এক নারীর সঙ্গে সম্পর্কের কারণে তিনি মিতুকে খুন করিয়েছেন বলে মামলার এজাহারে বলা হয়েছে।
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

আরও খবর

Video