শনিবার, ২০২৫ মে ০৩, ১৯ বৈশাখ ১৪৩২
#
মহানগর মহানগর

দম্পতি ‘হত্যা’

ম্যাক্স কনস্ট্রাকশনের চালককে রাজবাড়ি থেকে ধরে এনেছে র‌্যাব

নিজস্ব প্রতিবেদক | টুয়েন্টিফোর টিভি
প্রকাশিত : সোমবার, ২০২২ এপ্রিল ১১, ০২:৫৮ অপরাহ্ন
#

স্কুল শিক্ষিকা সখিনা ফাতেমী ও ইঞ্জিনিয়ার ইকবাল উদ্দীন চৌধুরী দম্পতিকে চাপা দেওয়া ম্যাক্স কনস্ট্রাকশন কোম্পানির মিক্সারবাহী গাড়ির চালককে গত পাঁচ দিনে পুলিশ ধরতে না পারলেও ঠিকই র‌্যাব তাকে রাজবাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করেছে। যদিও আলোচিত এই দুর্ঘটনার পর থেকে কোতোয়ালী থানার ওসি বলে আসছিলেন— ‘অগ্রগতি আছে তবে তা বলতে পারছি না। চালক গ্রেপ্তার হলে জানতে পারবেন।’ তবে গ্রেপ্তারের কথাটি পুলিশ জানাতে পারেনি জানিয়েছে র‌্যাব। 

পুলিশ তার অগ্রগতি নিয়ে ‘বসে’ থাকলেও ঘাতক চালক মো. আলী হোসেনকে (৪৯) র‌্যাব-৭ গত ৯ এপ্রিল রাতে রাজবাড়ি জেলার বালিয়াকান্দি থানার জামালপুর ইউনিয়নের ডাঙ্গাহাতিমোহন গ্রামের একটি বসতঘরে আত্মগোপন থাকা অবস্থায় তাকে গ্রেপ্তার করে।

সোমবার দুপুরে র‌্যাব-৭ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) মো.নুরুল আবছার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 


তিনি জানান, গত ৬ এপ্রিল বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে চট্টগ্রাম নগরের লালখান বাজার ফ্লাইওভারের মুখে ম্যাক্স কনস্ট্রাকশন কোম্পানির মিক্সারবাহী ট্রাকটি মোটর সাইকেল আরোহী স্বামী-স্ত্রী দুজনের মাথা থেঁতলে দিলে ঘটনাস্থলেই তারা প্রাণ হারান। এরপরের দিন সকালে নিহত ইকবালের বড় ভাই চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের অর্থোপেডিকস রেজিস্ট্রার ডা. তসলিম চৌধুরী অজ্ঞাত চালককে আসামি করে কোতোয়ালী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। দুর্ঘটনার পরপরই ঘাতক চালক আলী হোসেন নিজ জেলা মাগুরা না গিয়ে রাজবাড়ি জেলায় আত্মগোপন করেন। র‌্যাব তথ্য প্রযুক্তির সহযোগিতায় ৯ এপ্রিল রাতে রাজবাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। 

নিহত সখিনা ফাতেমী নগরের মোস্তফা-হাকিম কে জি অ্যান্ড হাইস্কুলের শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত ছিলেন আর স্বামী ইকবাল উদ্দিন চৌধুরী জ্যাক মেশিনারি ইম্পোট এন্ড এক্সপোর্টের সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তাঁদের বাসা নগরের আকবর শাহ থানার সিডিএ ফিরোজ শাহ কলোনিতে। গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের ধুম ইউনিয়নে। 


পুলিশ ও স্বজনরা জানান, তিন মাসের গর্ভবতী সখিনা ফাতেমী রুটিন চেকআপের জন্য চকবাজারের একটি ক্লিনিকে ডা. রোকেয়া বেগমের কাছে গিয়েছিলেন। ডাক্তারখানা থেকে বের হওয়ার পর যখন তার স্বামী ইকবালের মোটরসাইকেলে উঠেন তখন ইফতারের বাকি ছিল আর ৩০ মিনিট। চকবাজার থেকে গোল পাহাড় মোড়-জিইসি মোড় হয়ে জাকির হোসেন রোড ধরে ফিরোজ শাহ কলোনির বাসায় ফেরার কথা ছিল তাদের। কিন্তু নাসিরাবাদ ওমেন কলেজ মোড়ের যানজটের মুখোমুখি না হতেই বাইক চালিয়ে টাইগার পাস হয়ে আমবাগান দিয়ে বাসায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ইকবাল। 


সে হিসেবে তারা ইস্পাহানি মোড় হয়ে টাইগার পাসের দিকে আসতেই পিটস্টপ রেস্টুরেন্টের ১০ গজ আগে দ্রুত গতিতে আসা ম্যাক্স কনস্ট্রাকশন কোম্পানির সিমেন্ট মিক্সারবাহী ট্রাক উঠিয়ে দিল প্রকৌশলী ও শিক্ষিকা দম্পতির ওপর। মুহুর্তের মধ্যেই মিক্সারবাহী গাড়ি ইকবাল ও সখিনার মাথার উপর সামনের চাকা উঠিয়ে দেয়। এতেও চালকের মন ভরেনি। পরবর্তীতে দ্রুত সটকে পড়ার জন্য বাম পাশ দিয়ে এসে গাড়ির পিছনের চাকা দিয়ে তাদের মাথার পর পাও থেঁতলে দেয়। এরপর ওই গাড়ির চালক লালখান বাজার মোড় থেকে একটু সামনে গিয়ে গাড়ি থেকে নেমে পালিয়ে যায়‌।

গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে চালক আলী হোসেন র‌্যাব জানিয়েছেন, তিনি দীর্ঘ ১১ বছর ধরে ম্যাক্স কনস্ট্রাকশন কোম্পানিতে চালক হিসেবে কর্মরত আছেন। গত এপ্রিল মাসে চট্টগ্রাম দামপাড়া ওয়াসানস্থ ম্যাক্স কনস্ট্রাকশনের প্রজেক্ট এরিয়াতে যোগদান করে ও সপরিবারে বসবাস শুরু করেন। তিনি ২০০৯ সালে বিআরটিএ থেকে ভারী যানবাহনের লাইসেন্স পায় এবং গাড়ি চালনা শুরু করেন। ম্যাক্স কনস্ট্রাকশনের নাম্বার বিহীন ট্রাকটি (টিএম-৮৯৬) তিনিই দুর্ঘটনার সময় চালিয়েছিলেন এবং তার সহকারী হিসেবে ছিলেন মিঠু খান। মূলত মো. আলী হোসেন ওই ট্রাকটি নিয়ে আকতারুজ্জামান ফ্লাইওভার দিয়ে ম্যাক্স কনস্ট্রাকশন কোম্পানিতে যাচ্ছিলেন। পরবর্তীতে তার নিয়ন্ত্রনহীন ও বেপরোয়াভাবে গড়ি চালানোর জন্য রাস্তায় ট্রাফিক জ্যামে দাড়ানো মোটর সাইকেলসহ ইঞ্জিনিয়ার ইকবাল উদ্দিন চৌধুরী (৪৬) ও তার স্ত্রী সখিনা ফাতেমীকে (৩৫) ধাক্কা দিয়ে রাস্তায় ফেলে দিয়ে তাদের উপর দ্রুত গতিতে ট্রাক চালিয়ে দেয়। ফলশ্রুতিতে ঘটনাস্থলে তারা মারা যান এবং চালক ও হেলপার গাড়িটি অরক্ষিত অবস্থায় রেখে পালিয়ে যান। 

র‌্যাব আরও জানিয়েছে, ম্যাক্স কনস্ট্রাকশনের গাড়িতে চালক ও সহকারী থাকলেও গাড়িটি ছিল অত্যন্ত বেপরোয়া গতির এবং নিয়ন্ত্রণহীন। দুর্ঘটনার সময় গাড়িটি (আকতারুজ্জামন ফ্লাইওভার থেকে লালখান বাজারের দিকে আসতে) রাস্তার বাম পাশে থাকলেও সেটি নিয়ন্ত্রণহীনভাবে ডান পাশে চলে যায়। সড়কপথে ড্রাইভারদের এই ধরনের অসর্তকতা অনভিজ্ঞতা, অবহেলিত ও খামখেয়ালিপূর্ণ আচরণ প্রতিনিয়ত কেড়ে নিচ্ছে অসংখ্য প্রাণ। 

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

আরও খবর

Video