ভোজনবিলাসী বাঙালির অতিথি আপ্যায়নের তালিকায় এক সময় থাকত নানা পদের মিষ্টি। এর মধ্যে সেমাইয়ের কদর ছিল সবচেয়ে বেশি। গ্রামে বা শহরে কোনো বাড়িতে বেড়াতে গেলে সেমাইয়ের বাটি আসত সবার আগে।
এমনকি সেমাই ছাড়া ঈদ যেন কল্পনাও করা যেত না। নানা কারণে সেমাইয়ের সেই কদর আর নেই।
বিরিয়ানি, ফালুদা কিংবা নানা রকম পিঠা পায়েসের ভিড়ে সেমাই যেন বড্ড সেকেলে। টেবিলে সাজানো থাকলেও তেমন আগ্রহ নিয়ে স্বাদ নেওয়া হয় না খাবারটির। তাই সেমাই উৎপাদনেও পড়েছে ভাটা।
তবে এ পণ্যটির গ্রাহকের আগ্রহ হারানো পিছনে অনেকটাই দায়ী যত্রতত্র গড়ে ওঠা কারখানায় মানহীন উৎপাদন। তবে এখনও আধুনিক পদ্ধতিতে তৈরি সেমাইয়ের ওপর আস্থা রয়েছে ক্রেতাদের।
নগরের চাকতাই-রাজাখালী এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, খোলা সেমাই তৈরি করে শুকাতে ব্যস্ত শ্রমিকরা। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খোলা স্থানে এই সেমাই শুকানো হচ্ছে।
সেমাই উৎপাদনকারী ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কারখানাগুলোতে ঈদের দিনের চাহিদা অনুযায়ী সেমাই তৈরি করা হয়। এসব সেমাই প্যাকেটজাত করে বিভিন্ন কোম্পানির কাছে হস্তান্তর করা হয়। একসময় চাক্তাই এলাকায় খোলা সেমাই তৈরি করে বিভিন্ন উপজেলায় সরবরাহ করা হতো। তবে এখন চাহিদা না থাকায় লাচ্ছা সেমাই বেশি তৈরি হচ্ছে। ৪-৫ বছর আগেও চাক্তাই এলাকায় ৪০টি সেমাইয়ের কারখানা ছিল। এ পর্যন্ত ২৫টির বেশি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে।
সেমাই উৎপাদনকারী ব্যবসায়ী আকবর হোসেন বলেন, সেমাইয়ের চাহিদা অনেকটা কম। মানুষ অন্যান্য খাবারের প্রতি ঝুঁকছে। আগে যে হারে উৎপাদন করতাম তা এখন অর্ধেকে নেমে এসেছে। এছাড়া ময়দার দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। উৎপাদন খরচ বাড়লেও বেশি দামে বিক্রি করা যায় না। তাই বাধ্য হয়ে মৌসুম শেষ হওয়ার আগেই কারখানা বন্ধ করে দিতে হয়।
আটার মণ্ডকে সরু ও দীর্ঘ ফালিতে কেটে রোদে শুকিয়ে তারপর গরম তেলে ভেজে প্রস্তুত করা হয় সেমাই। এখন হাতে সেমাই তৈরি সময়সাপেক্ষ হওয়ায় মেশিনে তৈরি সেমাইয়ের দিকেই ঝুঁকছেন সবাই।
বাজারে বিভিন্ন ধরনের সেমাইয়ের মধ্যে প্যাকেটজাত লাচ্ছা সেমাই বিক্রি হচ্ছে বেশি। এর মধ্যে ফ্লেভারস, কিষোয়ান, ওয়েল ফুড, ফুলকলি, বনফুল ইত্যাদি ব্র্যান্ডের ২০০ গ্রাম ও ৪০০ গ্রামের প্যাকেটে এসব সেমাই বিক্রি হচ্ছে। ২০০ গ্রামের প্যাকেটজাত সেমাই ৫০-৬০ টাকা, দামি ব্র্যান্ডের ৪০০ গ্রামের প্যাকেট সেমাই বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৪০ টাকায়।
মন্তব্য করুন