রবিবার, ২০২৪ সেপ্টেম্বর ২২, ৭ আশ্বিন ১৪৩১
#
মহানগর মহানগর

‘মৃত্যুকূপ’ সীতাকুণ্ড: দশ বছরে ৫ শতাধিক শ্রমিকের প্রাণহানি

টুয়েন্টিফোর টিভি
প্রকাশিত : শনিবার, ২০২৩ মার্চ ১১, ১১:০৪ পূর্বাহ্ন
#
২০২২ সালের ৪ জুন বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে পুড়ে তছনছ হয়ে যায় । ফাইল ছবি

চট্টগ্রামের ঝরনা, সমুদ্র আর পাহাড়ে ঘেরা সীতাকুণ্ড উপজেলা। এ উপজেলায় শিপইয়ার্ড, কন্টেইনার ডিপো, অক্সিজেন প্ল্যান্ট, স্টিল রি-রোলিং মিল, তেল ডিপো, খাদ্য প্রক্রিয়াজাত কারখানা, পুরনো জাহাজের তেল, টায়ার, বিভিন্ন যন্ত্রাংশ মজুদ ও কাটার প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

এসব প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন দুর্ঘটনায় গত দশ বছরে প্রাণহানি হয়েছে পাঁচ শতাধিক শ্রমিকের। শুধু ২০২২ সালেই মারা গেছেন ২৩৮ জন শ্রমিক। যার মধ্যে বিএম কনটেইনার ডিপোর দুর্ঘটনাটি ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ। যেখানে অর্ধশতাধিক মানুষ প্রাণ হারান।

দুর্ঘটনার কারণ
বিএম কনটেইনার ডিপোর ভয়াবহ বিস্ফোরণের ৯ মাস যেতে না যেতেই আবারও খবরের শিরোনাম সীতাকুণ্ড। রাসায়নিক কারখানা বোঝাই এই ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে এবার বিস্ফোরণ ঘটল অক্সিজেন প্লান্টে। ২০২২ সালের ৪ জুন বিএম ডিপোর হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড বিস্ফোরণের নিদারুণ ক্ষত ও দাগ মোছেনি এখনও। এবার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কদমরসুল (কেশবপুর) এলাকায় ‘সীমা অক্সিজেন অক্সিকো লিমিটেডের’ প্লান্টে ৪ মার্চ ঘটল ভয়াবহ বিস্ফোরণ। এ ঘটনায় নিহত সাত এবং আহত শতাধিক।

নানা অব্যবস্থাপনা ও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিষ্ঠানগুলো শ্রমিকদের জন্য ‘মৃত্যুকূপ’ হয়ে উঠেছে। প্রশাসন ও মালিকপক্ষের উদাসীনতার কারণেই প্রাণহানি ঘটছে বলে অভিযোগ বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোর।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) প্রোগ্রাম অফিসার ফজলুল কবির মিন্টু জানান, ‘লোকালয়ে একের পর এক শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে নজরদারি না থাকা ও মালিকপক্ষের চরম উদাসীনতার কারণে শ্রমিকদের প্রাণহানি ঘটছে। বড় বড় কারখানা করতে পারে, কিন্তু শ্রমিকদের নিরাপত্তায় সবার মধ্যে যথেষ্ট উদাসীনতা রয়েছে। কোনো ‍দুর্ঘটনা ঘটলে সবার টনক নড়ে। কিছুদিন পর আবার সবাই চুপ হয়ে যায়।’

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইপসার সমন্বয়কারী মোহাম্মদ আলী শাহীন জানান, দিন দিন মৃত্যুকূপ হয়ে উঠছে সীতাকুণ্ড। গত দশ বছরে সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে গিয়ে প্রাণ গেছে পাঁচ শতাধিক শ্রমিকের। তবে এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতে পারে বলে তার ধারণা। কারণ অনেক মৃত্যুর খবরই প্রকাশ্যে আসে না।

শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও শ্রমিকের সংখ্যা অজানা
রাসায়নিক কারখানা বোঝাই এই ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল সীতাকুণ্ডে ভারী ও মাঝারি কত শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে তার নির্ধারিত কোনো পরিসংখ্যান নেই কোনো সংস্থার কাছেই। সেই সঙ্গে কত শ্রমিক কাজ করে তাও অনেকটা অজানা।

তবে জানা গেছে, ১৭৯টি শিপইয়ার্ডসহ চার শতাধিক ছোট-বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। আর এই উপজেলায় বাস করেন শতসহস্র শ্রমিক।

চট্টগ্রামের আরও কয়েকটি বিস্ফোরণ
সীমা অক্সিজেন বা বিএম ডিপো নয়, চট্টগ্রাম বন্দরে এর আগেও বহু রাসায়নিক বিস্ফোরণ ঘটেছে। ২০১৫ সালের ২২ এপ্রিল চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং টার্মিনালে মিথানলভর্তি ড্রামে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে চারজন শ্রমিক গুরুতর আহত হন এবং দগ্ধ হন অনেকেই। একই বছর নাইট্রিক অ্যাসিডভর্তি চারটি কনটেইনার থেকে ধোঁয়া বের হলে বন্দরে আতঙ্ক ছড়ায়। ২০২০ সালের ১৫ জুলাই বিকেলে ৩ নম্বর শেডে আগুন লেগেছিল। ফায়ার সার্ভিসের ১৪টি গাড়ি সন্ধ্যা ৬টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। রাতভর বন্দরের চেয়ারম্যান ও নিরাপত্তা বিভাগের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ছিলেন। রাত ১০টায় বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয়। দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে সরতে গিয়ে একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা আহত হন।

সীতাকুণ্ড নিয়ে মাস্টারপ্ল্যান
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মো. ফখরুজ্জামান জানান, প্রতিষ্ঠানগুলোতে শ্রমিকদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না। শুধু সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্ট নয়, সব কারখানাতেই একই অবস্থা। সীতাকুণ্ড নিয়ে মাস্টারপ্ল্যান করে বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর সহায়তায় শ্রমিকদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

আরও খবর

Video