বৃহস্পতিবার, ২০২৪ সেপ্টেম্বর ১৯, ৩ আশ্বিন ১৪৩১
#
জাতীয় জাতীয়

আমাদের হাজার বছরের বাঙালি ঐতিহ্য অত্যন্ত সমৃদ্ধ

আমাদের ঐতিহ্য চট্টগ্রাম ওয়ার সিমেট্রি

সঞ্চয় কুমার দাশ
প্রকাশিত : বুধবার, ২০২৪ Jun ২৬, ০২:০৭ অপরাহ্ন
#

প্রত্যেকটি দেশেরই তার নিজস্ব ঐতিহ্য আর ইতিহাস আছে। বর্তমান ও পরবর্তী যদি আমরা এসব সম্পর্কে কিছু ধারণা দিয়ে যেতে না পারি তবে জাতি হিসেবে একদিন ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবো।

আমাদের হাজার বছরের বাঙালি ঐতিহ্য অত্যন্ত সমৃদ্ধ। বাঙালি জাতিসত্বার বিভিন্ন সময়ের আঙ্গিকে উত্থান পতন, ঝড়-ঝঞ্ঝা, যুদ্ধ বিগ্রহ, ইতিহাস এ জাতিকে করেছে ঋদ্ধ। যদি একটি জাতি তার নিজস্ব ইতিহাস আর ঐতিহ্যকে রক্ষা করতে না পারে তবে জাতি হিসেবে সে ব্যর্থ।পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মতো আমাদেরও ইতিহাস ঐতিহ্যকে লালন-পালন ও ধারণ করা অবশ্যই দরকার। ‘তাজমহল’ ধর্মীয় আবহে নির্মিত হলেও এর ব্যাপ্তী ভারতের সীমানা ছাড়িয়ে একটি আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে চলে এসেছে।এরকম পৃথিবীর ইতিহাস পরিক্রমায় দেশে দেশে, যুগে যুগে বহু স্হাপনা কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হতে পারে রামুর বৌদ্ধ কেয়াংগুলি ধর্মীয় স্হাপনা, এগুলো আমাদের চেতনা, ইতিহাস আর কৃষ্টির সঙ্গে ওতোপ্রোতোভাবে মিশে গেছে। এইসব স্হাপনাগুলি সময়ের আঙ্গিকে জাতিধর্ম নির্বিশেষে আমাদের অজান্তেই আমাদের চেতনার অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতিসত্বায় মিশে গেছে। তাই সময় ও সীমানা পেরিয়ে যাওয়া এই সৃষ্টিশীল কাজগুলো আমাদের জাতীয় সম্পদ।চট্টগ্রাম কমনওয়েলথ যুদ্ধ সমাধি (ওয়ার সিমেট্রি) শুধু চট্টগ্রাম নয়, সমগ্র বিশ্বের অন্যতম একটি ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ স্হাপনা। একটা সময় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কমনওয়েলথভুক্ত দেশের সৈনিকদের সমাধিস্থল হলেও এখন কালের সাক্ষী হয়ে আমাদের চেতনা্য মিশে অসাম্প্রদায়িক আলো ছড়াচ্ছে।ওয়ার সিমেট্রি চট্টগ্রাম চারুকলা ইন্সটিটিউট সংলগ্ন এবং মেহেদীবাগে ১৯, বাদশা মিয়া চৌধুরী সড়কে অবস্থিত। প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে চতুর্দিকে পাহাড় ও ধানক্ষেত পরিবেষ্টিত ছিল। কিন্তু অনেক আবাসিক এলাকা এখানে গড়ে উঠেছে। তবে প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলী পরিবেষ্টিত ওয়ার সিমেট্রি মুহূর্তেই দর্শক পর্যটনদের নজর কাড়ে।আমাদের নতুন প্রজন্মের কাছে এটি একটি বিনোদনের স্হান বা পার্ক হিসেবে বিবেচিত।

আর জাতি হিসেবে এটাই আমাদের দুর্ভাগ্য। আর এ ব্যর্থতার দায় সম্পূর্ণ আমাদের। কারণ আমাদের ইতিহাস আর ঐতিহ্যগুলোকে আমরা পরবর্তী প্রজন্মকে সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারি নি। ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় আমাদের কৃষ্টি আর সংস্কৃতিকে আমরা মনের গভীরে প্রোথিত করতে পারিনি। জাতি হিসেবে এই ব্যর্থতার দায় অবশ্যই আমাদের নিতে হবে। কারণ আমরা আমাদের ঐতিহাসিক স্হাপনা ও ঐতিহ্যগুলোকে বানিয়ে ফেলেছি পার্ক আর বিনোদনের স্হান।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ (১৯৩৯-১৯৪৫) চলাকালীন কমনওয়েলথ গ্রেভস কমিশনের আওতায় এটির নির্মাণের প্রকল্প শুরু হয়। চট্টগ্রামের মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে এই নির্জন স্হানে পঞ্চাশের দশকের প্রথমে এই মহত্ত্বের স্হাপনাটি নির্মাণের কাজ শুরু হয়।বৃটিশ সেনাবাহিনী এটির নির্মাণ কাজ শুরু করেন। এখানে মোট সমাধি – ৭৫৫ টি। সূচনালগ্নে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ৪০০ টি সমাধি ছিল। বর্তমানে এখানে ৭৩১ টি। যার মধ্যে ১৭ টি অজানা ব্যক্তির, জাতীয় বিদেশী সৈন্যদের ২০ টি (১-ওলন্দাজ, ১৯-জাপানী)এখানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের একটি স্মারক বিদ্যমান।
সমাধির বিবরণ ঃ সৈনিক – ৫২৪, বৈমানিক – ১৯৪, নাবিক -১৩স্হান অনুসারে ঃ যুক্তরাজ্য -৩৭৮, কানাডা -২৫, অষ্ট্রেলিয়া -৯, নিউজিল্যান্ড -২, মিয়ানমার -২, নেদারল্যান্ডস -১, জাপান -১৯, অভিবক্ত ভারত -২১৪, পূর্ব আফ্রিকা -১১, পশ্চিম আফ্রিকা -৯০, অন্যান্ -৪। এখানে একটি বিশেষ লক্ষ্যণীয় ব্যাপার এই যে, এই সমাধিতে বৃটিশ কমনওয়েলথভুক্ত দেশ ছাড়াও জাপানি সৈন্যদের সমাধি রয়েছে। এর দ্বারা এটা প্রমাণিত হয় বৃটিশরা যুদ্ধে নিহত শত্রুর সমাধিকেও সমান শ্রদ্ধার চোখে দেখেছে। যাতে আন্তর্জাতিক যুদ্ধঅপরাধী আইনকে সম্মান করা হয়েছে।পরিশেষে বলা যায়, আমাদের ঐতিহাসিক বাস্তবতা ও প্রয়োজনের তাগিদেই আমাদের সকল ঐতিহ্যগুলোকে সংরক্ষণ করতে হবে। নতুন প্রজন্মের কাছে হাতে আমাদের ঐতিহাসিক স্হাপনাগুলো। তাদেরকে জানাতে হবে এগুলো নিছক কোন বিনোদনের স্হান বা পার্ক নয়। এগুলো আমাদের চেতনার বাতিঘর ।

লেখক- কবি , আবৃত্তিকার ও সাংস্কৃতিক সংগঠক

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

আরও খবর

Video