শনিবার, ২০২৪ সেপ্টেম্বর ২১, ৬ আশ্বিন ১৪৩১
#
জাতীয় জাতীয়

অশ্রুভেজা চোখে প্রতিপালকের (আল্লাহর দরবারে) কাছে ক্ষমা চেয়েছেন দেশ-বিদেশের লাখো মুসল্লি

ইজতেমা শেষে বাড়ি ফেরা,মুসল্লিদের ভিড়ে সড়ক পরিণত হয় জনসমুদ্রে

অনলাইন ডেক্স
প্রকাশিত : রবিবার, ২০২৪ ফেব্রুয়ারী ১১, ০৫:৩৮ অপরাহ্ন
#

দুই হাত তুলে অশ্রুভেজা চোখে প্রতিপালকের (আল্লাহর দরবারে) কাছে ক্ষমা চেয়েছেন দেশ-বিদেশের লাখো মুসল্লি। দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর ঐক্য-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন তাবলীগ জামাতের আন্তর্জাতিক সম্মেলন বিশ্ব ইজতেমায় আগত মুসল্লিরা।
আখেরি মোনাজাত শেষে আমিন আমিন ধ্বনিতে কম্পিত হয় তুরাগ তীরে অবস্থিত পুরো ইজতেমা ময়দান।

এবার বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় ও শেষ পর্বে আখেরি মোনাজাতে গোটা দুনিয়ায় পথভ্রষ্ট মুসলমানের সঠিক পথে চলা এবং তাবলীগের কাজে সবাইকে নিয়োজিত হওয়ার তাওফিক কামনা করে মহান আল্লাহর রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত প্রার্থনা করা হয়। ইহলৌকিক ও পারলৌকিক কল্যাণ কামনা করেন দেশ-বিদেশের লাখ লাখ মুসল্লি।

রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১১টা ১৭ মিনিটে শুরু হয়ে ১১টা ৪৩ মিনিট পর্যন্ত টানা ২৬ মিনিট চলে আখেরি মোনাজাত।  

আখেরি মোনাজাতের ২৬ মিনিট সমগ্র ইজতেমার ময়দানে ছিল নিস্তব্ধ নিরবতা। সড়কগুলোয় থেমে যায় মুসল্লিদের চলাফেরা। যে যার অবস্থায় থেকেই হাত তুলে আখেরি মোনাজাতে অংশ নেন। মোনাজাত শেষ হলে আবারও মুসল্লিদের চলাফেরা শুরু হয়। আশপাশের এলাকার বাসিন্দারা সড়ক থেকে চলতে শুরু করেন।

অন্য দিকে ময়দানের ভেতর থেকে মুসল্লিরা পথ ধরে বাইরে বের হতে থাকেন। সবার কাছেই তাদের ব্যাগ ও জিনিসপত্র ছিল, কারও হাতে আবার কারও মাথায় বা পিঠে। পায়ে হেঁটে ছুটে চলেছেন মুসল্লিরা। এদিকে সড়কে পুলিশ সদস্যরা মুসল্লিদের চলাচলে সহযোগিতার জন্য ময়দান এলাকায় যানবাহন ঢুকতে দিচ্ছেন না। সড়কে যানবাহন নেই, তবে মুসল্লিদের ভিড়ে সড়ক পরিণত হয় জনসমুদ্রে।  

আরও দেখা যায়, ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকা থেকে যারা আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে এসেছিলেন তারা পায়ে হেঁটে যাচ্ছেন নিজেদের গন্তব্যে। ইজতেমার ময়দান থেকে টঙ্গী সড়কের আব্দুল্লাহপুর, স্টেশন রোড, আব্দুল্লাহপুর সুইচগেট ও কামারপাড়াসহ ময়দানের চারপাশে সড়কে মুসুল্লিদের ঢল নেমেছে। সবাই ছুটেছেন বাড়ির উদ্দেশ্যে।

বিশ্ব ইজতেমা সম্পন্ন করে মুসল্লিরা মোনাজাতের পরপরই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা করেছেন। তবে ময়দানের ভেতরেও অনেক মুসল্লি রয়েছেন। যারা জোহরের নামাজ আদায় করে এবং দুপুরের খাবার খেয়ে রওয়ানা করবেন। অনেকেই নিজেদের জিনিসপত্র গোছাতে শুরু করেছেন। কেউ কেউ নিজেদের কাফেলার জন্য রান্নার কাজ করছেন। তবে অধিকাংশ মুসল্লি আজই ময়দান থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা করবেন।

অনেকেই ট্রেনে চেপে বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নিতে এসেছিলেন। তাদের অনেকেই টঙ্গী রেলওয়ে স্টেশনের দিকে যাচ্ছেন। কেউ আবার ছুটেছেন বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে। ময়মনসিংহের গফরগাঁও থেকে এসেছেন আল আমিন। শনিবার বিকেলে ট্রেনযোগে পৌঁছেছেন তিনি। মোনাজাত শেষে তিনি টঙ্গী রেলওয়ে স্টেশনের দিকে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ট্রেনে করে এসেছি, এখন আবার ট্রেনে করেই বাড়ি যাব। যদিও এখন ট্রেনে উঠতে অনেক কষ্ট হবে তবুও আগে গেলে ট্রেনে দাঁড়ানোর জায়গা পাব।

বিশ্ব ইজতেমা-২০২৪ এর দ্বিতীয় ও শেষে পর্বের আখেরি মোনাজাত ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। র‍্যাব, পুলিশ, আনসার ব্যাটালিয়ন, গোয়েন্দা পুলিশসহ (ডিবি) বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা নিয়োজিত রয়েছেন। নিরাপত্তার স্বার্থে ময়দান ও আশপাশের নজরদারি রাখতে মোড়ে মোড়ে রয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা।

উল্লেখ, গত ২ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে ৪ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয় বিশ্ব ইজতেমা-২০২৪ এর প্রথম পর্ব। প্রথম পর্বে মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীরা ময়দানে উপস্থিত ছিলেন৷ শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) শুরু হয়ে রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে শেষ হয় বিশ্ব ইজতেমা-২০২৪ এর দ্বিতীয় পর্ব।

গত ৫৭ বছর ধরে টঙ্গীর তুরাগ পাড়ে আয়োজিত হয়ে আসছে তাবলীগ জামাতের আন্তর্জাতিক সম্মেলন বিশ্ব ইজতেমা। ২০১১ সাল পর্যন্ত এক পর্বে তিন দিনব্যাপী টঙ্গীর তুরাগ পাড়ে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। তবে মুসল্লিদের ব্যাপক উপস্থিতি ও ফেরার সময় জনদুর্ভোগসহ নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে  তাবলীগ জামাতের শুরা সদস্যদের পরামর্শের ভিত্তিতে তিন দিন করে দুই ধাপে ইজতেমা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

আরও খবর

Video