বৃহস্পতিবার, ২০২৫ মে ০১, ১৮ বৈশাখ ১৪৩২
#
জাতীয় জাতীয়

দুই ব্যবসায়ীর কারসাজিতে বেড়েছে ডিমের দাম!

নিজস্ব প্রতিবেদক | টুয়েন্টিফোর টিভি
প্রকাশিত : রবিবার, ২০২২ আগস্ট ২১, ১১:৩৫ পূর্বাহ্ন
#

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিত্যপণ্যের বাজারও টালমাটাল। সপ্তাহের ব্যবধানে সব পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী; বিশেষ করে হঠাৎ করেই বেড়ে যায় ডিমের ডজন। এখন কিছুটা নাগালের মধ্যে এসেছে ডিমের দাম। তবে নিম্নবৃত্ত ও মধ্যবিত্তের পছন্দের অন্যতম এ পণ্যটির দাম কারা বাড়িয়েছে বা কাদের কারসাজিতে বেড়েছে সে প্রশ্ন এখনও সবার মুখে মুখে।

জ্বালানি তেলের দাম বা পোল্টি খাবারের কারণে ডিমের দাম বাড়েনি; এর পেছনে দুই ব্যবসায়ীর সংঘবদ্ধ কারসাজি ছিল বলে এক অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে। বাজারের বিভিন্ন পণ্যের দামের অস্থিতিশীলতাকে পুঁজি করে এ কাজটি করেছেন সাভারের আশুলিয়ার দুই ডিম ব্যবসায়ী। অভিযোগ রয়েছে, সংকটের বাজারে বেশি ডিম বিক্রি করে উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে বাড়তি কমিশনও পেয়েছেন তারা।

এ বিষয়ে কাপ্তান বাজারের আড়ৎদার মোর্শেদ আলম বলেন, সাভারে দুটি প্রতিষ্ঠান আছে- ফয়সাল এন্টারপ্রাইজ ও রিপন এক্সসেন্টাল। এই দুটি প্রতিষ্ঠান কাজী ফার্ম থেকে ডিম কেনে। গত ১৩ আগস্ট কাজী ফার্ম থেকে তারা ১৫০ টাকা বেশি দিয়ে ক্রয় করে ডিম। এরপর সারা দেশে ডিমের দাম বেড়ে যায়। আর এ বেড়ে যাওয়ার ফলে সব কোম্পানিও রেট বাড়িয়ে দিল।

অভিযোগের বিষয়ে সাভারের ডিম ব্যবসায়ী ফয়সাল এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার ডিলার ফয়সাল সরকার বলেন, যেহেতু বাজারে ডিম কম, তাই চাহিদা মেটানোর জন্যই বেশি দামে ডিম নিয়েছি। কিন্তু আমাদের কোনো মাল তখন স্টক ছিল না। আমাদের রিটেইলারদের চাহিদা অনুযায়ী ডিম দিয়েছি। পার্টিদের চাহিদা মেটানোর জন্য আমাদের একটু রেট বেশি দিতে হয়।

এদিকে আশুলিয়ার ব্যবসায়ী রিপন এক্সসেন্টালে গিয়ে দেখা মেলেনি ব্যবসায়ীর। এ বিষয়ে অন্য খামারিরা বলছেন, বাড়তি দামে বেশি ডিম বিক্রি করে রিপন ও ফয়সাল মূলত বড় খামারগুলো থেকে সুবিধা নিয়েছেন।

এ বিষয়ে আড়তদার মোর্শেদ আলম বলেন, যে যত বেশি ডিম বেশি বিক্রি করবে সে তত বেশি কমিশন পায়। এ কমিশনের কারণেই দুই প্রতিষ্ঠান ফাটাফাটি ব্যবসা করে। কাজী ফার্ম যে রেট দেয় তার থেকে প্রতিদিনই শতকরা ১০০ টাকা, কখনও ৫০/৬০ টাকা বেশি দিয়ে মাল ক্রয় করে। 

এসব বিষয়ে পোল্ট্রি শিল্প সমন্বয় কমিটির সভাপতি মশিউর রহমান বলেন, সংকটের সময় বাজারে সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করেছেন অনেকেই। তিনি বলেন, যখন আমদানি কম থাকে তখন বেশি দাম দিয়ে কেনার একটা সুযোগ নেয় অসাধু ব্যবসায়ীরা। সে সুযোগটা তারা কাজে লাগিয়েছে। প্যানিক হয়ে; কিন্তু অনেকে একটু দাম বাড়ায়, আবার যারা কিনে তারা একটু বেশি কিনে, আবার যাদের সুযোগ নেয়ার দরকার যেমন, মধ্যভোগী যারা, তারা একটু বেশি সুযোগ নেয়। সবকিছু মিলেই একটা অস্বাভাবিক দাম বেড়েছিল।

এক গবেষণায় উঠে আসে, দেশে দৈনিক প্রায় সাড়ে ৪ কোটি ডিম বিক্রি হয়। আর উৎপাদন হয় প্রায় ৫ কোটি। অর্থ্যাৎ বাজারে ডিমের কোনো সংকট ছিল না। কেবল অস্থিতিশীল বাজারে সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করেছে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। 

এদিকে গত সপ্তাহে খাদ্যমূল্য আর জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে হঠাৎ করে এক লাফে ডিমের হালি হয়ে যায় ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। ডজন প্রতি ডিমের দাম দাঁড়ায় ১৬০ টাকায়।

এক সপ্তাহ অস্থিরতার পর সরকারি নানা তৎপরতা আর বাণিজ্যমন্ত্রীর ডিম আমদানির হুঁশিয়ারিতে একদিনেই প্রতি ডজনে ডিমের দাম কমে যায় ৪০ টাকার মতো।

এছাড়া ডিমের দাম তদারকিতে দেশের বিভিন্ন ডিমের আড়তে অভিযান চালায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। এসময় দেখা যায় বেশির ভাগ আড়ত বন্ধ। ক্রয়-বিক্রয়ের রসিদ ও মূল্যতালিকা না থাকায় অনেক আড়তকে জরিমানা করা হয়।

সরকারি নির্দেশনায়, খুচরা পর্যায়ে ২৫ শতাংশ ও পাইকারি পর্যায়ে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ লাভে ডিম বিক্রি করা যাবে। 

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

আরও খবর

Video