শুক্রবার, ২০২৪ সেপ্টেম্বর ২০, ৫ আশ্বিন ১৪৩১
#
জাতীয় জাতীয়

ভুয়া নিয়োগ দেখিয়ে এমপিও হতে মরিয়া কর্ণফুলীর এক হাই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক!

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত : রবিবার, ২০২৪ মে ১২, ১০:৩৮ পূর্বাহ্ন
#

কর্ণফুলী উপজেলার আছিয়া মোতালেব রিজিয়া নাছরিন উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সোহেল মাহমুদের বিরুদ্ধে ভুয়া নিয়োগপত্র বানিয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে এমপিও ভুক্ত হতে মরিয়া। উক্ত শিক্ষকের কাগজ পত্র জালিয়তির বিষয়টি ধরা পড়ার পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা না জানিয়ে আনোয়ারা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে ফাইল পাঠিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। 

জানা গেছে, কর্ণফুলী উপজেলার আছিয়া মোতালেব রিজিয়া নাছিরিন উচ্চ বিদ্যালয়ে সোহেল মাহমুদ ২০১৩ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক। উক্ত স্কুলের প্রধান শিক্ষক অন্য স্কুলে চলে যাওয়ায় ২০১৯ সাল থেকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে চলমান দায়িত্বে রয়েছে।

গত ২০২২ সালে স্কুল এমপিওভূক্ত হওয়ার লোভে ২০২৩ সালে এসে কাগজ পত্র জালিয়তি করে ২০১৫ সালের ভুয়া নিয়োগ দেখিয়ে প্রধান শিক্ষক দাবী করে এম.পিওভুক্ত কাগজ পত্র জমা দেন। বিভিন্ন সময় প্রধান শিক্ষক না হয়েও প্রধান শিক্ষক পরিচয় দেয়ায় চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের নাজরে আসলে শোকজ এবং ভবিষ্যতে এ ধরণের কর্মকান্ডে সতর্কীকরণ নোটিশ দেন। কর্ণফুলী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের মাধ্যমে বারবার প্রধান শিক্ষক হিসেবে এমপিওভূক্ত হতে  অনলাইনে ফাইল পাঠিয়ে আসছে।  জেলা শিক্ষা অফিসার ও ভারপ্রাপ্ত আঞ্চলিক উপ-পরিচালক উক্ত স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাগজ পত্র জালিয়তির বিষয়টি জানার পর একাধিকবার ফাইল ফেরত দেয়। উক্ত শিক্ষক সোহেল মাহমুদ ২০১৩ সালে স্কুলে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে ২০১৯ সাল পর্যন্ত উক্ত স্কুলে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

২০১৯ সালে তৎকালীন প্রধান শিক্ষক অন্যত্র চলে গেলে সোহেল মাহমুদ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। স্কুল ২০২২ সালে এমপিও ভুক্তি হলে তড়িগড়ি করে জালজালিয়াতির মাধ্যমে ২০১৫ সালের ৫ জুলাই তারিখে ভুয়া নিয়োগ পরীক্ষা দেখিয়ে কাগজপত্রাদি তৈরি করেন। বিষয়টি শিক্ষা বোর্ডের দৃষ্টিগোচর হলে গত বছরের ৫ মার্চ ব্যাখ্যা তলব করলে  সোহেল মাহমুদ ৯ মার্চ ব্যাখ্যার জবাব দাখিল করেন এবং ক্ষমা প্রার্থনা করেন। শিক্ষাবোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক ড. বিপ্লব গাঙ্গুলী গত বছরের  ২৮মার্চ বিধি বহির্ভূত কর্মকান্ড না করার বিষয়ে এবং পুনরাবৃত্তি না করার জন্য সতর্ক করেন।

কিন্তু  সোহেল শিক্ষাবোর্ডের সতর্কীকরণ পত্রকে  না মেনে গত  ০৮/০৮/২০২৩ তারিখে আঞ্চলিক উপ-পরিচালক চট্টগ্রাম এর মাধ্যমে মহাপরিচালক, মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, বাংলাদেশ, ঢাকা বরাবর ০৫/০৭/২০১৫ ইং তারিখের ভূয়া নিয়োগ পরীক্ষা  দেখিয়ে তড়িগড়ি করে প্রধান শিক্ষক পদে এম.পিও ভুক্তির জন্য ফাইল প্রেরণ করেন। উক্ত নিয়োগের প্যানেলে অভিজ্ঞতার স্থলে  কোন অভিজ্ঞতা দেখানো হয়নি, প্রকৃতপক্ষে অভিজ্ঞতা বিহীন এবং ইনডেক্স বিহীন  কোন প্রধান শিক্ষক নিয়োগের বিধান নেই। উক্ত নিয়োগ প্যানেলে ২ নম্বরে সোহেল মাহমুদ এর শ্যালিকা রাজিয়া সুলতানাকে এবং অন্য একজন জান্নাতুন নুর কে প্যানেলে  দেখানো হয়। প্যানেলের অপরাপর সদস্য জান্নাতুন নুর ও রাজিয়া সুলতানার  কোন অভিজ্ঞতা, ইনডেক্স বা শিক্ষক নিবন্ধন নম্বর ও নেই প্রকৃত পক্ষে তারা শিক্ষকই না। এসব বিষয়ে  জেলা শিক্ষা অফিসার, চট্টগ্রাম ও ভারপ্রাপ্ত আঞ্চলিক উপ-পরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম উত্তম খীসা জানতে পেরে প্রধান শিক্ষকের এম.পিও ভুক্তির জন্য প্রেরিত ফাইল ফেরত পাঠান। কর্ণফুলী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বাবুল নাথের মাধ্যমে জেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর ই-নথির মাধ্যমে ফাইল  প্রেরণ করে যাচ্ছেন এবং এম.পিও ভুক্তির জন্য তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। বস্তুত সোহেল মাহমুদ আছিয়া মোতালেব রিজিয়া নাছরিন উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন সহকারী প্রধান শিক্ষক ও বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। দূর্ণীতির আশ্রয় গ্রহণ করে তিনি প্রধান শিক্ষক পদে এম.পিও ভুক্তির জন্য প্রচেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছেন। অভিযোগের বিষয়ে আছিয়া মোতালেব রিজিয়া নাছরিন উচ্চ বিদ্যালয়েল ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সোহেল মাহমুদের কাছে জানতে চাইলে তিনি কোন ফাইল পাঠানো হয়নি বলে দাবি করেন। তবে বিয়ষটি কি জন্য কারণে জানতে চাচ্ছেন বলে প্রতিবেদকে পাল্টা প্রশ্ন করেন।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও স্কুলের সভাপতি মাসুমা জান্নাত উক্ত স্কুলের কোন শিক্ষকের ফাইল মন্ত্রনালয়ে পাঠানোর আগে আমাকে দেখানো উচিত  কিন্তু আমাকে কেউ বিষয়টি অভিহিক করেনি। বিষয়টি আমি শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইবে কি কারণে আমাকে জানানো হয়নি।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বাবুল চন্দ্র নাথ বলেন, কোন ফাইল এখনো পর্যন্ত পাঠানো হয়নি, আনোয়ারা শিক্ষা অফিসারের মাধ্যমে ফাইল পাঠানোর প্রসঙ্গে তিনি বিয়ষটি কিছু জানেন না বলে জানান।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা শিক্ষা অফিসার উত্তম খীসা, স্কুলটি থেকে কাগজ পত্র জাল জালিয়তি করে ফাইল পাঠানোর বিষয়টি নজরে আসলে ফাইল ফেরত পাঠানো হয়েছে বলে তিনি জানান, এ স্কুলের বিভিন্ন বিষয় সর্ম্পকে জানা আছে বলে তিনি জানান।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

আরও খবর

Video