পাহাড়ের পাদদেশে পাশাপাশি পাঁচটি বাড়ি। নির্মাণকাজ প্রায় শেষ দিকে। চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার বাজালিয়া ইউনিয়নবাসী এগুলোকে প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি হিসেবে চেনেন। মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে দেশব্যাপী চলমান প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ভূমি-গৃহহীনদের জন্য এসব বাড়ি প্রস্তুত করা হয়েছে।
দেশের বিভিন্ন স্থানে এ ধরনের বাড়ি নির্মাণে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু বাজালিয়া ইউনিয়নের এ পাঁচটি বাড়ি নির্মাণে উল্টো ব্যক্তিগত তহবিল থেকে টাকা যোগ করে মজবুত করে তৈরি করেছেন স্থানীয় চেয়ারম্যান তাপস দত্ত।
ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বাজালিয়া ইউনিয়নে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় পাঁচটি বাড়ি নির্মাণে উপজেলা প্রশাসন থেকে প্রদান করা হয় আট লাখ টাকা। এই টাকার সঙ্গে স্থানীয় চেয়ারম্যান তাপস দত্ত ব্যক্তিগত তহবিল থেকে আরও আট লাখেরও বেশি টাকা যোগ করেন। অবকাঠামোগত মজবুতের জন্য নানা খাতে এসব টাকা যোগ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
চেয়ারম্যান জানান, বাড়ি পাঁচটিতে শুধু নির্মাণ সংক্রান্ত কাজে ব্যয় করা হয় আট লাখ টাকা ৫৫ হাজার টাকা। এর বাইরে বাড়িগুলোর দরজা-জানালায় খরচ করা হয়েছে ৮০ হাজার টাকা, মজবুতের জন্য মাটিকাটা হয় তিন লাখ টাকার ও রঙের কাজ করা হয়েছে ৬০ হাজার টাকার।
এছাড়া বাড়ির চারপাশে চার লাখ টাকা ব্যয়ে রিটার্নিং ওয়াল, যাতায়াতে সুবিধার জন্য ২ লাখ টাকা ব্যয়ে সড়কের সংস্কারকাজ এবং সুপেয় পানির জন্য এক লাখ টাকা ব্যয়ে একটি গভীর নলকূপ স্থাপনের প্রকল্পের কাজ চলমান। উপজেলা থেকে প্রাপ্ত আট লাখ টাকার পর ব্যয় হওয়া বাকি টাকা চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত তহবিল থেকে খরচ করা হয়েছে।
জানতে চাইলে বাড়িগুলো নির্মাণের দায়িত্বে থাকা মিস্ত্রি আবদুল মালেক বলেন, ‘আমি নিজ হাতে শুধু নির্মাণকাজে আট লাখ ৫৫ হাজার টাকা খরচ করেছি। এছাড়া দরজা-জানালা, রঙের কাজ, রিটার্নিং ওয়ালসহ বাড়িগুলো মজবুতে অন্যান্য টাকা চেয়ারম্যান খরচ করেছেন।
‘বাড়িগুলো নির্মাণের শুরুতে আমাদের উপজেলা প্রশাসন যে প্লান দিয়েছিল তাতে রড দেয়ার কথা ছিল না। কিন্তু বাড়িতে আমরা রড ব্যবহার করেছি এবং টেকসই হওয়ার জন্য পিলার দিয়েছি। দেশের অন্যান্য জায়গায় দুর্ঘটনা হলেও, বড় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়া বাড়িগুলো ফাটল কিংবা ভাঙার সম্ভাবনা নেই।’
বাজালিয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান তাপস দত্ত বলেন, প্রধানমন্ত্রী যে আবেগ-অনুভূতি নিয়ে গৃহহীনদের বাড়িগুলো প্রদান করেছেন, আমি তাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে আমার সাধ্যমতো মজবুত করে বাড়িগুলো তৈরি করেছি। বাড়িগুলোতে যতদিন লোকজন বসবাস করবে ততদিন প্রধানমন্ত্রীর নাম থাকবে। এগুলোতে অনিয়ম তো দূরের কথা, উপজেলা প্রশাসন থেকে প্রাপ্ত টাকার সমপরিমাণ আমার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে যোগ করে বাড়িগুলো নির্মাণ করেছি। যাতে প্রধানমন্ত্রীর সুনাম হয়। কারণ তার সুনাম মানেই আমার সুনাম।
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে সারাদেশে ভূমিহীন ও গৃহহীন ১ লাখ ২০ হাজার পরিবারকে বাড়ি করে দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি ঝড়-বৃষ্টির কারণে কিছু ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া নির্মাণেও বেশকিছু অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। যার কারণে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। তদন্ত করে ইতোমধ্যে ব্যবস্থাও নিয়েছে তারা। পাঁচ কর্মকর্তাকে (উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) ওএসডি করা হয়েছে। অভিযুক্ত কয়েকজনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাও হয়েছে।সূত্র: জাগোনিউজ
মন্তব্য করুন