পুত্রবধূকে নির্যাতন করে পরিকল্পিতভাবে হত্যার অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ১২নং সরাইপাড়া ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুরুল আমিনের পরিবারের বিরুদ্ধে।
মৃত রেহনুমা ফেরদৌসকে (২৫) নির্যাতন পরবর্তী হত্যার এই অভিযোগটি তুলেছেন পিতা তারেক ইমতিয়াজ; তিনি প্রয়াত কাউন্সিলর ও নগর আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা তারেক সোলায়মান সেলিমের ভাই।
পাহাড়তলী থানা পুলিশ জানায়, কাউন্সিলর নুরুল আমিনের পরিবারের দাবি; এটি আত্মহত্যা। রেহনুমা ফেরদৌস ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেছেন জানিয়ে থানায় খবর দেয় কাউন্সিলর পরিবার। যদিও ঘটনাস্থলে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে বিছানায় শোয়া অবস্থা থেকে। এমন পরিস্থিতিতে সন্দেহ করা হচ্ছে কাউন্সিলর পরিবারকে। মামলার তদন্তে আত্মহত্যা নাকি হত্যাকাণ্ড এমন প্রশ্নের জট খুলবে বলে জানায় পুলিশ।
শনিবার (২ জুলাই) সকাল ১০টায় পাহাড়তলী থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, রহস্যজনক এই মৃত্যুর পর সামনে এসেছে পারিবারিক কলহ-বিবাদ ও নির্যাতনের বেশ কিছু ঘটনা। মৃতের পিতা তারেক ইমতিয়াজের অভিযোগ, কাউন্সিলর আমিনের স্ত্রী ও পুত্র নওশাদুল আমিনের নির্যাতনে এই মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
তিনি বলেন, ‘এটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। ঘটনা ধামাচাপা দিতে তারা আত্মহত্যার গল্প সাজিয়েছে। তারা বলছে আমার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু আমরা মেয়ের লাশ পেয়েছি বিছানায়। এছাড়া ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করলে জিহ্বা ও চোখ বাইরে বেরিয়ে আসার কথা। কিন্তু আমার মেয়ের জিহ্বা ছিল স্বাভাবিক। আর চোখ একেবারেই বন্ধ ছিল। নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে তারা এসব বলছে।’
কাউন্সিলর নুরুল আমিনের পরিবারের বিরুদ্ধে যৌতুক দাবির অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘আমার মেয়েকে বিয়ের পর থেকেই তারা যৌতুকের জন্য নির্যাতন চালিয়ে আসছিল। মেয়ের শ্বশুর বাড়িকে খুশি করতে আমি সামর্থ্য মত চেষ্টা করেছি। বিয়ের সময় সকল আসবাবপত্র, ফলের মৌসুমে ফল, ঈদের সময় যাবতীয় জিনিসপত্র, কোরবানির সময় গরু দিয়েছি। কিন্তু মেয়ের শাশুড়ি কখনই সন্তুষ্ট ছিল না। আর মায়ের কথা ধরে ছেলে নির্যাতন করতো।’
‘চার বছর আগে মেয়ের বিয়ে হলেও গত সাড়ে ৩ বছর ধরেই আমার মেয়ের উপর নির্যাতন চলে আসছিল। কিন্তু মেয়ে আমাদের কখনোই এসব জানায়নি। এবার ঈদে মিলাদুন্নবীতে আমার মেয়ে এসব আমাদের জানায়। এমনকি তাদের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে গত রমজান ও ঈদ মেয়ে আমাদের সাথেই করেছে। প্রায় ৩ মাস মেয়ে আমাদের বাসায় ছিল। পরবর্তীতে সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের মধ্যস্থতায় আমরা মেয়েকে তাদের কাছে পাঠাই। কিন্তু সেই যাওয়াই যে শেষ যাওয়া হবে তা কে জানতো?’
হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে কাউন্সিলর নুরুল আমিন, তার স্ত্রী ও পুত্রের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা এবং নারী নির্যাতন মামলা করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে ১২নং সরাইপাড়া ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুরুল আমিন ও তার পুত্র নওশাদুল আমিনের নাম্বারে একাধিকবার ফোন করেও তাদের পাওয়া যায়নি।
জানতে চাইলে পাহাড়তলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো মামলা হয়নি। আসলে কি হয়েছিল সেটা তো তদন্ত সাপেক্ষে জানা যাবে৷ তবে এটি হত্যাকাণ্ড নাকি আত্মহত্যা তা আমরা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরই বুঝতে পারবো।’
মন্তব্য করুন