শনিবার, ২০২৪ সেপ্টেম্বর ২১, ৬ আশ্বিন ১৪৩১
#
মহানগর মহানগর

বন্ধ করা যাচ্ছে না হালদা থেকে মাটি-বালু উত্তোলন

নিজস্ব প্রতিবেদক | টুয়েন্টিফোর টিভি
প্রকাশিত : শনিবার, ২০২১ এপ্রিল ০৩, ০৩:১৯ অপরাহ্ন
#
সরকারের নানান পদক্ষেপের কারণে বদলে যাওয়া হালদা নদী আবারও হুমকির মুখে। বালু উত্তোলন ও হালদার পাড় কেটে মাটির ব্যবসা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে।
প্রায় সময়ই হালদার বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে উত্তোলন করা হচ্ছে বালু। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রভাবশালী কর্তা-ব্যক্তি মিলে গড়ে তুলেছে সিন্ডিকেট। প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনা করা হলেও থামানো যাচ্ছে না এ সিন্ডিকেটকে।
দেশের প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদী থেকে বছরে সরকারের আয় হয় কোটি টাকা। বেড়েছে স্থানীয়দের কর্মসংস্থানও। হালদার এমন উন্নতি দেখে নদীর প্রতি ভালবাসা প্রখর হয়েছে স্থানীয়দের। যার কারণে হালদার ক্ষতি হয় এমন কাজ দেখলেই প্রতিবাদী হন স্থানীয়রা। নদী থেকে বালু ও মাটি উত্তোলন নিষিদ্ধ করা হয়েছে অনেক আগে। তবে প্রশাসনের অভিযানের মুখে কিছুদিন কাজ বন্ধ রেখে আবারও বালু ও মাটি উত্তোলন শুরু করেছে প্রভাবশালীরা। দিন-রাত চলছে বালু-মাটি নিয়ে ব্যবসার মহাযজ্ঞ। অতিরিক্ত বালু ও মাটি কাটার ফলে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে হালদা নদীর মৎস্য ক্ষেত্র, ভূজপুর রাবার ড্যাম এবং হালদা নদী ভাঙন রোধে চলমান সিসি ব্লক স্থাপন ও বেড়িবাঁধ স্থাপনে ১৫৭ কোটি টাকার প্রকল্পও ভেস্তে যেতে পারে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের। মাটি ও বালু উত্তোলনের ফলে হালদা নদী ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে বলে জানান হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মঞ্জুরুল কিবরিয়া। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, হালদা থেকে বালু ও মাটি কাটার ফলে নদীর পানিও দূষিত হচ্ছে। মা মাছের ক্ষতি হচ্ছে। হালদার পাড় থেকে যখন মাটি কাটা হয়, তখন হালদার যে আকৃতি আছে সেটি পরিবর্তন হয়ে যায়। নদীর যে প্রবাহ আছে সেটি সবদিকে ছড়িয়ে পড়ে। তিনি আরও বলেন, নদীর ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড যে প্রকল্প হাতে নিয়েছে সেটি ভেস্তে যাবে। কোটি কোটি টাকা নষ্ট হবে। এলাকার ফসল, বসতবাড়ি ক্ষতির মুখে পড়বে। অধ্যাপক কিবরিয়া বলেন, নদীর পাড় কাটার কারণে বর্ষার ভরা মৌসুমে পাহাড়ি ঢল নামবে। তখন নদী ভরাট হয়ে যাবে। নদী ভরাট হলে, নদী ভাঙন হবে। একপর্যায়ে গ্রাম তলিয়ে যাবে। এখানে প্রশাসনের আন্তরিকতা ও কঠোরতা অনেক বেশি জরুরী। জানা গেছে, ফটিকছড়ির ইটভাটাগুলোর জন্য মাটি কাটা হচ্ছে হালদা নদীর পাড় থেকে। এছাড়াও মাটি কেটে সড়ক উন্নয়ন কাজে ব্যবহার করছে আরেকটি সিন্ডিকেট। তারা রাত-দিন নদী থেকে বালু ও মাটি পাচার করছে। ফটিকছড়ির নারায়ণহাট ইউনিয়নেও চলছে মাটি ও বালু উত্তোলন। ক্ষমতাসীন দল ও কতিপয় জনপ্রতিনিধির সহায়তায় এ কাজ চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে। হাইকোর্টের নির্দেশে হালদা নদীর সব বালুমহাল ইজারা প্রদান, বালু ও মাটি তোলা, চর কাটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে সরকার। কিন্তু এই বিধি-নিষেধ অমান্য করে ফটিকছড়ি ও ভূজপুর এলাকার প্রভাবশালীরা নির্বিচারে বালু উত্তোলন করছে। স্থানীয় বাসিন্দা জামাল ইবনে জহুর বলেন, হালদা নদীর ভূজপুর রাবার ড্যামের নিচে (দক্ষিণে) আওয়ামী লীগ ও জামায়াত-শিবিরের একটি সিন্ডিকেট এক মাস ধরে নদীর পাড় কেটে মাটি পাচার করছে। মাটি ও বালু সড়ক নির্মাণকাজের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এছাড়াও কয়েকশ গাড়ি দিয়ে বালু ও মাটি পাচার করা হচ্ছে। প্রতি গাড়ি মাটি ও বালু তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফটিকছড়ির ইউএনও সায়েদুল আরেফিন বলেন, বালু ও মাটি কাটা প্রতিরোধে আমরা কঠোর অবস্থানে। যেসব পয়েন্ট থেকে বালু উত্তোলন ও মাটি কাটা হতো সেখানে আমাদের কড়া নজরদারি রয়েছে। হালদা থেকে আর কাউকে মাটি-বালু নিয়ে ব্যবসা করতে দেওয়া হবে না। যারা এ কাজগুলো করে আমরা তাদের তালিকা তৈরি করেছি, ধরতে পারলেই মামলা আর জরিমানা গুণতে হবে। তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি নদীর পাড় ও চর কেটে মাটি পাচার করার অপরাধে কয়েকজনকে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ৮-১০টি জিপ-ট্রাক-ট্রলিসহ খননযন্ত্র আটক করা হয়েছে।
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

আরও খবর

Video