শনিবার, ২০২৪ সেপ্টেম্বর ২১, ৫ আশ্বিন ১৪৩১
#
মহানগর মহানগর

বাইরে টিনের ঘেরা, ভেতরে তৈরি হচ্ছে স্থাপনা!

নিজস্ব প্রতিবেদক | টুয়েন্টিফোর টিভি
প্রকাশিত : বৃহস্পতিবার, ২০২১ এপ্রিল ২৯, ১১:৩৩ পূর্বাহ্ন
#
চট্টগ্রামে করোনাকালে কমেছে প্রশাসনের নজরদারি। এ সুযোগে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে পাহাড়খেকোরা। নগরী ও সীতাকুণ্ড উপজেলার মধ্যবর্তীসহ দুই পাশের জঙ্গল সলিমপুর ও জাফরাবাদ এলাকার বিস্তৃর্ণ সবুজ পাহাড় কেটে পরিণত করা হচ্ছে বিরাণভূমিতে। ইতোমধ্যে নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে এ এলাকার প্রায় সবগুলো পাহাড়ের চূড়া। কাটা পাহাড়গুলোর চূড়া থেকে শুরু করে চারদিকে দিনে-রাতে তৈরি করা হচ্ছে স্থায়ী-অস্থায়ী নানা স্থাপনা। স্থাপনা অবৈধ হলেও এখানে দেওয়া হচ্ছে বৈদ্যুতিক সংযোগও। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নগরীর বায়েজিদ-ফৌজদারহাট সংযোগ সড়ক লাগোয়া জঙ্গল সলিমপুর, জাফরাবাদ ও জালালাবাদ এলাকার সবুজ পাহাড়গুলো কেটে সাবাড় করা হচ্ছে। এখানে পাহাড়ের পাদদেশে শত শত স্থাপনা। লিংক রোড সংলগ্ন নতুন তৈরি করা রাস্তা দিয়ে জঙ্গল সলিমপুর প্রবেশের মুখ লাগোয়া পাহাড় চূড়ায় রয়েছে খাজা নুরনবী শাহ মাজার। প্রায় তিনশ ফুট উঁচুতে এই মাজারের পাহাড়ে উঠে দেখা যায়, আশেপাশের চারদিকে বিবর্ণ পাহাড়ের ক্ষতবিক্ষত চেহারা। মাজারের পাহাড়টিতে লিংক রোডের সামনের দিকে টিনের ঘেরা দিয়ে প্রশাসনের চোখে ফাঁকি দিয়ে ঘেরার ভেতরে পাকা দেয়াল নির্মাণ করা হচ্ছে। এছাড়া চারদিকের সবুজ পাহাড়ের পাদদেশে যে যার মতো করে নির্মাণ করছে অসংখ্য স্থাপনা। এ সময় পাশের আরেকটি পাহাড়ের চূড়া কেটেও পাকা স্থাপনা নির্মাণ করতে দেখা যায়। পাহাড়টিতে সাইনবোর্ড টাঙানো দেখা গেছে। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, জঙ্গল সলিমপুর এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে জনবসতি অনেক পুরনো। তবে সময়ের সাথে সাথে বাড়ছে এসব বসতি। স্থানীয় প্রভাবশালী ভূমিদস্যু সিন্ডিকেট সরকারি পাহাড়গুলো কেটে প্লট বানিয়ে বিক্রি করে দিচ্ছে। কম আয়ের লোকজন এখানকার পাহাড়ি এলাকার টিনশেড বাসাগুলোতে ভাড়া থাকে। অপেক্ষাকৃত অবস্থা সম্পন্ন অনেকে এখানে কম টাকায় এসব প্লট কিনে বসতি বানিয়ে বসবাস করছে। বর্ষাকাল এলে জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঝেমধ্যে উচ্ছেদ করা হলেও পুনরায় এখানে গড়ে উঠে নতুন নতুন স্থাপনা। এখানকার পাহাড়ে অবৈধভাবে নির্মিত স্থাপনাগুলোতে পিডিবির বিদ্যুৎ সংযোগও দেওয়া হয়। বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার জন্য এখানে একটি চক্র রয়েছে। ৫-১০ হাজার টাকায় এখানে সহজে বিদ্যুতের সংযোগ মেলে। অনেক ক্ষেত্রে বিদ্যুতের প্রি-পেইড মিটার সংযোগও দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন রায় আজাদীকে বলেন, বায়েজিদ লিংক রোডের দুই পাশে কিছু ব্যক্তি মালিকানাধীন পাহাড় রয়েছে। ব্যক্তিগত পাহাড় কাটার বিষয়টি পরিবেশ অধিদপ্তর দেখভাল করেন। তাছাড়া জঙ্গল সলিমপুর ও জাফরাবাদের সীতাকুণ্ডের অংশে কিছু সরকারি পাহাড়ও আছে। এখানে মামলা সংক্রান্ত জটিলতার কারণেও অনেক সময় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কিংবা পাহাড় কর্তন রোধ সম্ভব হয় না। তারপরও কোভিডের মাঝামাঝি সময়ে জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে যৌথ অভিযান চালিয়ে অনেক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। এখন নতুন করে স্থাপনা তৈরি হলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চল কার্যালয়ের পরিচালক মফিদুল আলম বলেন, কোথাও অনুমোদন ব্যতিরেকে পাহাড় কাটার সুযোগ নেই। জঙ্গল সলিমপুর কিংবা জাফরাবাদ এলাকার যেখানে পাহাড় কেটে বসতি নির্মাণ করা হচ্ছে, সেখানে পরিবেশ অধিদপ্তরের টিম পরিদর্শন করবে। তাদের রিপোর্টের ভিত্তিতে অবশ্যই আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

আরও খবর

Video