রবিবার, ২০২৪ সেপ্টেম্বর ২২, ৬ আশ্বিন ১৪৩১
#
মহানগর মহানগর

ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় যাত্রা শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক | টুয়েন্টিফোর টিভি
প্রকাশিত : বৃহস্পতিবার, ২০২০ ডিসেম্বর ০৩, ০৩:৩১ অপরাহ্ন
#
স্বেচ্ছায় নোয়াখালীর ভাসানচরে যেতে চাওয়া রোহিঙ্গাদের কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরগুলো থেকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রায় ১শ’ রোহিঙ্গা পরিবার উখিয়া কুতুপালংয়ের ট্রানজিট ও কলেজ মাঠের পয়েন্টে পৌঁছেছে। বৃহস্পতিবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুরে প্রথমে ১০টি বাসে ভাসানচরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে রোহিঙ্গারা। উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠ এলাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া বাসগুলোতে অন্তত ৩০০ রোহিঙ্গা থাকতে পারে বলে ধারণা রোহিঙ্গা নেতাদের। এর আগে টেকনাফের শামলাপুর রোহিঙ্গা শিবিরের পাঁচ পরিবারের ২৭ জন সদস্য স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যাওয়ার জন্য বুধবার (২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় উখিয়া ট্রানজিট পয়ন্টে পৌঁছায়। উখিয়া কলেজের অস্থায়ী ট্রানজিট ঘাট থেকে দুইভাগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ভাসানচরের উদ্দেশে তাদের যাত্রা শুরু হওয়ার কথা। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের প্রতিনিধি ও টেকনাফ শামলাপুর রোহিঙ্গা শিবিরের কর্মকর্তা (সিআইসি) নওশের ইবনে হালিম বলেন, বুধবার (২ ডিসেম্বর) বিকালে বাসে করে আমার ক্যাম্প থেকে পাঁচটি রোহিঙ্গা পরিবারকে উখিয়ার কুতুপালংয়ের ট্রানজিট পয়েন্ট নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাদের সেখান থেকে কখন কোথায় নিয়ে যাওয়া হবে, সেবিষয়ে আমার জানা নেই। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারের উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা জানান, স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যেতে রাজি রোহিঙ্গাদের একটি অংশ ক্যাম্প ত্যাগ করেছে। তাদের উখিয়ার কুতুপালংয়ের ট্রানজিট পয়েন্ট ও কলেজ মাঠে রাখা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রোহিঙ্গাদের এই দলটিকে নিরাপত্তার সঙ্গে ভাসানচর নিয়ে যাওয়ার জন্য চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। পরে সেখান থেকে তাদের ভাসানচরে হস্তান্তর করা হবে। এদিকে টেকনাফের শামলাপুর শরণার্থী শিবিরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কিছু রোহিঙ্গা পরিবার মালপত্র নিয়ে ক্যাম্প ইনচার্জের (সিআইসি) কার্যালয়ে পৌঁছেছে। সেখানে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তাদের সঙ্গে কথা হয়। এসময় এই ক্যাম্পের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। টেকনাফ শামলাপুরের সালামত উল্লাহ নামে এক রোহিঙ্গা জানায়, উখিয়ায় কুতুপালংয়ের ট্রানজিট পয়েন্ট থেকে বৃহস্পতিবারই ভাসানচরের উদ্দেশে তারা রওনা করবো বলে শুনেছি। প্রথম আমাদের এখান থেকে উখিয়া ট্রানজিট পয়েন্টে নিয়ে যাবে। পরে সেখান থেকে চট্টগ্রাম হয়ে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে। বিশেষ করে এখানে খুব কষ্টের জীবন যাচ্ছিল। তাই উন্নত জীবনের আশায় স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে সেখানে চলে যাচ্ছি। নিজেদের ইচ্ছাতেই যাচ্ছি। নোয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) দীপক জ্যোতি খীসা বলেন, কক্সবাজারের শরাণার্থী শিবির থেকে কাল-পরশু (বৃহস্পতিবার-শুক্রবার) রোহিঙ্গাদের একটি অংশ ভাসানচরে হস্তান্তর করার কথা রয়েছে। আমাদেরও সেভাবে প্রস্তুতি রয়েছে। টেকনাফের শামলাপুর রোহিঙ্গা শিবিরের হেড মাঝি আবুল কাশেম জানান, তার শিবির থেকে বুধবার বিকাল পর্যন্ত পাঁচটি পরিববার স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যেতে ক্যাম্প ছেড়েছে। স্থানান্তর সংশ্লিষ্টরা তাদের বাসে করে উখিয়ার কুতুপালংয়ের ট্রানজিট পয়েন্টে নিয়ে যান। বৃহস্পতিবার তার ক্যাম্প থেকে আরও বেশ কিছু পরিবার নিয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে। এদিকে ভাসানচরের আবাসন প্রকল্প দেখে মুগ্ধ হয়ে স্বেচ্ছায় যেতে ইচ্ছুক সাড়ে তিনশ’ পরিবারের আড়াই হাজার রোহিঙ্গাকে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নোয়াখালী ভাসানচরে হস্তান্তর শুরু করতে সব প্রস্তুতি শেষ করার কথা জানিয়েছিলেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অব্যাহত হামলা, নিপীড়ন ও হত্যার কারণে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয় সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা। এর আগে থেকেই বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা। বর্তমানে তাদের সংখ্যা কমপক্ষে ১১ লাখ। ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের এই দলটিই প্রথম আশ্রয়ের জন্য যাচ্ছে না। এর আগে গত মে মাসে অবৈধভাবে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া পৌঁছানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে দুই দফায় নারী-শিশুসহ মোট ৩০৬ জন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ফিরে আসে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সঙ্গনিরোধের জন্য সরকার তাদের ভাসানচরে নিয়ে রেখেছে। রোহিঙ্গাদের উখিয়া ও টেকনাফের ঘিঞ্জি ক্যাম্পগুলো থেকে সরিয়ে আরো নিরাপদে রাখতে নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ভাসানচরে নিজস্ব অর্থায়নে বিপুল ব্যয়ে আশ্রয় ক্যাম্প নির্মাণ করে সেখানে পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ভাসানচরের আশ্রয় ক্যাম্পে কমপক্ষে এক লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করতে পারবে।
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

আরও খবর

Video