আজ চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক সিটি মেয়র প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ৭৭তম জন্মদিন। ১৯৪৪ সালের ১ ডিসেম্বর চট্টলার রাজনীতির উর্বরভূমি হিসেবে পরিচিত রাউজানের গহিরার সম্ভ্রান্ত চৌধুরী পরিবারে জন্ম নেন এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। সেই শিশু কালক্রমে হয়ে উঠেন চট্টলবীর।
চট্টগ্রামবাসীর বিপদ কিংবা আপদে অথবা রাষ্ট্রিয় বঞ্চণায় যে মানুষটি নিজ দলের বিরুদ্ধেও লড়াই করেছেন তিনি হলেন চট্টগ্রামবাসীর ‘মেয়র সাব’ মহিউদ্দিন চৌধুরী। জীবনের শেষ সময় শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লেও তাঁর মনোবল ছিল পাহাড়সম। তাঁর মৃত্যু পরবর্তী জানাজায় প্রমাণ করে তাঁর প্রতি চট্টগ্রামবাসীর ভালোবাসা কতটা।
ছাত্রজীবন থেকেই এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের আদর্শের সৈনিক। তিনি জড়িয়ে পড়েন ছাত্রলীগের রাজনীতিতে। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর দ্বিতীয় দিনে নুর আহাম্মদ সড়কের নেভাল এভিনিউ মোড়ে লড়াই করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হন। এরপর ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষণ শেষে গিরিশংকুল পাহাড়ি এলাকা দিয়েই সদলবলে ঢুকেন দেশে। প্রাণপণ লড়ই করেন দেশমাতৃকার জন্য। মুক্তিযুদ্ধের পর ক্রমেই শ্রমিক লীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি।
১৯৭৫ সালে হত্যা করা হয় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তখনই বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ নিতে ভারতে গিয়ে সামরিক প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। ফিরে এসে চট্টগ্রামকে ‘সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন’ করে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ নিতে এসে হারান ঘনিষ্ঠ বন্ধু মৌলভী সৈয়দকে। পরবর্তী দীর্ঘ সামরিক শাসনের সময় মহিউদ্দিনকে বেশ কয়েকবার কারাবরণ করতে হয়েছিল। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, চট্টগ্রাম বন্দর রক্ষা আন্দোলন, অসহযোগ আন্দোলনসহ চট্টগ্রামের মাটি ও মানুষের স্বার্থরক্ষার আন্দোলনে বেরিয়ে পড়তেন সবার আগে। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী মহিউদ্দিন চৌধুরী ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচিত মেয়র। টানা ১৭ বছর এ সংস্থাকে সফলভাবে পরিচালনা করে নগরবাসীকে একটি আধুনিক ও পরিচ্ছন্ন নগরী উপহার দিতে সক্ষম হন তিনি। স্বাধীনতার পর থেকে মৃত্যু অবধি চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। তিনি ১৯৯৩ সাল থেকে ২০০৯ পর্যন্ত কয়েক দফায় বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগর ও বন্দর নগরী চট্টগ্রামের নগর মেয়েরের দায়িত্ব পালন করেছেন।
বীরচট্টলার এই সিংহ পুরুষ ২০১৭ সালে ১৫ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম নগরীর একটি বেসরকারি ক্লিনিকে সকলকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে চিরবিদায় নেন বর্ষীয়ান এই রাজনীতিক। কিন্তু তার আগে রেখে গেছেন সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন। নানা উত্থান-পতন ও ঘটনাপ্রবাহে চট্টগ্রামের প্রতিটা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে তিনি ছিলেন আছেন থাকবেন। মৃত্যুকালে বর্ষীয়ান এই রাজনীতিক সাংসারিক জীবনে দুই ছেলে ও চার কন্যা সন্তানের জনক।
এই বীরের জন্মদিনে টুয়েন্টিফোর টিভির পক্ষ থেকে জানায় বিনম্র শ্রদ্ধা।
মন্তব্য করুন