চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে অপরাধের সংখ্যা। তেমনিভাবে বাড়ছে মামলার সংখ্যাও।
পাশাপাশি বেড়েছে মামলা নিষ্পত্তির সংখ্যা। খরব-বাংলানিউজ
২০২২ সালে মোট ৮৬ হাজার ৮৬৩টি মামলা হয় চট্টগ্রাম চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ( সিএমএম) আদালতে ।
নিষ্পত্তি হয়েছে ২১ হাজার ৫৭টি মামলা। বিচারাধীন রয়েছে ৫০ হাজার ৯১১টি মামলা।
চট্টগ্রাম চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালে মোট মামলা ছিল ৭১ হাজার ৫৩৫টি। ২০২২ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৬ হাজার ৮৬৩টি। ২০২১ সালে বিচারাধীন ছিল ৪৮ হাজার ৩৯৮টি মামলা। ২০২২ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ হাজার ৯১১টি। ২০২১ সালে মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল ১১ হাজার ৫৩০টি। ২০২২ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১ হাজার ৫৭টি। ২০২১ সালে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা হয়েছিল ১৯ হাজার ৯৩৬টি। ২০২২ সালে মামলা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ৫৮২টি। ২০২১ সালে ৫ বছরের অধিক সময় ধরে বিচারধীন মামলার সংখ্যা ছিল ৬ হাজার ৩৩৬টি। ২০২২ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৫৩৪টি। ২০২১ সালে বিচারের জন্য বদলি করা হয়েছিল ১১ হাজার ৬০৭টি মামলা। ২০২২ সালে বিচারের জন্য বদলি করা মামলার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৮৯৫টি।
আদালতের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ১৯৭৯ সালের নভেম্বর মাসে একজন চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ও তিনজন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের সমন্বয়ে ৬ থানা বিশিষ্ট চট্টগ্রাম মহানগর এলাকায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেসির কার্যক্রম শুরু হয়। জনসংখ্যা ও অপরাধপ্রবণতা বাড়ায় বর্তমানে নগরে থানার সংখ্যা ১৬টি। ১৯৯২ সালে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেসিতে বিচারাধীন মামলা ছিল ৮ হাজার ৫৬৭টি। মামলা বাড়ার কারণে ওই বছর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের সংখ্যা বৃদ্ধি করে পাঁচজনে উন্নীত করা হয়। মামলার সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাওয়ায় অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি পদ বাড়ানো হয় ২০০০ সালের ফেব্রুয়ারিতে। ২০০৭ সালে মামলার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ১৫ হাজার ১০৬টি হওয়ায় পরের বছর আরেকটি মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত বাড়ানো হয়। ২০০৭ সালের তুলনায় এখন মামলার সংখ্যা চারগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে আটটি মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত রয়েছে।
আদালত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মামলা করার পর তদন্ত শুরু হয়। তদন্ত শেষে প্রতিবেদন তৈরি করে অভিযোগপত্র দায়ের করা হলে তার ভিত্তিতে অভিযোগ গঠন করা হয়। তারপর সাক্ষ্যগ্রহণ এবং উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে রায় দেওয়া হয়। এর মধ্যে সাক্ষী হাজিরে অনীহা, চিকিৎসক হাজির না হওয়া, সাক্ষী হাজিরের ক্ষেত্রে পুলিশের তৎপরতার অভাব, রাজনৈতিক প্রভাবসহ বিভিন্ন সমস্যার জন্য মামলা নিষ্পত্তি হতে সময় বেশি লাগে। ফলে সৃষ্টি হয় মামলা জট। তবে এখন পুরোনো ব্যবস্থায় অনেক পরিবর্তন এসেছে।
এদিকে ২০২২ সালে চট্টগ্রাম চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় দীর্ঘদিন ধরে চলমান থাকা বেশ কিছু পুরাতন মামলাগুলো নিষ্পত্তি হওয়ায় বিচারপ্রার্থীরা খুশি হয়েছেন। বছরের পর বছর ধরে আদালতে যাতায়াতে তাদের অনেক টাকা ব্যয় হয়েছে। হয়রানি ও ভোগান্তির পাশাপাশি সময়ও নষ্ট হয়েছে। বিচারকদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় এক বছরে এতগুলো রায় দেওয়া সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। নিয়মিত পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেসি কনফারেন্স ও ম্যাজিস্ট্রেসির একাধিক থানা ইতিমধ্যে সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন চট্টগ্রাম চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. রবিউল আলম।
চট্টগ্রাম চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নাজির আবুল কালাম আজাদ বলেন, আদালতের বিচারকরা সবসময়ই চেষ্টা করেন দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি করতে। কিন্তু আদালতে নির্ধারিত দিনে সাক্ষী না আসায় মামলা নিষ্পত্তিতে দেরি হয়। ম্যাজিস্ট্রেটদের তাগাদার কারণে আদালতে সময়মতো সাক্ষী উপস্থাপন নিশ্চিত করা হচ্ছে। বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। অফিসের নির্ধারিত সময়ের বাইরেও কাজ করেছেন বিচারকরা। ফলে এক বছরে ২১ হাজারের অধিক মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হয়েছে।
চট্টগ্রাম মহানগর আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর মো.আবদুর রশীদ বলেন, আমাদের বিচারকরা বেশ আন্তরিক। তাঁরা চেষ্টা করছেন মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে। অনেক মামলা দ্রুত নিষ্পত্তিও করছেন। মামলা জটের কারণে বহু মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। আগের চেয়ে মামলা নিষ্পত্তির হার অনেক বেড়েছে। বর্তমানে যেকোনও মামলায় দ্রুত সাক্ষ্যগ্রহণ করা হচ্ছে।
সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) চট্টগ্রাম মহানগর এর সাধারণ সম্পাদক ও সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আখতার কবীর চৌধুরী বলেন, আদালতে জনবল সংকট রয়েছে। একাধিকবার সমন জারির পরেও সাক্ষীরা আদালতে সাক্ষ্য দিতে আসে না। সরকারকে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করার জন্য বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
মন্তব্য করুন