ঐতিহাসিক পরীর পাহাড় রক্ষায় অননুমোদিত বিভিন্ন স্থাপনা উচ্ছেদের প্রস্তাবনায় অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এর ফলে জেলা প্রশাসন ও আইনজীবী সমিতির মধ্যে সৃষ্ট দ্বন্দ্ব নিরসনের পথ দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাঠ প্রশাসন সংযোগ অধিশাখার জারিকৃত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের আগস্ট মাসে দ্বিতীয় পক্ষের পাক্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গৃহীত প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিয়েছেন। এদিকে পরীর পাহাড়ের সার্বিক অবস্থা দেখতে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস চট্টগ্রাম আসছেন ২৩ সেপ্টেম্বর।খবর: বাংলানিউজ
জানা গেছে, ১৩০ বছরের ঐতিহ্য সমৃদ্ধ পরীর পাহাড়ে আইনজীবীদের জন্য দু’টি নতুন ভবন নির্মাণ করা নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে যায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও আইনজীবী সমিতি। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরীর পাহাড় রক্ষায় গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। এ ঘটনায় গত ৮ সেপ্টেম্বর আইনজীবী সমিতি সাধারণ সভা করে। দু’পক্ষের দ্বন্দ্বের মধ্যেই চট্টগ্রাম ওয়াসা, বিদ্যুৎ বিভাগ ও কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি সহ ১৪টি সেবা সংস্থার কাছে চিঠি দেয় জেলা প্রশাসন।
অপরদিকে আদালত ভবন এলাকায় আইনজীবীদের নতুন দু’টি ভবন নির্মাণের অংশ হিসেবে ‘চেম্বার বরাদ্দ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি’ প্রকাশ করা হয়। জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, আদালত ভবনের সঙ্গে গড়ে ওঠা আইনজীবী ভবনগুলোর অনুমোদন রয়েছে। বিভিন্ন স্থাপনা উচ্ছেদের প্রস্তাবনার বিষয়ে কেউ আমাদের জানায়নি।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, পরীর পাহাড়ে নতুন করে স্থাপনা নির্মাণ না করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে নির্দেশনা দিয়েছেন। মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের যেরকম আদেশ দেওয়া হবে, সেভাবে কাজ করবো।
তিনি বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা নিয়ে ফায়ার সার্ভিস নিজস্ব একটা সমীক্ষা করেছে। পরিবেশ অধিদফতরও পরিবেশগত সমীক্ষা করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকও কাজ করছে। নীতিমালা অনুসারে ‘ক’ শ্রেণির কেপিআই’র আশপাশে কোনও ধরনের বহুতল স্থাপনা করা যাবে না। পরীর পাহাড়ে অনুমোদনহীন প্রায় সাড়ে তিনশ বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো রয়েছে। অবৈধ স্থাপনা অপসারণের জন্য সিডিএ তালিকা করে আমাদের দিবে। আমরা উচ্ছেদ নোটিশ সৃজন করে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করার উদ্যোগ নেবো।
মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের গোপনীয় প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ‘চট্টগ্রাম নগরের কেন্দ্রস্থলে পাহাড় চূড়ায় প্রশাসনিক প্রাণকেন্দ্র চট্টগ্রাম কোর্ট বিল্ডিং অবস্থিত। এ অংশে রয়েছে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, জেলা ও দায়রা জজ আদালতসহ সর্বমোট ৭১টি আদালত। জেলা প্রশাসকের নামে এখানে সরকারের ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত ১১.৭২ একর জায়গা রয়েছে। সরকারি ভবনের বাইরে ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত জায়গায় চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি পাহাড় কেটে ৫টি ঝুঁকিপূর্ণ বহুতল ভবন নির্মাণ করেছে। এসব স্থাপনাকে পাহাড় ধস, ভূমিকম্প, অগ্নিকাণ্ড ইত্যাদির জন্য অতি ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা হিসেবে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ চিহ্নিত করেছে। সম্প্রতি চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি ‘বঙ্গবন্ধু আইনজীবী ভবন’ ও ‘একুশে আইনজীবী ভবন’ নামক দুইটি ১২তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করে এবং ৬০০টি চেম্বার বরাদ্দ দিচ্ছে’।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, পরীর পাহাড় ইট-পাথরের জঞ্জালে পরিণত হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মেনে এখানে পরিবেশ ও প্রকৃতি রক্ষায় আমরা প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবো।
মন্তব্য করুন