সোমবার, ২০২৪ নভেম্বর ১১, ২৭ কার্তিক ১৪৩১
#
রাজনীতি রাজনীতি

হেফাজতের নিয়ন্ত্রণ নিতে তৎপর বিএনপি-জামায়াত

নিজস্ব প্রতিবেদক | টুয়েন্টিফোর টিভি
প্রকাশিত : বৃহস্পতিবার, ২০২০ নভেম্বর ১২, ১১:৫৮ পূর্বাহ্ন
#
হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর পর ধর্মভিত্তিক বড় এই সংগঠনটির নিয়ন্ত্রণ নিতে বিএনপি-জামায়াতপন্থি অংশের নেতারা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। তারা শফীপন্থিদের বাদ দেওয়ার পাঁয়তারা করছেন। হেফাজতের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য ১৮ সদস্যের কাউন্সিল বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটিতে থাকা বিএনপি-জামায়াতপন্থিরা নানামুখী তৎপরতা শুরু করেছে বলে রাষ্ট্রের একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। সূত্র মতে, কাউন্সিল সামনে রেখে জামায়াত-শিবির কৌশলে হেফাজতে ইসলামে প্রভাব বিস্তারেরও চেষ্টা চালাচ্ছে। আহমদ শফী জীবিত থাকতে সংগঠনটি চট্টগ্রাম থেকে নিয়ন্ত্রিত হলেও বিএনপি-জামায়াত ঘনিষ্ঠরা তা ঢাকাকেন্দ্রিক করার চেষ্টা চালাচ্ছে। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংগঠনের বর্তমান মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরীর নেতৃত্বে ১৮ সদস্যের যে কাউন্সিল বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা হয়েছে, সেখানে অনেকেই সরাসরি বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সংশ্নিষ্ট। কেউ কেউ জামায়াত নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলেন। নতুন কমিটি গঠনকে সামনে রেখে প্রায় প্রতিদিনই বিএনপি-জামায়াতের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত হেফাজতের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মাওলানা মীর ইদ্রিস, মাওলানা জাকারিয়া নোমান ফয়জী, মাওলানা নাসির উদ্দিন মুনির, মাওলানা জাফর আলম নিয়মিত গোপন বৈঠক করে কমিটির তালিকা তৈরি করছেন। তালিকাটি কাউন্সিলের দিন মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরীকে দিয়ে অনুমোদন করিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, গত ১৮ সেপ্টেম্বর শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর আগে থেকে হাটহাজারী মাদ্রাসায় জামায়াতে ইসলামের অনুগতরা ব্যাপকভাবে আনাগোনা শুরু করেন। তারা প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করতে থাকেন। হঠাৎ করে ওই মাদ্রাসায় মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত কারাবন্দি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে শামীম সাঈদীর আনাগোনা বেড়ে যায়। এ ছাড়া সেখানে হেফাজতের বিতর্কিত নেতা মুফতি হারুন ইজহার ও মাওলানা মামুনুল হকের যাতায়াতও বেড়ে যেতে থাকে। মামুনুল হকের স্ত্রীসহ শ্বশুরপক্ষের অধিকাংশ আত্মীয়-স্বজন জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত বলেও অভিযোগ রয়েছে। সংশ্নিষ্ট গোয়েন্দা সূত্র বলছে, আহমদ শফীর মৃত্যুর পর জানাজার দিন লক্ষাধিক অনুসারীর মধ্যে জামায়াত-শিবিরের কৌশলী উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো। জানাজার সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে জামায়াত ও শিবিরের নেতাদের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। এছাড়া আহমদ শফীর লাশ বহনকারী খাটিয়া জামায়াত নেতা ও সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরী, সাবেক শিবির নেতা ও বর্তমান এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু, শিবিরের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন আইয়ুবি, শিবিরের সাংস্কৃতিক সম্পাদক আব্দুল আলিমসহ অন্তত ৪০ জন জামায়াত-শিবির নেতা বেষ্টনী করে রাখেন বলে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উঠে আসে। এতে বলা হয়, মাওলানা মামুনুল হক কৌশলে জামায়াত-শিবিরের নেতাদের সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ করে দিয়ে জামায়াতের সঙ্গে হেফাজতের একটি সেতুবন্ধ তৈরির প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। হেফাজতে ইসলাম একটি অরাজনৈতিক ধর্মভিত্তিক সংগঠন হলেও গোয়েন্দা সূত্র বলছে, সংগঠনটিতে বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী সংগঠনটির অন্যতম শীর্ষ নেতা। ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমীকেই হেফাজতের নতুন মহাসচিব করার জন্য সংগঠনটিতে থাকা বিএনপি-জামায়াত ঘনিষ্ঠ অংশটি চেষ্টা চালাচ্ছে। ভবিষ্যতে হেফাজতের নেতৃত্বকে হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রভাবমুক্ত করে ঢাকাকেন্দ্রিক করতে শফীপন্থি কোনো আলেমকে হেফাজতের নতুন কমিটিতে না রাখতেও নানা তৎপরতা শুরু হয়েছে। জামায়াত ও হেফাজতের আদর্শিক দূরত্বের বিষয়টি উল্লেখ করে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়, কওমিদের স্বার্থ রক্ষায় হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয়। এ সংগঠনটির মূল শক্তি কওমি মাদ্রাসা এবং এসব মাদ্রাসা থেকে শিক্ষা লাভ করা কওমি আলেম ও শিক্ষার্থীরা। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে থেকেই এই কওমি আলেমদের সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামের আদর্শগত পার্থক্য রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে জামায়াত পাকিস্তানিদের পক্ষ নেওয়ায় কওমি আলেমদের সঙ্গে ওই দলটির দূরত্ব আরও বাড়তে থাকে। তবে দেশে কওমি আলেমদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়তে থাকায় জামায়াত ও তাদের ছাত্র সংগঠন শিবির হেফাজত ও কওমি মাদ্রাসাগুলোকে তাদের দখলে নেওয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পনা করে আসছে। এর অংশ হিসেবে শিবির ১৯৮৫ সালে কওমি অঙ্গনের বৃহত্তম প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায় আক্রমণ করে মাদ্রাসাটি দখলে নেওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। ১৯৮৯ সালে ছাত্রশিবিরের সংশ্নিষ্টতার অভিযোগে ওই মাদ্রাসা থেকে ১০ জন ছাত্রকে বহিস্কার করা হয়। এর জের ধরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের নেতৃত্বে হাটহাজারী মাদ্রাসায় কয়েক দফায় হামলা করা হয়। সূত্রঃ পূর্বপশ্চিমবিডি
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

আরও খবর

Video