শনিবার, ২০২৫ মে ০৩, ১৯ বৈশাখ ১৪৩২
#
লাইফস্টাইল লাইফস্টাইল

বাংলাদেশের পাগলা মসজিদ! (ভিডিও)

নিজস্ব প্রতিবেদক | টুয়েন্টিফোর টিভি
প্রকাশিত : মঙ্গলবার, ২০২২ মার্চ ১৫, ০৫:৫৪ অপরাহ্ন
#

প্রাচীন ও আধুনিক স্থাপত্যের বিখ্যাত নানা দর্শনীয় স্থান কিশোরগঞ্জ। ঈশা খাঁর স্মৃতি বিজড়িত, নরসুন্দা নদী বিধৌত, হাওড় অধ্যুষিত, কবি চন্দ্রাবতীর শিবমন্দিরসহ গ্রাম বাংলার শাশ্বত রুপ বৈচিত্র ও সোনালী ঐতিহ্যের ধারক এই জেলা। একে ঘিরে রয়েছে অনেক ইতিহাস। প্রায় আড়াইশ বছরের পুরনো তারই একটি ঐতিহাসিক স্থাপনার নাম পাগলা মসজিদ। আকাশছোঁয়া মিনারে দাঁড়িয়ে আছে শহরের প্রাণ কেন্দ্রে।  

পাগলা মসজিদের ইমরাত খুবই সুন্দর এবং নির্মাণশৈলীও বেশ চমৎকার। আধুনিক স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত পাগলা মসজিদটি নানা ধরণের ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থাপনা হিসেবে খ্যাত। মসজিদটি কিশোরগঞ্জ শহরের হারুয়া নামক এলাকায় অবস্থিত।

মসজিদ স্থাপত্যের একটি সাধারণ গাঠনিক রুপে গঠিত পাগলা মসজিদ যেমন- মূল প্রার্থণা কক্ষ, ছাদের উপর স্থাপিত অর্ধ-বৃত্তাকার গম্বুজ এবং উঁচু মিনার।

এছাড়া বিভিন্ন ভূখন্ডের মানুষের সংস্কৃতি, আবহাওয়া, ভূ-প্রকৃতি, শাসন কাঠামো, রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সংশ্লিষ্ট ভূখন্ড প্রভৃতি সকল দিকেই নজর রেখেই নির্মিত এই ধর্মীয় স্থাপত্য।

এটি একটি আয়তাকার, বহুগম্বুজ বিশিষ্ট বিশাল আয়তনের স্তম্ভত্তিক। নির্মাণরীতির ইমারত ইট দিয়ে তৈরি এই মসজিদের দেয়ালের গায়ে টাইলসের আস্তরণ রয়েছে। প্রাচীনকাল থেকেই বাংলার স্থাপত্য নির্মাণে ইট ঐতিহ্যবাহী উপকরণ হিসেবে ব্যবহত হয়ে আসছে। আর এই ইটের একেকটি গাঁথুনিতে নরসুন্দা নদীর সহজলভ্য কাদামাটির বুকে গড়ে উঠে, স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত এই পাগলা মসজিদ।

বেশির ভাগ স্থানীয় নির্মাণ কারিগরদের হাতে স্থানীয় উপকরণ দিয়ে মসজিদের নকশায় তুলে ধরা হয় নিজস্ব নির্মাণশৈলী। আধুনিক স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত পাগলা মসজিদের মূল প্রার্থণা কক্ষসহ  প্রতিটি কক্ষে বয়ে বেড়ায় পর্যাপ্ত আলো বাতাস।

মসজিদটির মূল প্রার্থনা ঘরের সামনের অংশটি কাচের ঘেরায় নির্মিত। প্রয়োজনবোধে যার সমস্তটা খোলে দেয়া হয়। মসজিদের ভিতরে দেশি-বিদেশি বিশাল ঝার বাতিতে সজ্জিত।

অনেকগুলো অযুখানার পাশাপাশি পুকুর ঘাট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে নরসুন্দার পানি।

মসজিদের সামনে নরসুন্দার বুকে নির্মিত হয়েছে আধুনিক ব্রিজ। নদীর পাশেই মুসল্লির জন্য হাঁটার জন্য নির্মিত হয়েছে সু-পরিছন্ন লেক।

প্রথম দিকে মসজিদটিতে  হয়বতনগর দেওয়ানবাড়ির ওয়াকফকৃত দেয়া ভূমির পরিমাণ ছিল ১০ শতাংশ। বর্তমানে এর পরিমাণ ৩ একর ৮৮ শতাংশ। মসজিদের ব্যয়ে ২০০২ সালে মসজিদের পাশেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে একটি হাফেজিয়া মাদরাসা। এছাড়াও রয়েছে নিজস্ব একটি কবরস্থান মসজিদটি পরিচালিত হয় জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে।

শহরের পশ্চিমে নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত তিনতলা বিশিষ্ট মসজিদটির পাঁচতলা সুউচ্চ মিনার বহুদূর থেকে সহজেই দৃষ্টি কাড়ে। মিনারটিকে ঘিরেই স্থাপিত হয়েছে বৃত্তাকার আরো ৩ টি ছোট মিনার।

মসজিদটির মিনারে মূলত তিনটি অংশ যথা, ভিত্তি, উপরে উত্থিত অংশ ও গ্যালারি। মাটি খুঁড়ে শক্ত ভিত্তিতে নির্মিত মিনারটি বেলনকার। উত্থিত অংশ জুড়ে প্যাঁচানো সিড়ি কাঠামোকে অতিরিক্ত মজবুত হতে সাহায্য করেছে। মিনারের শীর্ষভাগ মসজিদ থেকে বেশ উঁচু। যার শীর্ষভাগে গ্যালারি থেকে মুয়াজ্জিন আজান দেন। দিনে পাঁচবার নামাজের সময় আজান দেয়া হয়। মিনারের শীর্ষে মাইক যুক্ত করে শব্দ দূরে পৌঁছানো যায়। মিনারটি  বিভিন্নভাবে অলংকরণকৃত।  

জনশ্রæতি আছে যে, পাগলবেশী এক আধ্যাত্মিক পুরুষ খরস্রোতা নরসুন্দা নদীর মধ্যস্থলে মাদুর পেতে ভেসে আসে এবং বর্তমান মসজিদের কাছে স্থিতু হন। সেইসময় তাঁকে ঘিরে আশে পাশে অনেক ভক্তকূল সমবেত হন। উক্ত পাগলের মৃত্যুর পর তাঁর সমাধির পাশে পরবর্তীতে এই মসজিদটি গড়ে ওঠে। কালক্রমে এটি পাগলা মসজিদ নামে পরিচিত হয়।

মসজিদটি শুধু ইসলাম ধর্মাবলম্বীর কাছেই নয়, সকল র্ধমাবলম্বীর কাছে অত্যন্ত পবিত্র ধমীয় কেন্দ্র হিসেবে পরিগণিত। অনেকের বদ্ধমূল বিশ্বাস যে, কেউ সহি নিয়তে এ মসজিদে দান খয়রাত করলে তার ইচ্ছা পূর্ণ হয়। আর সেই ইচ্ছা পূরণকে ঘিরে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শুরু করে বিদেশিদেরও ঢল পড়ে মসজিদ প্রাঙ্গনে।

খাস নিয়তে সেখানে কেউ নামায আদায় করে সৃষ্টিকর্তার কাছে কিছু চাইলে মনের আশা পূরণ হয়। তাই নারী পুরুষসহ সকল বয়সের মানুষই সেখানে মানত হিসেবে নামায আদায় করে আসে। মহিলাদের জন্য নামাযের আলাদা বিশেষ ব্যবস্থা আছে। আর শবে বরাত ও শবে কদর রাতে মহিলা ও পুরুষরা সারারাত ইবাদতে মগ্ন থাকে। মসজিদ প্রাঙ্গণে দেখা মিলের সব বয়সের মানুষকে। এমনও হয় সন্তান জন্মের পরপরই তাকে সেই মসজিদের মাটি স্পর্শ করানো হয়। কারো গাছের প্রথম ফল ,গরুর প্রথম দুধ মসজিদে দান করা হয়।
সাধারণ মানুষ এমন বিশ্বাসের আলোকে পাগলা মসজিদে প্রচুর দান-খয়রাত জড়ো হয়।

ঐতিহাসিক এই মসজিদের দান-খয়রাতের সিন্দুক খোলা হয় তিন মাস পরপর। এতে নগদ টাকাসহ প্রচুর স্বর্ণ অলংকার জমা হয়। টাকাসহ বিভিন্ন দানকৃত জিনিসপত্র থেকে প্রতিদিন মসজিদটির আয় গড়ে দেড় লাখ টাকা। মাসে ৪৫ লাখ টাকা, আর বছরে মোট আয় প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা।

 

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

আরও খবর

Video