মোটরসাইকেল বা বাইক চালানোর জন্য নিরাপত্তার সরঞ্জাম হেলমেট। এটি একজন বাইকারের জীবন রক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অনেকেই হেলমেট না পরতে অনেক অজুহাত দেন। কিন্তু জীবনের নিরাপত্তার কাছে কোনো অজুহাতই খাটে না।
বাইকারদের অনেকেই আছেন যারা শুধু পুলিশের মামলা থেকে বাঁচতে হেলমেট ব্যবহার করেন। আর এ কারণে অনেকেই নামমাত্র দামে খুবই নিম্নমানের হেলমেট ব্যবহার করেন। কিন্তু তারা হয়তো জানেন না মামলার থেকে রক্ষা পেলেও নিজের জীবনকে তারা ঝুঁকিতে ফেলছেন। কেননা একটি ভালো মানের হেলমেট দুর্ঘটনায় রাইডারের জীবন বাঁচিয়ে দিতে সক্ষম।
হেলমেটের প্রকারভেদ
বাজারে পাঁচ ধরনের হেলমেট রয়েছে। সুবিধা অসুবিধা যাচাই করে এর থেকে আপনার উপযোগী হেলমেট নির্বাচন করতে পারেন। হেলমেটগুলো হচ্ছে-
১. ফুল ফেস হেলমেট, ২. ডুয়াল স্পোর্ট, ৩. হাফ শেল, ৪. মডুলার, ৫. ওপেন ফেস।
সবোর্চ্চ নিরাপত্তার জন্য কেমন হেলমেট প্রয়োজন
সবোর্চ্চ নিরাপত্তার জন্য অবশ্যই ফুল ফেস হেলমেট প্রয়োজন। এ ধরনের হেলমেট আপনার পূর্ণ নিরাপত্তা দিতে সক্ষম। আর লং ড্রাইভে বা হাইওয়েতে গেলে এর কোনো বিকল্প নেই। তবে সামান্য দূরত্বে যাওয়ার জন্য অর্ধেক মুখ আবৃত করে এমন হেলমেট ব্যবহার করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে রাস্তায় অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
হেলমেটের ফিতাও জরুরি
হেলমেটের ফিতা মাথার সাথে হেলমেটকে দৃঢ়ভাবে আটকে রাখে। তাই শক্ত ফিতার হেলমেট কেনা জরুরি। নকল ও নিম্নমানের হেলমেটের ফিতা দুর্ঘটনায় ছিঁড়ে যায়। ফলে রাইডারের মারাত্মক পরিণতি হতে পারে। এছাড়া প্রতিবার যাত্রা শুরুর আগে হেলমেটের ফিতা চেক করে নিতে হবে।
হেলমেটের উপাদান ও মান
এটি অবাক হওয়ার মতো বিষয় যে, হেলমেট নিমার্ণের উপাদানও নিরাপত্তার জন্য জরুরি। বেশির ভাগ হেলমেট তৈরি হয় পলিকার্বনেট, ফাইবারগ্লাস কম্পোসিট, এবং কার্বন ফাইবার দিয়ে। এসবের মধ্যে অনেকেই কার্বন ফাইবারের হেলমেটকে বিশেষ গুরুত্ব দেন।
আমাদের দেশে যত হেলমেট পাওয়া যায় সেগুলো অধিকাংশই চায়না, ভারত আর থাইল্যান্ড থেকে আমদানি করা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের দেশে হেলমেটের মান নির্ধারণ করার মত কোন প্রতিষ্ঠান নেই। অথচ হেলমেটের মান নিশ্চিত করতে Department Of Transport বা DOT এর স্টিকার লাগানো বাধ্যতামূলক করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তাই নিজের নিরাপত্তার জন্য মানসম্মত হেলমেট কেনাই বুদ্ধিমানের কাজ।
হেলমেট কিভাবে জীবন রক্ষা করে
আমাদের বাইক এক্সিডেন্টে প্রতি বছর যত মানুষের মৃত্যু হয়, তার ৬০ শতাংশ মৃত্যু কমিয়ে দেওয়া সম্ভব শুধু ভালো মানের হেলমেট ব্যবহার করে। কোনো বাইকের গতি যদি ঘণ্টায় ৬০-৭০ কিলোমিটার থাকাকালে বাইকার অন্য গাড়ির ধাক্কায় বা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে যান, সেক্ষেত্রে ভালো হেলমেট থাকলে তিনি শুধু আহত হবেন। কিন্তু হেলমেট না থাকলে বা মানহীন হেলমেট থাকলে মৃত্যুর সম্ভাবনা খুব বেশি। অতএব হেলেমেটের প্রয়োজনীয় বোঝার জন্য এই উদাহরণটুকুই যথেষ্ঠ।
রোগ প্রতিরোধে হেলমেট
অনেকেই আছেন যারা বিভিন্ন রকম অ্যালার্জীতে আক্রান্ত। একটু ধুলোবালি বা ঠান্ডা বাতাসে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ ক্ষেত্রে হেলমেটের ব্যবহার ওই রাইডারকে বেশ নিরাপত্তা দিতে পারে।
নিতে হবে হেলমেটের যত্ন
হেলমেট যেমন রাইডারকে নিরাপত্তা দেবে, রাইডারেরও উচিত হেলমেটের যত্ন নেওয়া। প্রত্যেকদিন ব্যবহারের পরে হেলমেট পরিষ্কার করতে হবে। ডিটারজেন্টে কোমল কাপড় ভিজিয়ে ময়লা মুছে ফেলতে হবে। এছাড়া প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার হেলমেট কড়া রোদে দিতে হবে। তাতে হেলমেটে থাকা জীবাণু মারা যাবে, একইসঙ্গে হেলমেটে দুর্গন্ধও হবে না।
মন্তব্য করুন