শুক্রবার, ২০২৪ সেপ্টেম্বর ২০, ৫ আশ্বিন ১৪৩১
#
রাউজান রাউজান

তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে এক যুবককে তুলে নিয়ে ,চার গ্রাম পুলিশের লাখটাকা মুক্তিপণের পরিকল্পনা বুমেরাং!

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাউজান
প্রকাশিত : বৃহস্পতিবার, ২০২৪ এপ্রিল ০৪, ০৬:০২ অপরাহ্ন
#
ছবি: রাউজানে অপহরণের মূলহোতা গ্রাম পুলিশ ও শাহাজান ও মো. জুয়েল।

নেশাগ্রস্থ অবস্থায় গ্রাম পুলিশের এক সদস্যকে চড় মারেন রাউজানের হলদিয়া ইউনিয়নের ২নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর সর্তা গ্রামের মহতের বাড়ীর প্রয়াত আবুল হোসেনের ছেলে মো. এরশাদ। এই ঘটনা যাতে বেশিদূর না গড়ায় সেজন্য দফারফা করতে এরশাদের কাছ থেকে ছয় হাজার টাকা নেয় গ্রাম পুলিশ ওসমান। পরে টাকা নিয়েও মো. এরশাদ নামের যুবককে তুলে নিয়ে নির্জন গহীনে নিয়ে গিয়ে ইউনিয়নের তিন গ্রাম পুলিশ মো. মো. মাসুদ  (৪০), ওসমান (৩৫), শাহাজান (৩৫) ও এক সহযোগী মিজানকে নিয়ে এরশাদের পরিবার থেকে লাখটাকা মুক্তিপণ আদায়ের ফাঁত পাতেন অপহরণের মূলহোতা রাউজান উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের গ্রাম পুলিশ মো. জুয়েল (৩০)।

অপহরণ পরবর্তী মুক্তিপন হিসেবে প্রথমে ১লাখ টাকা দাবি করা হলেও একটি কল রেকর্ডে অপহৃত এরশাদের স্বজনদের কাছ থেকে সর্বশেষ ২৫ হাজার টাকার রফাদফা প্রস্তাব দেয় জুয়েল।

পরে বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করা হলে চিকদাইর পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অপহৃত যুবক এরশাদকে উদ্ধারপূর্বক দুটি মোটরসাইকেল জব্দ করেন। এরশাদের স্ত্রী সেলিনা আকতার জানান, গত মঙ্গলবার  (২ এপ্রিল) গরুর জন্য ঘাস কাটতে ঘর থেকে বের হন এরশাদ। হলদিয়া ইউনিয়নের ২নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর সর্তা গ্রামের যাত্রী ছাউনির পার্শ্ববর্তী স্থান থেকে মোটরসাইকেল যোগে এরশাদকে উঠিয়ে রাউজান উপজেলার হলদিয়া রাবার বাগানের আমুক্কের টিলার গহীন এলাকায় নিয়ে তাকে আটকে রাখা হয়। গ্রাম পুলিশের সদস্য মাসুদএরশাদকে পাহাড়া দেন।

মূলহোতা জুয়েল ও শাহাজান এরশাদের শ্বশুর বাড়িতে যোগাযোগ করে মুক্তিপণের টাকা চাইতে থাকে। এই ঘটনায় পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা সাজানো হয় গ্রাম  পুলিশ মাসুদকে। পুলিশ পরিচয় দিয়ে এরশাদের স্ত্রী ও শ্বাশুড়ীর সঙ্গে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করে টাকা দাবি করতেন তারা। এরশাদের অসহায় স্ত্রী সেলিনা আকতার নিরুপায় হয়ে তার বাপের বাড়িতে গেলে অপহরণকারী গ্রাম পুলিশ জুয়েল এরশাদের শ্বাশুরি হোসেন আরা বেগমের কাছে ১লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে উর্ধ্বতন পুলিশকে প্রদান করার কথা বলে। ২৫ হাজার টাকায় মুক্তি দিতে রাজি হয় তারা।  মুক্তিপণ দাবির কল রেকর্ডে জুয়েলের কণ্ঠে শুনা যায়, অপহৃত যুবক এরশাদ তার পরিচিত এক ব্যক্তির কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা আনবেন, আপনারা ১৫ হাজার টাকা জোগার করে দিন। অপরপ্রান্তে থাকা এরশাদের শ্বাশুরী হোসনে আরা বেগম অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বলতে শুনা যায়, তার নিজের বয়স্কভাতার টাকাসহ যে কোনোভাবে টাকা যোগার করে দিবে, তার জামাতাকে যেন মুক্তি দেওয়া হয়।

ভুক্তভোগী এরশাদ বলেন, আমাকে অপহরণ করে মোটরসাইকেলে করে নির্জন বাগানে নিয়ে যাওয়া হয়। মুক্তিপণ হিসেবে দাবি করা হয় ১ লাখ টাকা। টাকা না দিলে তাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি প্রদান করে। বিষয়টি থানা পুলিশ কিভাবে জেনেছিল জানিনা। ইফতারের আগমুহুর্তে পুলিশের উপস্থিতি দেখতে পেয়ে গ্রাম পুলিশসহ অপহরণকারীরা দুটি মোটরসাইকেল রেখে পালিয়ে যায়। পরে আমাকে উদ্ধার করে পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে গিয়ে আমার স্ত্রীর জিম্মায় আমি বাড়ি চলে আসি। থানা পুলিশের কথা মতো লিখিত অভিযোগ দিয়েছি, পূর্বে গ্রাম পুলিশ ওসমান ৬ হাজার টাকা চাঁদা নিয়েছিল। হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদে গেলে মূলহোতা গ্রাম পুলিশ জুয়েল ও শাহাজানের দেখা মিলে। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইতেই তারা দুইজন পরিষদ থেকে দ্রুত সটকে পড়ে। পরে তাদের ব্যবহৃত মুঠোফোনও বন্ধ পাওয়া যায়। তাই তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইলসাম বলেন,এ ঘটনার পর বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) চার গ্রাম পুলিশকে চাকুরী হতে অব্যহতি দেওয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করেছি। যেহেতু তারা অপহরণ পরবর্তী মুক্তিপণ দাবি করেছে সেহেতু তারা অপরাধ করেছে। তবে এরশাদও একজন খারাপ প্রকৃতির লোক বলে দাবি তার। চিকদাইর পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) হোসাইন বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে হলদিয়া রাবার বাগানের গহীন অরণ্যে পুলিশ নিয়ে অভিযান চালানো হয়।

আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে মো. এরশাদকে রেখে সেখানে থাকার লোকজন পালিয়ে যাওয়ায় তাদের আটক করা সম্ভব হয়নি। পরে মো. এরশাদকে উদ্ধার এবং দুটি মোটরসাইকেল জব্দ করেছি। চিকদাইর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আবদুল কাদের বলেন, এরশাদকে উদ্ধারের পর তার স্ত্রীর জিম্মায় দেয়া হয়। এ প্রসঙ্গে রাউজান থানার ওসি জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, 'তিন গ্রাম পুলিশের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রসঙ্গত অপহরণের মূলহোতা গ্রাম পুলিশ জুয়েল নিরিহ মানুষকে ফাঁদে ফেলে অর্থ আদায়সহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িত।

স্থানীয় সংবাদকর্মী শাহাদাত হোসেন সাজ্জাদ বলেন, সম্প্রতি তার এক নিকটাত্মীয় দোকানঘর নির্মাণ করার সময় তার আত্মীয় থেকে ছয় হাজার টাকা দাবী করেন গ্রাম পুলিশ জুয়েল।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

আরও খবর

Video