শুক্রবার, ২০২৪ সেপ্টেম্বর ২০, ৫ আশ্বিন ১৪৩১
#
খেলা খেলা

শুভ জন্মদিন লিওনেল মেসি ‘দ্য ম্যাজিশিয়ান’(ভিডিও)

নিজস্ব প্রতিবেদক | টুয়েন্টিফোর টিভি
প্রকাশিত : বৃহস্পতিবার, ২০২১ Jun ২৪, ১১:৩৫ পূর্বাহ্ন
#
যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের মোর্তাজা আহমাদি নামের পাঁচ বছরের পিচ্চি ছেলেটার কথা মনে আছে? ওই যে ‘ফুটবলের সবচেয়ে দুঃখজনক জার্সি গায়ে ছোট্ট মেসি’ এমন শিরোনামে পুরো বিশ্বে হইচই ফেলে দিয়েছিল যে। যার স্বপ্ন ছিল লিওনেল মেসি। মাঝরাতে ঘুম থেকে উঠে ছেলেটা কান্নাকাটি করতো….যে সে মেসির সাথে দেখা করবে। অনেক কষ্টে যখন তাকে বোঝানো গেল লিও নামের এই গ্রহ তাদের পৃথিবী থেকে অনেক দূরে; তখন মেসির জার্সির জন্যে বায়না শুরু করতো। যার ঘরে অন্ন জোগাড় করার অর্থ নেই; জার্সি কোথা থেকে আসবে? বড় ভাই হামায়োন তার এই আবদার পূরণ করল। তাকে তৈরি করে দিয়েছিল প্লাস্টিকের ব্যাগ কেটে বানানো জার্সি, যার পিছনে লেখা ছিল শুধুই মেসি। আর বালক মোর্তাজা সেটি পেয়েই কি খুশি; তার ঠোঁটে খেলেছিল এক পরশ নির্মল হাসি। যার তৃপ্তির হাসি, নিষ্পাপ মনে খুশি ছোঁয়া লেগে বেরিয়ে এসেছিল ঝর্ণাধারার মতোই।
তার বক্তব্য ছিল যেমন, “আমাদের বাসার কাছে খেলার কোন মাঠ নাই। আমার একটা ফুটবল ছিল তাও নষ্ট হয়ে গেছে। আমি মেসিকে পছন্দ করি। সে অনেক ভালো খেলে। আমিও বড় হয়ে তার মত হতে চাই। আমার ভাইয়া আমাকে যে জার্সিটি বানিয়ে দিয়েছে ওটা আমার অনেক পছন্দ।”
মোর্তজা ঠিক কতটা ভালোবেসেছিল মেসিকে একবার ভাবুনতো। আমাদের মতই রক্তে মাংসে গড়া একজন মানুষও ঠিক কতটা অনিন্দ্য সুন্দর ফুটবল খেলে যে, এই ছোট্ট বাচ্চা ছেলেও মেসিতে এত মাতাল হয়ে গেল। মেসি এমনই সুন্দর। আপনার জীবনের সবচেয়ে বড় দুঃখ আর হতাশা মুহূর্তই এক নান্দনিক ড্রিবলিংয়ে ভুলিয়ে দেওয়ার নাম মেসি। বাঁ পা দিয়ে সবুজ মাঠে সবচেয়ে সুন্দর ছবি আঁকা শিল্পীর নাম মেসি। একবিংশ শতাব্দীর ইউরোপের প্রায় সব মাস্টারমাইন্ড কোচকে তাদের ডিফেন্স মেকানিজম বদল করতে বাধ্য করা মানুষটি হলো মেসি।

আপনি মেসিকে ফুটবল মাঠের পিকাসো, শেক্সপিয়র, মোহাম্মদ আলী, জিউস কিংবা সংগীতের মোজার্টে ক্লাসিক -কোন রকম অভিধানেই বর্ণনা করতে পারবেন না। পেপ গার্দিওয়ালা তাই যথার্থই বলেছিলেন- “Don’t try to described him, Just watch him.” ফুটবল শুধু একটি খেলা নয়; বরং এই পৃথিবীকে পুরো মোহাবিষ্ট করার সচল এক প্রক্রিয়া।
যার আবিষ্ট হয়ে বুসকেতস বলেছিলেন, “Football is better than sex. In football happiness lasts three or four days. Sex on the other hand, can last just 1 minutes.”
তার সবচেয়ে সুন্দর উদাহরণ মেসি। লাজুক, স্বল্পভাষী, বাঁ পায়ের শ্রেষ্ঠ জাদু, বাঁক খাওয়ানো ফ্রিকিক, বিজ্ঞান পরাস্ত করা ড্রিবিলিং দু’ চোখের অর্গাজমের জন্য মেসি যেন সবচেয়ে সুন্দর প্যাকেজ। এই মেসির সবচেয়ে বড় গুণ তার সমালোচকদের কাছ থেকেও প্রশংশা আদায় করে করে নেওয়া। কট্টরতম নিন্দুকের মুখ থেকেও বের করতে পারা- ‘ইশশ! কি সুন্দর ফুটবল খেলে লোকটি।’
একজন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ভক্তের সবচেয়ে বড় অসুবিধা কি জানেন? হয়তো আপনি লিওনেল মেসিকে ভালোবাসেন; তার এই শিল্পের ছোঁয়াটা আপনিও পছন্দ করেন; আপনি তার ভক্ত হতে চান। কিন্তু, কোথাও না কোথাও শেষ পর্যন্ত আপনাকে ঠিকই পিছিয়ে আসতে হয়। কারণ রোনালদো আপনার প্রথম ভালোবাসা; তার প্রতি আছে আলাদা দায়বদ্ধতা। মেসি যতই লাস্যময়ী হোক না কেন, আপনাকে ঠিকই যেন সংযত হতে হয়। ফুটবল রাইভ্যালিটির সুন্দরতম রোমান্টিসিজম বোধহয় এখানেই! আমি মেসির জন্য রোনালদোকে বারবার ফুটবলের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত পুরস্কারগুলো প্রায় শূন্য হাতে ফিরতে দেখেছি। মেসিকে কেন্দ্র করে গার্দিওয়ালার বার্সেলোনা রোনালদোকে বারবার হিউমিলিয়েটেড করতে দেখেছি। ইউরোপীয়ান ক্লাব ফুটবলের সবচেয়ে বড় আসরে এই মেসির অবিশ্বাস্য হেড গোলে রোনালদোর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে পরাস্ত হতে দেখেছি।

আমি জানি, মেসি না থাকলে রোনালদোর শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে হয়তো কোন প্রশ্ন উঠতে পারত না। একবিংশ শতাব্দীর অবিসংবাদিত রাজাকে তার শ্রেষ্ঠত্ব বারবার প্রমাণও করা লাগত না। তাই মেসির প্রতি আমার রাগ, অভিমান ও ক্ষোভ আছে। আমি মেসিকে ঘৃণা করি। কিন্তু, তার অসাধারণ ফুটবল খেলা থেকে আর বঞ্চিত হতে চাইনা আমি মেসি শ্রেষ্ঠত্ব কোনভাবে এড়িয়ে চলতে পারি না! অ্যালিসনের বিপক্ষে ন্যু ক্যাম্পে সেই আইকনিক ফ্রিকিক গোল এখনও চোখে ভাসে। ব্রাজিলিয়ান গোলরক্ষকের অসাধারণ পজিশন সেন্স থাকার পরও মেসির বাঁ পায়ে বাঁকানো ফ্রিকিক আমাকে এতটা মুগ্ধ করেছিল; …মাফ করবেন, গোল করার পর যে বেটে লোকটি সবুজ গালিচার উপর মুষ্টিবদ্ধ হয়ে বসেছিল আমার সত্যিই তাকে ভিনগ্রহের মানুষ মনে হয়েছিল। আমাদের মতই রক্তেমাংসে গড়া কোন মানুষ এতটা সুন্দর গোল করতে পারে কিভাবে? অবশ্য যে মানুষটি এক মৌসুমে নব্বইয়ের বেশি গোল করতে পারে। যিনি এক মৌসুমে একশোর বেশি গোল কন্ট্রিবিউট করতে পারে তার দ্বারা সবই সম্ভব। মেসি তো এমনই।

শখের ফুটবল কোচ হলেও এ দিয়ে জীবন ধারণ করা সম্ভব ছিল না মেসির বাবার হোর্হের, সম্ভব ছিল না পরিবারের চাওয়া পূরণ করা। আর তাই কারখানার শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে হয়েছে হোর্হেকে। মেসির মা সেলিয়াও খণ্ডকালীন পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করেছেন। ১১ বছর বয়সে মেসির গ্রোথ হরমোনের ঘাটতির অসুখ ধরা পড়ে। মাসে ৯০০ ডলারের ব্যয়বহুল এই চিকিৎসার ব্যয় মেটানো সম্ভব ছিল না মেসির পরিবারের পক্ষে। রোজারিওর দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া গ্যারেজে কাজ করা বাবা ও পরিচ্ছন্নকর্মী মায়ের ‘Growth hormone Deficiency syndrome’ ভোগা সেই ছেলেটি আজ ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে ধনী ফুটবলারদের একজন। ফোর্বস সাময়িকী কর্তৃক প্রকাশিত, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পাওয়া ফুটবলারও। ৩৩টি বসন্ত পার হয়ে ফুটবল জীবনের প্রৌঢ়ত্বেও এখনো সমান সাবলীল মেসি। গতি হয়তো কমেছে, কিন্ত আঠারো গজ বক্সে মেসির পায়ে বল পড়লেই যেকোনো গোলরক্ষক, ডিফেন্ডারের ঘুম উড়ে যায়।
ক্যারিয়ারের পড়ন্ত বেলায়ও নিজের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বীকে ছাড়িয়ে নিজেকে সময়ের অন্যতম সেরা ফ্রিকিক টেকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। হয়তো এই ম্যাজিক আমরা বেশিদিন দেখতে পারবো না। কালের নিয়মে কয়েক বছর পর প্রিয় বুট জোড়া নিয়ে বাড়ির ড্রেসিংরুমে ফিরতে হবে। হাজার হাজার ভক্ত চোখের জল ফেলবে মহাতারকার প্রস্থানে। কিন্ত একটা প্রজন্ম তাদের পরবর্তী প্রজন্মকে ঠিকই বলতে পারবে, “আমরা লিওনেল মেসিকে দেখেছি। আমরা মেসিকে দেখে বাঁচতে শিখেছি।” চৌত্রিশতম জন্মদিনে ফুটবল ক্ষুদে জাদুকরের জন্য রইলো অনেক শুভকামনা।

শুভ জন্মদিন, এলএমটেন।

https://youtu.be/JLevTc5oyrg
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

আরও খবর

Video