বৃহস্পতিবার, ২০২৫ মে ১৫, ৩১ বৈশাখ ১৪৩২
#
জেলা-উপজেলা জেলা-উপজেলা

বাঘাইছড়িতে বিদ্যুৎ বিভ্রাট, জনমনে অসন্তোষ

প্রীতিশ চাকমা, বাঘাইছড়ি (রাঙামাটি) প্রতিনিধি :
প্রকাশিত : শুক্রবার, ২০২১ আগস্ট ০৬, ১২:৩৬ অপরাহ্ন
#
ছবি : সংগৃহীত।

সরকারের পক্ষ থেকে দেশে বিদ্যুৎ'র ঘাটতি নেই বলে ঘোষণা করা হলেও রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার  বাস্তব চিত্র ভিন্ন।বর্তমানে দেশে প্রচন্ড তাপদাহ'র কারনে, মানুষের জীবনে চরম অস্বত্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।সারাদিনে এখানে বিদ্যুৎ কখন যায়,আবার কখন যে আসবে কেউ জানেনা। ঘন ঘন লোড শেডিং ও লো-ভল্টেজের কারণে জনজীবনে চরম অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে ।

এতে করে অনেকের ফ্রিজ, টেলিভিশন সহ নানা বৈদ্যতিক যন্ত্র বিকল হয়ে পড়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়াও গ্রাহকের মিটার রিডিংয়ের অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের অভিযোগ রয়েছে অহরহ। যার ফলে সরকারের বিদ্যুৎ ঘাটতি নেই ঘোষনাকে মিথ্যা ও প্রপাকান্ড বলে আখ্যায়িত করছেন স্থানীয় ভুক্তভোগীরা।

এনিয়ে স্থানীয় সরকার দলীয় রাজনীতির সাথে সম্পৃক্তরা ও হতাশায় ভুগছেন বলে জানা গেছে।  মারিশ্যা বিদ্যুৎ বিতরণ কেন্দ্রের, বিদ্যুৎ বিতরণ ও সেবা নিশ্চিত প্রদানে। প্রতিনিয়ত নানা অজুহাতে গ্রাহক হয়রানীর শিকার  হচ্ছে এমন অভিযোগও দীর্ঘদিনের।  

রাঙামাটি জেলার  প্রত্যন্ত ও দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল বাঘাইছড়িবাসীর। জানা যায়, ওই উপজেলায়  প্রায় দেড় লক্ষ মানুষের বসবাস রয়েছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল হওয়া সত্ত্বেও  যোগাযোগ ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া  অত্র এলাকার মানুষের কথা বিবেচনায় রেখে ১১ হাজারের( টু পেইজ) ভোল্টেজ বৈদ্যুতিক লাইনকে, ফোর ফেইজ  ৩৩ হাজার কেভি সাব-ষ্টেশন বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উন্নিত করে বর্তমান সরকার।

জানা যায়, বাঘাইছড়িতে সর্বপ্রথম বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপন করে চট্রগ্রামের হাটহাজারী জিরো মাইল বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে। বাঘাইছড়ি থেকে চট্রগ্রামের  হাটহাজারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুরত্ব, বেশি ও গ্রাহক হায়রানীর দরুণ সরকার ২০১৬ সালে শেষের দিকে বাঘাইছড়ি উপজেলাকে ৩৩ হাজার কেভি ভোল্টের (ফোর ফেইজ)লাইনের সাব-ষ্টেশনে উন্নিত করেন রাঙামাটির কাপ্তাই জল বিদ্যুৎ কেন্দ্রস্থল থেকে।

 জানা যায়,বর্তমানে কাপ্তাই জল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সাথে সংযুক্ত পূর্বক খাগড়াছড়ির ঠাকুর ছড়া স্থলাভিষক্ত  বিদ্যুৎ বিতরণ কেন্দ্র থেকে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলায় ৩৩ কেভি বিদ্যুৎ সাব-ষ্টেশন ও দীঘিনালা বিদ্যুৎ সাব-ষ্টেশন থেকে বাঘাইছড়ি  উপজেলায় ৩৩ হাজার কেভি বিদ্যুৎ লাইন সংযোগ স্থাপন করা হয়। বাঘাইছড়ি উপজেলাটি  পাহাড়ের আকাঁবাকা ও সুউচ্চ পাহাড়ি জনপথ হওয়ার দরুণ বাঘাইছড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে  বিতরণ ও বৈদ্যুতিক লাইন  নিয়নন্ত্রণ  রাখতে দীঘিনালা বিদ্যুৎ সাব ষ্টেশনে একটি রিডিং মিটার ও ১টি ফিটার সুইচ রয়েছে । 

 সূত্রমতে,বাঘাইছড়ি উপজেলায় প্রায় সাড়ে ৫ হাজার বৈধ বিদ্যুৎ গ্রাহক রয়েছেন। বিদ্যুৎ বিতরণ কেন্দ্র বাঘাইছড়ির মারিশ্যা সাব-ষ্টেশন কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অভিযোগ ।

সামান্য বৃষ্টিপাত বা বাতাস হলে বিদ্যুৎ মিলেনা বাঘাইছড়ি বাসীর ভাগ্যে। কোন কারণ ছাড়াই এখানে  বিদ্যুৎ আসা যাওয়া করে, প্রাকৃতিক বৈরী পরিবেশ স্থিতিশীল হলেও বৈদ্যুতিক আলো জ্বলে না। এই উপজেলায় বিদ্যুৎ সংযোগ একবার বিচ্ছিন্ন হলে আবার কখন বিদ্যুৎ লাইন চালু হবে তার সঠিক উত্তর বিদ্যুৎ বিভাগের কারো জানা থাকেনা। কখনো কখনো দোষ চাপিয়ে দেওয়া হয় দীঘিনালা বিদ্যুৎ বিভাগের উপর। অথচ দীঘিনালা বিদ্যুৎ বিভাগ কিছুই জানেনা এব্যাপারে। মারিশ্যা বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে যদি বলা হয় ফিটার সুইচ বন্ধ রাখতে ঠিক তখন তারা এই দায়িত্ব টুকু পালন করে বলে জানা গেছে। সংযোগ লাইনের কোথায় ফল্ট হয়েছে তা ক্ষতিয়ে না দেখে নিজেদের বাপদাদার  সম্পত্তির মত মন গড়া ভাবে চলে বিদ্যুৎ বিতরণ ও বিচ্ছিন্নকরন।তাদের মনগড়া ভাবে চলে বিদ্যুৎ বিতরণ।

জানা যায়, কোন গ্রাহক মিটার সংযোগ নিতে গেলে সরকারী নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে সরকারি মূল্যের বেশি টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। কোন স্থানের বিদ্যুতিক ট্রান্সমিটার নষ্ট হলে কখনো সরকারি উদ্যোগে দিতে দেখা না গেলেও এলাকাবাসী টাকা উত্তোলন করে ৬০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকার বিনিময়ে উক্ত স্থানে ট্রান্সমিটার সংযোগ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় এলাকাবাসীর। এদের আচরণে যেকারো মনে হতে পারে যেন মগেরমুলুক পরিণত সরকারের এমন গুরুত্বপূর্ণ বিভাগটি।  

অভিযোগে জানা যায়, উপজেলায় অসংখ্য ভৌতিক লাইন চালু  রাখার ফলে প্রকৃত বৈধ সংযোগকারীদের গুনতে হয় নিজ মিটার রিডিংয়ের বেশি বিদ্যুৎ বিল।এমন অভিযোগের যেন অন্ত নেই, কে শুনে কার কথা। বিদ্যুৎ বিভাগের এমন অভিযোগ হরহামেশা হয়ে থাকে তাদের পক্ষ থেকে সমাধান রয়েছে মাত্র একটি সূত্রে  বিল অনুযায়ে  পরিশোধ করুন আগামী মাসে ইউনিট রিডিং সমন্নয় করে দেওয়া হবে। আবার কখনো কখনো ২ থেকে ৩-৪ মাস পর্যন্ত সময় লেগে যায় ভৌতিক বিলের সমাধান করতে। এসমস্যা ভূল বশতঃ এক বা দুই জনের সাথে নয় প্রায় সকল গ্রাহককে ভুগতে হয় এমন ভোগান্তিতে।

সূত্রমতে জানা যায়,বাঘাইছড়িতে বিভিন্ন স-মিল থেকে শুরু করে বিভিন্ন জন ব্যক্তি বিশেষের  ক্ষমতার আস্ফলানে ও বিদ্যুৎ বিভাগের অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপন করে নির্ভয়ে বৈদ্যতিক লাইন চালু রেখেছেন কতিপয় ব্যক্তিরা বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীদের সহযোগীতায় । অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগকারীদের বিরুদ্ধে  লাইন  বিচ্ছিন্নকরণের কোন  অভিযান মারিশ্যা বিদ্যুৎ বিভাগকে করতে দেখা যায়নি বলে একাধিক সূত্র থেকে বিষয়টা জানা যায়।  

অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দেখেও না দেখার ভান করে এবং অবৈধ সংযোগ কারীদের সাথে বিদ্যুৎ বিভাগের কতিপয় কর্মকর্তা কর্মচারীদের সখ্যতার যোগসাযশে  অর্থ ভাগাভাগীর অভিযোগ ও রয়েছে।এহেন পরিস্থিতে স্থানীয়দের  মাঝে চরম ক্ষোভ হতাশা সহ নানা  অভিযোগ বিদ্যুৎ বিভাগের প্রতি থাকলেও প্রকৃত কোন সমাধানের পথ অধ্যবধি দেখা মিলেনি বলে জানা গেছে ভোক্তভুগী মহলে। 

সরকারের নিরবিচ্ছিন্ন ও শতভাগ  বিদ্যুৎ বিতরণ প্রতিশ্রুতি জনগনের কাছে এখন নিছক  অভিনয় মাত্র। সরকারের প্রতিশ্রুতি বিদ্যুৎ বিভাগের অনিয়মে,  মনে হবে সরকারের দায়িত্বের প্রতি,মারিশ্যা বিদ্যুৎ বিভাগের প্রতিহিংসার আশফলান স্বরুপ এমন মন্তব্য সচেতন মহলের।

এব্যাপারে মারিশ্যা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আবাসিক কর্মকর্তা (আর -ই) সুগতম চাকমা, অন্যসব অভিযোগ এড়িয়ে গিয়ে, অনিয়মিত বিদ্যুৎ সরবরাহ কিছুটা দীঘিনালা বিদ্যুৎ বিভাগের উপর দায় চাপিয়ে বলেন,ইতিমধ্যে মারিশ্যা, দীঘিনালা ও খাগড়াছড়ির বৈদ্যুতিক লাইনের পার্শ্বে গাছ কাটা শুরু হয়েছে। এখন থেকে যথাসময়ে গ্রাহকের নিরবিচ্ছিন্ন  বিদ্যুৎ সরবরাহ ও বিতরণ নিশ্চিত হবে বলে তিনি দাবী করেন।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

আরও খবর

Video