বগুড়া থেকে যাত্রী নিয়ে ঢাকায় আসার পথে ‘সোনার তরী’ পরিবহনের একটি বাসে ডাকাতির সময় দুই নারী যাত্রী ধর্ষণের শিকার হন বলে তথ্য পেয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। ওই বাসে থাকা দুই তরুণীকে ডাকাতরা গণধর্ষণ করে এবং তাদের স্বর্ণালংকার, মোবাইল ফোনসহ সব কেড়ে নিয়ে সড়কের ফাঁকা জায়গায় নামিয়ে দেয়।
গত ১৪ জানুয়ারি এমন অপকর্ম করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় ওই বাসের চালক পাবেল বাদী হয়ে ১৮ জানুয়ারি সাভার থানায় একটি ডাকাতি মামলা (নং ৩০) করেন।
শুধু তাই নয়, সোনার তরী বাসে ডাকাতির সময় টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে সড়কে একটি তেলবাহী লরিকে ব্যারিকেড দিয়ে চালক ও সহযোগীকে ধারালো অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ডাকাতরা। পরে তিন ডাকাত ওই লরি নিয়ে নারায়ণগঞ্জে যায়। তবে তেল বিক্রি করতে না পেরে সেটি রাস্তায় ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। সেই ঘটনায় ১৬ জানুয়ারি ওই লরির মালিক ফয়সাল আহমেদ হৃদয়ও বাদী হয়ে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানায় একটি মামলা (নং ১৬) করেন।
এছাড়া গত ২০ জানুয়ারি রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর থেকে আর কে আর পরিবহনে উঠে ডাকাত দলের কবলে পড়েন চিকিৎসক মো. শরিফুল ইসলাম ও তার বন্ধু। রাতভর চলন্ত বাস ঘুরিয়ে মারধর ও নগদ টাকা, মোবাইল ফোন ও ব্যাংকের এটিএম কার্ড লুটে নিয়ে মাতুয়াইলে সড়কের পাশে তাদের ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। মূলত এই ঘটনার তদন্তে নেমে ধারাবাহিক অভিযানে ডাকাত দলের ১৬ সদস্যকে গ্রেফতারের পর রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য জানতে পারে ঢাকা ডিএমপির গোয়েন্দা তেজগাঁও বিভাগ।
এ বিষয়ে ডিএমপির গোয়েন্দা তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মো. শাহাদত হোসেন সুমা বাংলানিউজকে বলেন, ঢাকার আশুলিয়া, সাভার, কালিয়াকৈর, মির্জাপুর এলাকায় সাতটি ডাকাতির ঘটনায় মামলা হয়। এসব ঘটনায় জড়িত ডাকাত সদস্যদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, একটি বাসে ডাকাতির ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে আমরা ১৬ ডাকাতকে গ্রেফতার করেছি। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে নিজেরাই সোনার তরী বাসে ডাকাতি ও দুই তরুণীকে ধর্ষণের বিষয়টি স্বীকার করেছে তারা। সম্পূর্ণ বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা পেতে ভুক্তভোগীদের আমরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানায়, গত ১৪ জানুয়ারি বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বগুড়ার ঠনঠনিয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে ৩৫ জন যাত্রী নিয়ে সোনারতরী পরিবহনের একটি বাস (ঢাকা মেট্রো-ব-১১-১৫০৫) নিয়ে ঢাকার গাবতলীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন চালক পাভেল। ওই বাসে ছিলেন সুপারভাইজার শহিদুল ইসলাম ও হেলপার শাহীন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে প্রথমে ৫ জন একটু পরে আরও ২ ডাকাত যাত্রীবেশে ওই বাসে ওঠে। বাসটি সাভারের গেন্ডায় পৌঁছালে বাস থেকে দুই যাত্রী নেমে যায়। এরপর রাত সাড়ে ১১টার দিকে ডাকাত দলের দুই সদস্য ধারালো অস্ত্র দিয়ে যাত্রী ও চালকদের জিম্মি করে বাসটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। এরপর বাস ঘুরিয়ে টাঙ্গাইলের দিকে যেতে থাকে। ওই বাসের সব যাত্রীদের হাত ও মুখ কস্টেপ দিয়ে বেঁধে টাকা-পয়সা, মোবাইলসহ সব কেড়ে নেয়। ঘটনার সময় ওই বাসে মায়ের সঙ্গে এক তরুণী এবং চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গে আরেক তরুণী বগুড়া থেকে ঢাকায় আসছিলেন। ডাকাত দলের সদস্যরা রাতের কোনো এক সময়ে চলন্ত বাসের পেছনের সিটে দুই তরুণীকে নিয়ে ধর্ষণ করে।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানায়, জাকির ও সুমন নামে দুই ডাকাত ১৪ জানুয়ারি রাতে সোনার তরী বাসে ডাকাতির ঘটনায় নেতৃত্ব দেয়। তাদের সঙ্গে শাহীন, রাসেল, নাইম, আলমগীর, মজিদ, মজিদুল এলেঙ্গা গিয়ে মিলিত হয়।
এদিকে সিরাজগঞ্জ থেকে দলের আরেক সদস্য রফিক এলেঙ্গায় এসে যোগ দেয়। ডাকাতির উদ্দেশ্যে তারা সোনার তরী বাসে বাসে ওঠে। জাকির ও সুমন দুধর্ষ ডাকাত। সোনার তরী বাসে ডাকাতির ঘটনায় জড়িত ছয় জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে দলের আরও চার সদস্য জাকির, সুমন, শাহীন ও কবির পলাতক রয়েছে। বাকিদের গ্রেফতার অভিযান চলছে।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, গ্রেফতার হওয়া আসামি রাসেল, নাইম ও রফিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, সোনার তরী বাসে ডাকাতির সময় সব যাত্রীকে যখন হাত ও মুখ বেঁধে ফেলা হয় তখন সুমন বাসের চালকের সিটে ছিল। প্রথমে জাকির এক তরুণীকে বাসের পেছনের সিটে নিয়ে যায় এবং ধর্ষণ করে। এরপর জাকির গিয়ে সুমনকে পাঠায়। একই সঙ্গে রাসেল, শাহীন ও রফিক বাসে থাকা আরেক তরুণীসহ দুই তরুণীকে পেছনে নিয়ে ধর্ষণ করে। আসামিরা জানায়, তরুণীর একজনের সঙ্গে তার বাবা-মা এবং অন্য জনের সঙ্গে তার চাচাতো ভাই ছিলেন। ধর্ষণের সময় দুই তরুণীর হাত ও মুখ বেঁধে রাখা হয়। ডাকাতি ও ধর্ষণ শেষে তিন নারীকে একটি ফাঁকা জায়গায় বাস থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। আর অন্য যাত্রীদের সড়কে বিভিন্ন স্থানে নামিয়ে দেওয়া হয়।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছে, গ্রেফতার আসামিদের দ্বিতীয় দফায়র রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ডাকাতির এসব ঘটনায় কার কী ভূমিকা ছিল এবং দলের আরও সদস্যদের অবস্থান সম্পর্কে জানতে তাদের রিমান্ডে নেওয়া হয়।
মন্তব্য করুন