২৫ টাকা কেজি চাল, ১৫ টাকায় পেঁয়াজ, ১০ টাকায় আলু আর সয়াবিন তেলের লিটার ১২০ টাকা! ভুল না, ঠিকঠাকই পড়েছেন। ইচ্ছা করেই ব্যবসায় ঠকতে থরেথরে নিত্যপণ্যের পসরা নিয়ে বসেছে যশোরের 'আইডিয়া সমাজ কল্যাণ সংস্থা'। তাদের এই আয়োজনের নাম 'আইডিয়া লস প্রজেক্ট'। রমজান সামনে রেখে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারকে বাজারের চেয়ে প্রায় অর্ধেক দামে নিত্যপণ্য সরবরাহ শুরু করেছে সংগঠনটি। 'মানব কল্যাণে আমরা ঠকতে চাই' স্লোগান দিয়ে যশোর শহরের খড়কি এলাকার আইডিয়া পিঠাপার্কে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে আনুষ্ঠানিকভাবে পণ্য বিক্রির কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
আয়োজকরা জানান, পুরো রমজানে এই প্রজেক্টের আওতায় প্রায় ৫০০ পরিবারের কাছে লোকসানে পণ্য বিক্রি করা হবে। পরিবারপ্রতি ৫০ টাকা কেজি দরের চাল ২৫ টাকায় পাঁচ কেজি, ১৬৮ টাকা লিটারের সয়াবিন তেল ১২০ টাকায়, ১৫০ টাকার খেজুর ৮০ টাকায়, ৪০ টাকা দামের ২ কেজি আলু ২০ টাকায়, ৫০ টাকার চিড়া ৩৫ টাকায়, ৮০ টাকা কেজির ছোলা ৫০ টাকায়, ৮০ টাকা কেজি দরের চিনি ৫০ টাকায়, ৯০ টাকা কেজি দরের মসুর ডাল ৬০ টাকায় এবং ৩০ টাকা কেজি দরের পেঁয়াজ ১৫ টাকায় দেওয়া হচ্ছে। পুরো প্যাকেজের দাম পড়বে ৫৫৫ টাকা। বাজার থেকে সমপরিমাণ পণ্য কিনতে গেলে গুনতে হবে অন্তত ৯৪০ টাকা। প্রতি পরিবার সপ্তাহে একবার করে চার সপ্তাহে চারবার এই পণ্য কেনার সুযোগ পাবেন। কেউ চাইলে সব একসঙ্গে না কিনে প্রয়োজনীয় পণ্য আলাদা করে নিতে পারবেন।
আইডিয়া লস প্রজেক্টের কো-অর্ডিনেটর সংস্থার সাবেক সভাপতি হারুন অর রশিদ জানান, আইডিয়া সমাজ কল্যাণ সংস্থা শিক্ষার্থীদের পরিচালিত সমাজকল্যাণমূলক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। রমজান উপলক্ষে শিক্ষার্থীরা 'লস' করার মানসিকতা নিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ব্যবসা করছেন। সহজ কথায়, তারা বেশি দামে জিনিস কিনে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের মাঝে কম দামে বিক্রি করছেন। এভাবে পুরো রমজানজুড়ে এলাকার নির্দিষ্ট নিম্ন ও মধ্যবিত্তের মাঝে কম দামে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি করতে করতে ঈদের আগের সপ্তাহে তাদের মূলধন শেষ হয়ে যাবে।
আইডিয়া সমাজ কল্যাণ সংস্থার প্রধান উপদেষ্টা যশোর সরকারি এমএম কলেজের সহকারী অধ্যাপক হামিদুল হক শাহীন বলেন, বিশ্বের প্রায় সব মুসলিম দেশেই রমজান এলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমে, বাংলাদেশে বাড়ে। রমজানে সংযম ও আত্মশুদ্ধির সব শিক্ষাকে ভুলে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি ও মজুতদারির মাধ্যমে সীমাহীন লাভের লোভই এর জন্য দায়ী। এ সংকটের শিকার মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তরা। নিম্নবিত্ত মানুষ সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন ত্রাণ সুবিধার জন্য মানুষের কাছে হাত পাততে পারলেও চক্ষুলজ্জায় মধ্যবিত্তরা তাদের হাহাকার বুকে পুষে রাখেন। 'আইডিয়া লস প্রজেক্ট' পরোক্ষভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে দাম সমাজের মধ্যবিত্ত শ্রেণির সহনশীলতার মধ্যে নিয়ে আসার একটি প্রকল্প।
সহকারী অধ্যাপক হামিদুল হক শাহীন আরও বলেন, শিক্ষার্থীরা 'লস' করবে সমাজের লাভের জন্য। আর সমাজটা আমাদের সবার। মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণি, যারা কারও কাছেই হাত পাততে পারে না, আবার কারও অনুদানও নিতে লজ্জাবোধ করে, তাদের সসম্মানে ক্রয়ক্ষমতা ফিরিয়ে দিয়ে শিক্ষার্থীরা তাদের 'লস'কে সাদকাহ হিসেবে বিবেচনা করবেন।
গতকাল বিকেলে 'আইডিয়া লস প্রজেক্ট' থেকে পণ্য কিনতে আসা শহরের খড়কি এলাকায় নিম্নআয়ের ইলিয়াস হোসেন ও গোলাম মোস্তফা বলেন, 'বাজারে জিনিসপত্রের দাম অনেক বেশি। এখানে অনেক কম দামে কিনতে পারছি। পুরো রমজান এই দামে জিনিস কিনে শান্তিতে থাকতে পারব।'
সন্দীপণ স্কুল এলাকার বাসিন্দা শাহনাজ খাতুন বলেন, 'টানাটানির সংসারে রমজান কীভাবে পার করব ভেবে পাচ্ছিলাম না। সেই সময় এই সংস্থা কম দামে জিনিস কেনার সুযোগ দিল।'
সূত্র : সমকাল
মন্তব্য করুন