সোমবার, ২০২৫ এপ্রিল ২৮, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২
#
জেলা-উপজেলা জেলা-উপজেলা

হাসপাতালে সার্জারি করেন রাঁধুনি-মালি-পরিচ্ছন্নতাকর্মী!

নিজস্ব প্রতিবেদক | টুয়েন্টিফোর টিভি
প্রকাশিত : রবিবার, ২০২৩ মে ০৭, ০৮:০৭ অপরাহ্ন
#

 

কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দীর্ঘদিন ধরে সার্জারির কাজ চলছে রাঁধুনি, পরিচ্ছন্নতাকর্মী আর মালিকে দিয়ে। এতে করে মানসম্মত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশপাশি নানা বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন সেবাপ্রার্থীরা। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জনবল সংকটকে দায়ি করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। 

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অপারেশন থিয়েটারে চিকিৎসকের সাথে সার্জারিতে অংশ নিয়েছেন অবসর নেয়া পরিচ্ছন্নতাকর্মী রবি দাস। শুধু অপারেশন থিয়েটার নয় হাসপাতালের জরুরি বিভাগেও তিনি সার্জারির কাজ করে আসছেন নিয়মিতভাবে। জরুরি বিভাগসহ অপারেশন থিয়েটারে একইভাবে সার্জারির কাজ করেন রাঁধুনি, মালি এবং পরিচ্ছন্নকর্মীও। রোগীদের কাছ থেকে নগদ অর্থ হাতিয়ে নেয়ারও অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। 

সাবেক পরিচ্ছন্নতাকর্মী রবি দাস বলেন, আমি গত ১ ডিসেম্বরে ঝাড়ুদারের কাজ থেকে অবসর নিয়েছি। আমি ওটি এবং জরুরি বিভাগে নিয়মিত কাজ করে আসছি। ডেসিং এবং সেলাইয়ের কাজ করতে পারি। সাবেক অনেক চিকিৎসকের সাথেও আমি কাজ করেছি। 

রাঁধুনি পদের বাচ্চু মিয় বলেন, আমার পদ রাঁধুনি হলেও আমি জরুরি বিভাগের সব কাজই পারি। এর আগেও আমি কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী, ফুলবাড়িসহ অন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ওয়ার্ডবয় হিসেবে কাজ করেছি। এই হাসপাতালে ওয়ার্ডবয় না থাকায় জরুরি বিভাগে দায়িত্ব পালন করছি। আমার মতো হাসপাতালে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে মালি পদের দেলোয়ার হোসেন, মিজানুরও কাজ করে থাকেন।

এ বিষয়ে স্বেচ্ছাসেবক মালি পদের দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমি ফুলের বাগান দেখভালের জন্য স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছি। জরুরি বিভাগেও পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ করি। পাশাপাশি সেলাই ও ডেসিংয়ের কাজও করতে পারেন বলে জানান তিনি। 

উপজেলার বৈদ্যেরবাজারের বাসিন্দা শ্রীবাবলু চন্দ্র রায় বলেন, আমার মায়ের বয়স প্রায় ৭৫ বছর হয়েছে। তার বাম পা একটু কেটে গিয়ে ইনফেকশন হয়ে পচন ধরেছে। দু’সপ্তাহের বেশি সময় ধরে মাকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা নেয়া হচ্ছে। রবিভাই,দেলোয়ারভাই আমার মায়ের পা ডেসিং করেন ননিয়মিত। এজন্য আমি খুশি হয়ে তাদেরকে ডেসিং করার সময় কিছু বকশিস দেই যেন তারা ভালো করে কাজ করেন। 

আরেক ভুক্তভোগী রোগী দেবিচরণ গ্রামের বাসিন্দা সুনিল চন্দ্র রায় বর্মন বলেন, পারিবারিক কোন্দলের জেরে আমার ওপর হামলা হয়। এতে করে আমার ডান হাতের আঙ্গুল ও বাম হাতের একটি আঙ্গুলে কোপ লেগে কেটে যায়। পরে আমি হাসপাতাল গিয়ে দেখি দেলোয়ার ভাই অন্য রোগীদের ডেসিং করছেন। আমার ভাঙা হাতে প্লাষ্টার করেন ডা: বাপ্পি এবং দেলোয়ার ভাই কাটা আঙ্গুলে সেলাই করেন। সেলাই করতে গিয়ে সুঁচের গুঁতো লাগে আঙ্গুলের হাড়ে এতে করে আমি কিছুটা ব্যথা অনুভব করি। কিছুদিন চিকিৎসা নেবার পর এখন আমি বাড়িতে চলে আসছি।

এই হাসপাতালে ঝাড়ুদার সেলাই করে, আবার সেই ঝাড়ুদার ওষুধও দেয় উল্লেখ করে মেকুরটারি গ্রামের বাসিন্দা লাল মিয়া বলেন, ভর্তি রোগীদের দেখতে নিয়মিত ডাক্তাররা রাউন্ড দেয় না। একবার দেখলে পরের দিন আবার আসেন ডাক্তার। মানুষ সঠিকভাবে চিকিৎসা ও ওষুধ পায় না।

রাজারহাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মিজানুর রহমান এসব অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, জনবল সংকটের কারণে রাঁধুনি, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, মালি এবং স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে চলছে জরুরি বিভাগ ও অপারেশন থিয়েটারে।

তিনি আরও বলেন, হাসপাতালে তিন জন ওয়ার্ড বয়ের বিপরীতে আছেন এক জন। তিনিও বর্তমানে উমর মজিদ ইউনিয়ন সাব সেন্টারে কর্মরত।

রাজারহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালে হাসপাতালটি ২৫ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। জনবল রয়েছে মেডিকেল অফিসার পদে আটজন, নার্সিং সুপারভাইজার একজন, সিনিয়র নার্স ২৬ জন, মিডওয়াইফ ছয়জন, ল্যাব টেকনিশিয়ান দুজন, প্রধান সহকারী একজন, অফিস সহায়ক তিনজন, ফার্মাসিস্ট দুজন, পরিসংখ্যানে একজন, স্বাস্থ্য পরিদর্শক দুজন, অ্যাম্বুলেন্স চালক একজন, মালি একজন, মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে পাঁচজন, পরিচ্ছন্নতাকর্মী তিনজন।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

আরও খবর

Video