শুক্রবার, ২০২৪ সেপ্টেম্বর ২০, ৫ আশ্বিন ১৪৩১
#
বাঁশখালী বাঁশখালী

প্রাচীনতম নিদর্শন বাঁশখালীর বখশী হামিদ জামে মসজিদ

নিজস্ব প্রতিবেদক,বাঁশখালী,চট্টগ্রাম
প্রকাশিত : মঙ্গলবার, ২০২৪ মে ২১, ০৬:৪৯ অপরাহ্ন
#

২১ মে ( মঙ্গলবার) প্রায় ৪৫৫ বছরের প্রাচীনতম নিদর্শনচট্টগ্রামের বাঁশখালীর ঐতিহ্যবাহী বখশী হামিদ জামে মসজিদ।

মুসলিম সভ্যতার প্রাচীনতম নিদর্শন বখশী হামিদ মসজিদটি চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার ৪ নং বাহারচড়া ইউনিয়নের ইলশা গ্রামের দীঘির পাড়ে অবস্থিত। চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে কয়েকশ’ বছর ধরে প্রাচীনতম এই মসজিদটি অনন্য জ্যোতি ছড়াচ্ছে। মসজিদে স্থাপিত নাম ফলকে আরবিতে লেখা রয়েছে "বানাল মাসজিদুল মোকারেম ফি আহমিদ মূলক, ইসনাদুল মিলাত ওয়াদ্দিন সুলতানুল মুয়াজ্জাম সুলাইমান (কররানি) সালামাল্লাহু আনিল ওয়াফাত ওয়াল বলিয়্যাতি মুরখাত তিসযু রমজান, খামছুন ও সাবয়িনা ওয়া তিসআতু মিআতু হিজরি আলাইহিস সালাম।

যার বাংলায় অর্থ দাড়ায়-এই মসজিদ নির্মাণ হয়েছে সেই বাদশাহর যুগে যাকে উপাধি দেয়া হয়েছে দ্বীন এবং মিল্লাতের সুলতানুল মুয়াজ্জম তথা মহান সম্রাট হিসেবে, আর তিনি হলেন সুলাইমান কররানি (আল্লাহ তাকে বিপদাপদ থেকে মুক্ত রাখুন), তারিখ ৯৭৫ হিজরি সালের ৯ রমজান, এবং ১৫৬৮ সালের ৯ মার্চ।

গত ১০ অক্টোবর ২০২০ সালে ওই মসজিদের খতিব মাওলানা আবদুল মজিদ প্রাচীন আরবি লেখা শিলালিপিতে লেখা আরবির বাংলায় অনুবাদ করে নতুন শিলালিপি স্থাপন করেন। ওই শিলালিপির বক্তব্য মতে, এটি সুলাইমান কররানি কর্তৃক প্রতিষ্ঠা করার কথা বলা হলেও প্রাচীনকাল থেকে লোকমুখে বখশী হামিদের নির্মিত মসজিদ বলে এই মসজিদটি পরিচিত।

আর বখশী হামিদের পুরো নাম হলো মুহাম্মদ আবদুল হামিদ, বখশী তার উপাধি। বখশী শব্দটি ফার্সি। এর অর্থ কালেক্টর বা করগ্রহীতা। স্থানীয়  প্রবীণ মুরব্বিদের মতে , তারা বংশপরম্পরায় জেনে আসছেন তৎকালীন সময়ে বখশী হামিদ এই অঞ্চলের কালেক্টর ছিলেন। তারা বলেন, তৎকালীন সময়ে এলাকায় তেমন জনবসতি ছিল না। ইউসুফ ও কুতুব নামে গৌড়ের দুইজন আমির শাহ্ আবদুল করিম নামক জনৈক সুফীর সাথে উপযুক্ত বাসস্থানের সন্ধানে বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে বাঁশখালীতে অবতরণ করে বাঁশখালীর বাহারছড়া ইউনিয়নের ইলশার দরগাহ বাড়ির স্থানে পৌঁছলে শাহ্ আবদুল করিম তার ছড়ি পুঁতে রেখে সেখানে বসবাসের ইচ্ছা ব্যক্ত করেন এবং বসবাস শুরু করেন। আর আবদুল হামিদ বখশী  উক্ত শাহ্ শাহর বংশধর বলে সেই প্রাচীনকাল থেকে স্থানীয়দের মাঝে প্রচলিত রয়েছে। ওই সময়ে সবাই তাকে সুলতান বলে ডাকতেন।

তিনি এ মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ নেন এবং পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করে গেছেন। মুঘল স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত এ মসজিদটি তিন গম্বুজবিশিষ্ট। মাঝেরটি অপেক্ষাকৃত বড় এবং ছোট গম্বুজ দুটি ধনুকের মতো করে ছাদের সাথে যুক্ত। প্রাচীন এই মসজিদটি নির্মিত হয়েছে ইট, পাথর ও সুড়কি ব্যবহার করে। মসজিদটির নির্মাণ শৈলীর সাথে ঢাকার শায়েস্তা খান মসজিদ এবং নারায়ণগঞ্জের বিবি মরিয়ম মসজিদের মিল রয়েছে বলে বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে। মসজিদের পূর্ব পার্শ্বে একটি সু-বিশাল (দীঘি) পুকুর রয়েছে। মুসল্লীরা অযু করতে ওই দীঘির পানি ব্যবহার করে থাকেন। এই সুবিশাল (দীঘি) পুকুরে মাছ চাষ করা হয়। মসজিদটির সাথে লাগানো পশ্চিমে রয়েছে কবরস্থান। পূর্ব-উত্তরে গড়ে উঠেছে মাদ্রাসা ও এতিমখানাসহ ইসলামী কমপ্লেক্স।

এ কমপ্লেক্সের নাম রাখা হয় দারুল কুরআন মুহাম্মদিয়া শাহ আব্দুল হামিদ মাদ্রাসা ও এতিমখানা। প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজ আদায় করতে অনেক দূর-দূরান্ত থেকে হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা এই মসজিদে সমবেত হয়। বর্তমানে মসজিদ ও এতিমখানাসহ ইসলামী কমপ্লেক্স পরিচালনা করেন মাওলানা মুহাম্মদ মুজিবুর রহমান (মু.জি.)।

গত ২০২১ সালের ১০ অক্টোবর প্রাচীনতম বখশী হামিদ মসজিদটি সস্ত্রীক পরিদর্শন করে গেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত জ্যাঁ মেরিন সুহ। ওই সময় তাঁর সাথে ছিলেন ফ্রান্সের দ্যা ক্রাইসিস অ্যান্ড সাপোর্ট সেন্টারের পরিচালক এরিক সেভালিয়াস। পরিদর্শনে এসে ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত জ্যাঁ মেরিন সুহ মাদ্রাসা ও মসজিদটির বর্তমান পরিচালক মাওলানা মুজিবুর রহমান এর সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও পরিদর্শন শেষে তিনি বলেছিলেন, ঐতিহাসিক বখশি হামিদ জামে মসজিদটি দেখে সত্যিই তিনি মুগ্ধ। এই মসজিদটি একটি প্রাচীনতম নিদর্শন বলে অবহিত করে গেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত জ্যাঁ মেরিন সুহ।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

আরও খবর

Video