চট্টগ্রামের বাঁশখালীর বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী উপকূল পশ্চিম শেখেরখীল জলকদর খালের বেড়িবাঁধটি প্রায় দেড়যুগ যাবত অরক্ষিত থাকার ফলে শেখেরখীল খালের ফাঁড়িরমূখ এলাকাটি যে কোনো মুহুর্তেই বিলিন হওয়ার ঝুঁকিতে দুশ্চিন্তায় অন্তত ১০ সহস্রাধিক পরিবার।
১৮ মে ( শনিবার) সকালে সরেজমিনে পরিদর্শনে উপজেলার শেখেরখীল ইউপির ৭ নং ওয়ার্ডস্থ ব্রীজ থেকে ফাঁড়ির মূখ হয়ে সরকার বাজারে থেকে মইজ্জারছড়ী টেক সুইচ গেইটের উত্তরে সাবেক চেয়ারম্যান আমিন চৌধুরীর ঘাটা এলাকা পর্যন্ত জলকদর খালের অন্তত ৪ কি. মি. বেড়িবাঁধের বেহাল পরিস্থিতি দেখা গেছে। বর্ষার মৌসুম শুরু হলে যে কোন মুহূর্তেই নদী গর্ভে বিলীন হতে পারে ওই এলাকায় বসবাসরত কয়েক সহস্রাধিক পরিবারের বসতঘর। এতে দুশ্চিন্তায় রয়েছে পুরো এলাকার মানুষ।
জানা যায়, বিগত কয়েক বছর যাবত বর্ষার মৌসুমে পুরো এলাকা জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ায় অনেক বসতঘর, ক্ষেতখোলা, মৎস্য প্রজেক্টসহ পুরো এলাকা প্লাবিত হয়ে লাখ লাখ টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হওয়াতে নিঃস্ব হয়ে গেছে অনেক পরিবার।
৭ নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য মোঃ শাকের উল্লাহ বলেন, শেখেরখীলের ব্রীজের উত্তর দিক থেকে সরকার বাজার এলাকায় অন্তত ২০ টির বেশি বরফ কল রয়েছে। ২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের অন্তত ১০ হাজারের বেশি পরিবারের বসতঘর রয়েছে এই এলাকায়। এছাড়াও বাঁশখালী, আনোয়ারা, চকরিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া থেকে বঙ্গোপসাগরে মৎস্য আহরণ করতে যাওয়া অধিকাংশ ফিশিং বোট শেখেরখীলের ফাঁড়িরমূখ এলাকার বরফ কল থেকে বরফ সংগ্রহ ও তেলের দোকান জালানি তেল সংগ্রহ করে থাকে। অন্তত দুই সহস্রাধিক দোকানপার্টও রয়েছে।
দীর্ঘ ১৩-১৪ বছর যাবত বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী এই এলাকার জলকদর খালের প্রায় ৪ কি.মি বাঁধ অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে। চলমান উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি এই বেড়িবাঁধে। যার ফলে প্রতিবছর বর্ষার মৌসুমে জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকে পুরো এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়ে। এতে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হলেও দেখার কেউ নেই।
২ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. শামসুল আলম বলেন, গত বছর বর্ষাকালে জোয়ারের লবণাক্ত পানি লোকালয়ে ঢুকে অনেক বসতঘর ধ্বংস হয়ে গেছে, ক্ষেতখোলা, কৃষিজমি, মৎস্য প্রজেক্টে জোয়ারের পানি প্লাবিত হয়ে লাখ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ওয়াফদা অফিসের লোকজন এসে এলাকাটি অনেক বার পরিদর্শন করে গেছে। তারা অনেক বার আশ্বাস দিলেও অদ্যবধি পর্যন্ত বাঁধটি সংস্কারের কোন উদ্যোগ আমরা দেখিনাই।
বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল শুক্কুর সওদাগর বলেন, ফাঁড়িরমূখ এলাকায় প্রায় ২ সহস্রাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও অন্তত ২০ টির অধিক বরফ কল রয়েছে। কিন্তু বেড়িবাঁধটির প্রায় অংশ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে পড়াতে চরম ঝুঁকিতে রয়েছে ব্যবসায়িরা।
ইউপি চেয়ারম্যান মওলানা মোর্শেদুল ইসলাম ফারুকী বলেন, শেখেরখীলের বেড়িবাঁধের অন্তত ৪ কি. মি. অরক্ষিত থাকার কারণে বর্ষার মৌসুম শুরু হলে বাঁধ উপড়ে জোয়ারের পানি ঢুকে প্রতিবছরই পুরো এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়ে।
এছাড়াও আমাবস্যা -পূর্ণিমা আসলেই এই এলাকার মানুষকে নির্ঘুমে রাত পোহাতে হয়। গত বছর বর্ষাকালে সমুদ্রের জোয়ারের লবণাক্ত পানি লোকালয় ঢুকে পড়ায় এলাকার মানুষ আর্থিক ভাবে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। লবণাক্ত পানি ঢুকে পড়াতে কৃষি পরিবার গুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
গতবছর ওয়াফদা ইঞ্জিনিয়ার এলাকাটি পরিদর্শন করে যাওয়ার পর অদ্যবদি পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ নেই।
বিশেষ করে বঙ্গোপসাগরে মৎস্য আহরণ করতে যাওয়া বেশির ভাগ ফিশিং বোট এই এলাকার বরফ ফ্যাক্টরি থেকে বরফ সংগ্রহ করে থাকে এবং এখান থেকেই ট্রাকে ট্রাকে ইলিশসহ বিভিন্ন জাতের সামুদ্রিক মাছ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সাপ্লাই করা হয়। শেখেরখীল ফাঁড়িরমুখ থেকে সরকার বাজার হয়ে মইজ্জারছড়ীর উত্তরাংশ পর্যন্ত বেড়িবাঁধটির প্রায় অংশ জোয়ারের স্রোতে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে, এতে প্রতিনিয়তই জোয়ারের পানি বাঁধ উপড়ে লোকালয়ে ঢুকে পড়ে।
গতবছর কর্মসূচির কাজ থেকে প্রায় ২ লক্ষাধিক টাকার মাটি ভরাট করেছিলাম, কিন্তু জোয়ারের স্রোতে আবারও সব বিলীন হয়ে গেছে। গত বছর ওয়াপদা থেকে একটি বরাদ্দ দিয়েছিল, ওই বরাদ্দ থেকে মাটি ভরাট করার জন্যে গাছের কিছু খুঁটি স্থাপন করেছিল, মাটি ভরাট করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি।
নাপোড়া-শেখেরখীল উচ্চ বিদ্যালয়, শেখেরখীল দারুসসালাম সিনিয়র মাদ্রাসাসহ স্কুল, মাদ্রাসায় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও এই বাঁধ দিয়ে যাতায়াত করে থাকে। স্থায়ী ও টেকসইযুক্ত বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা না হলে পুরো এলাকা সমুদ্রের আগ্রাসনে তলিয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে বলেও জানান চেয়ারম্যান মোর্শেদ।
এসময় তিনি আরও বলেন, এরই মধ্যে ইউএনও মহোদয়ের কাছে নতুন ভাবে আবারও আবেদনসহ ফাইপত্র জমা দিয়েছি, মাসিক সমন্বয় সভায় বিষয়টি আবারও উপস্থাপন করা হবে। স্থায়ী ও টেকসইযুক্ত বেড়িবাঁধ নির্মাণের দ্রুত পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান স্থানীয়রা।
মন্তব্য করুন