শুক্রবার, ২০২৪ সেপ্টেম্বর ২০, ৫ আশ্বিন ১৪৩১
#
পটিয়া পটিয়া

চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলায় বোরো ধান ও শস্যক্ষেতে বিভিন্ন ধরনের পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। পোকার আক্রমণ ঠেকাতে বিভিন্ন কীটনাশক ব্যবহার করেও কোনো সুফল না পেয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। এ বিষয়ে কৃষি বিভাগ থেকে সঠিক পরামর্শ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ তাদের।

পটিয়ায় বোরো ধান ও শস্যক্ষেতে পোকার আক্রমনে বিপাকে কৃষকরা

পটিয়া প্রতিনিধি
প্রকাশিত : রবিবার, ২০২৪ মার্চ ১০, ০৪:৪২ অপরাহ্ন
#

চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলায় বোরো ধান ও শস্যক্ষেতে বিভিন্ন ধরনের পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। পোকার আক্রমণ ঠেকাতে বিভিন্ন কীটনাশক ব্যবহার করেও কোনো সুফল না পেয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। এ বিষয়ে কৃষি বিভাগ থেকে সঠিক পরামর্শ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ তাদের।

 গতকাল রবিবার সকালে পটিয়া উপজেলার বড়লিয়া ইউনিয়নের ৭,৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন বিলে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, ধানের ক্ষেতে ছড়ি থেকে সবেমাত্র শীষ বের হতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে ধানের ওই শীষে সাদা লম্বা লেদা পোকা লেগেছে। পোকা ধানের শীষগুলো ছিদ্র করে ফেলছে। ফলে ওই ছড়িতে ধান না হয়ে শুকিয়ে সাদা (চিটা) হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন কীটনাশক ব্যবহার করেও পোকার আক্রমণ থেকে ধান রক্ষা করতে পারছেন তারা।

 এতে প্রতি বিঘা জমিতে অন্তত পাঁচ থেকে ছয় মণ করে ধান কম পাওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। একই অবস্থা দেখা গিয়েছে মরিচ, আলু ও বেগুন ক্ষেতেও।

 বড়লিয়া ইউনিয়নের কৃষক মাকসুদুল আলম চৌধুরী বলেন, বোরো রোপণের পর ২০ থেকে ২৫ দিন পর্যন্ত কোনো পোকা আক্রমণ দেখা যায়নি। হঠাৎ করে ক্ষেতে ব্যাপকভাবে পোকার আক্রমণ শুরু হয়েছে। বিভিন্ন কীটনাশক ব্যবহার করেছি। এরপরও পোকার আক্রমণ থামছে না। এ দুরবস্থায় কোনো কৃষি অফিসের সহযোগিতা পাচ্ছি না।

 দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারীকে একাধিকবার জানানো হলেও তিনি কোনধরনের সহযোগীতা করছেন না।

একই এলাকার কৃষক আবু সিদ্দিক জানান, ধানগাছ প্রথমে হলুদ ও পরে শুকিয়ে বাদামি রং ধারণ করছে। কীটনাশক ছিটিয়েও কোনো ফল পাওয়া যাচ্ছে না। ফসলের মাঠজুড়ে এখন শুধু পোকা আর পোকা।

কৃষক ইয়াছিন জানালেন, ধানের শীষ আসতে না আসতে এমনভাবে পোকার আক্রমণ করছে, রাতারাতি সব ধানের শীষ খেয়ে ফেলছে। আর সেই সাথে পচানি রোগ লেগেই আছে। আমার প্রায় তিন বিঘা জমিতে পোকা আক্রমণ করেছে।

কীটনাশক স্প্রে করেও এই পোকা দমন করা যাচ্ছে না। এ যাবত চারবার কীটনাশক স্প্রে করেছি। প্রতিবার স্প্রে করতে বিঘা প্রতি প্রায় সাত-আটশ টাকা করে খরচ হচ্ছে। তারপরও কোনো কাজ হচ্ছে না।

কৃষক মাহবুবুল আলম বলেন, মরার উপর খাড়ার ঘা, এক দিকে পোকা, অন্যদিকে গোড়া পচানী, আমরা কৃষকরা যাব কোন দিকে। সপ্তাহে দুইবার করে স্প্রে করেও কোন লাভ হয় না। তিনি অভিযোগ করেন, সরকারি একজন কৃষি কর্মকর্তা আসেন কিন্তু উনার পছন্দের দুয়েকজন বাদে কোন ব্যবস্থা নিতে দেখছি না। বড়লিয়া ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের দক্ষিন বিলের কৃষক এখলাসুর রহমান বলেন-বাবা, আমি তিন একর জমিতে মরিচ, আলু ও বেগুন লাগিয়েছি, কিন্তু যে হারে পোকার আক্রমণে বিভিন্ন রোগ ধরছে তাতে মনে হয় না- আমরা ফসল ঘরে তুলতে পারবো। আর কৃষি অফিসারে সাথে যোগাযোগ করছেন কি না জানতে

চাইলে তিনি বলেন, তারাতো বলেন- কীটনাশক স্প্রে করেন, ঠিক হয়ে যাবে।

জমিতে পোকার আক্রমণের কথা জানিয়ে তারা বলেন, সুদে ঋণ নিয়ে এবার বোরো ধান চাষ করেছেন অনেকে। কিন্তু ধান বের হতে না হতেই পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। এই পোকা ধান গাছের পাতা খেয়ে বিবর্ণ করে ফেলছে। আবার ধানের গাছের মাঝ খানে কেটে দিচ্ছে।

পটিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে পটিয়া উপজেলায় ৬ হাজার ৩৮৮ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল।

পটিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কল্পনা রহমান বলেন, পটিয়া উপজেলার বিভিন্ন বোরো ক্ষেতে পোকার আক্রমণ করলেও উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাবৃন্দ মাঠ পরিদর্শন ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন। সম্প্রতি সময়ে ধানের ক্ষেতের পাতা মোড়ানো পোকার আক্রমণ, ধানের গোড়া পচন রোগ দেখা দিয়েছে, এগুলো ধানের ছত্রাকজনিত রোগ। কৃষকরা ধান ক্ষেতে কীটনাশকের সঠিক ব্যবহার করলে পোকার আক্রমণ কমে যাবে।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

আরও খবর

Video